বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস | বাংলা নববর্ষ - বাংলা
নববর্ষ পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির জন্য এক সুতায় বাধা । এজন্য পহেলা বৈশাখকে বাঙালি
জাতির প্রাণের উৎসব বলা হয় । এ জাতির মধ্যে সব ধর্মের, সব শ্রেণীর মানুষের প্রাণের
উচ্ছ্বাস বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করেই প্রস্ফুটিত হচ্ছে বা হয়ে থাকে । একারণেই বাঙালির
সার্বজনীন ও সবথেকে বড় উৎসব হচ্ছে বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ ।
আজকের ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে “বাংলা নববর্ষ উদযাপনের
ইতিহাস | বাংলা নববর্ষ” বিষয় নিয়ে আলোচনা করব । আশা করি আজকের ব্লগ পোস্টটি আপনাদের
অনেক ভালো লাগবে ।
আরও পড়ুনঃ কক্সবাজার জেলা পরিচিত | কক্সবাজার জেলা বিস্তারিত তথ্য
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি ২০২৩ | New President of Bangladesh 2023
বাংলা সনের উৎপত্তি
বাংলা সনের প্রবর্তন করেন মুঘল সম্রাট জালাল উদ্দিন
মোহাম্মদ আকবর । তিনি খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য তার সভার জ্যোতির্বিদ আমির ফতেহ উল্লাহ
সিরাজী এর সহযোগিতায় ১৫৫৮ সালে “তারিখ-এ-ইলাহী” নামে নতুন একটি বছর গণনা পদ্ধতি চালু
করেন । ওই সময়ে প্রচলিত রাজকীয় সন ছিল “হিজরী সন” যা চন্দ্রসন হওয়ায় প্রতিবছর একই
মাসে খাজনা আদায় সম্ভব হতো না ।
বাংলা সন শূন্য থেকে শুরু হয়নি, যে বছরের বাংলা সন
প্রবর্তন করা হয়, সে বছর হিজরী সন ছিল ৯২৩ । সে অনুযায়ী, সম্রাটের নির্দেশে প্রবর্তনের
বছরেই ৯২৩ সালে যাত্রা শুরু হয় বাংলা সনের । এ ব্যাপারে ১০ মার্চ মতান্তরে ১১ মার্চ
১৫৮৪ সম্রাটের নির্দেশনামা জারি হয় । তবে এর কার্যকারিতা দেখানো হয় ১৫৫৬ সাল থেকে
। কারণ ওই সালটি ছিল সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণের বছর ।
মুঘল সম্রাট জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর |
ফসলি সন থেকে বাংলা সন
সম্রাট আকবরের নির্দেশে প্রচলিত হিজরি সনের থেকে সামঞ্জস্য
রেখে আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজী উদ্ভাবন করেন “ফসলি সন” বা “বাংলা সন” । ফসলের মৌসুমের
কথা বিবেচনায় রেখে এ নতুন সনের প্রবর্তন করা হয় “ফসলী সন” । পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন অঞ্চলের নাম অনুযায়ী “ফসলি
সন” প্রবর্তিত রূপ ধারণ করে এবং বাংলাদেশ তা “বাংলা সন” নামে অভিহিত হয় ।
ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ |
১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ
বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে বিশিষ্ট ভাষাবিদ ডঃ মুহাম্মদ
শহীদুল্লাহ এর নেতৃত্বে ১৯৬৩ সালে বাংলা পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি গঠন করা হয় । পরবর্তীতে
এ কমিটি “শহীদুল্লাহ কমিটি” নামে আখ্যায়িত হয় । এ কমিটি ১৪ এপ্রিলকে বাংলা বছরের
প্রথম পহেলা বৈশাখ নির্ধারণের সুপারিশ করে ।
পরবর্তীতে “বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কার কমিটি” নামে আরেকটি
কমিটির সুপারিশের আলোকে বাংলা একাডেমিতে ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ (বাংলা 28 ভাদ্র ১৪০১)
অনুষ্ঠিত সভায় ১৪ এপ্রিলকে পহেলা বৈশাখ হিসাবে ধার্য করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।
এরপর ১৩ আগস্ট ১৯৯৫ (২৯ শ্রাবণ ১৪০২) এ দু’সভার মাধ্যমে
গঠিত টাস্কফোর্স ১ বৈশাখ ১৪০২ থেকে অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল ১৯৯৫ থেকে এটি কার্যকর এ সিদ্ধান্ত
নেয় । এভাবেই ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখরুপে (বাংলা শুভ নববর্ষ) প্রতি বছর পালন করা হয়
।
মঙ্গল শোভাযাত্রা |
ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান
সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই রাজধানী ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানটের
সঙ্গীতাঅনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলা নববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা । বৈশাখী আয়োজনে
রাজধানী তথা দেশের সবথেকে বড় আসর এটি । ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশিত সংগীতের মধ্য
দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় বাংলা নতুন বছরকে ।
স্থানটি বটমুল নামে পরিচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে যে গাছের
ছায়ায় মঞ্চ তৈরি হয় সেটি একটি অশ্বত্থ গাছ । ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর
নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানটের এ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের
সূচনা হয় ।
পহেলা বৈশাখ ও হালখাতা
বাংলা নতুন বছরের শুরুতে পুরনো হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে
ব্যবসায়ীদের নতুন খাতা খোলার এক আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ “হালখাতা” । এ উপলক্ষে সাধারনত
নিয়মিত ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানানো, মিষ্টি দ্বারা আপ্যায়ন এবং পুরনো বকেয়া পরিশোধ
করে নতুন করে খাতায় নাম লেখানো হয় ।
বৈসাবি উৎসব
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী প্রতিবছর বাংলা চৈত্র মাসের ৩০ ও
৩১ তারিখ এবং বৈশাখের ১ তারিখ নববর্ষ পালন করে । বাংলা বছরের শেষ দুই দিন ও নতুন বছরের
প্রথম দিন এদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সমূহ সাংগ্রাই, বিজু, বৈসুখ, বিষু, বিহু, সাংগ্রাং,
ফাগুয়া প্রভৃতি নামে এ উৎসব পালন করলেও সমতলে এটি “বৈসাবি” নামে পরিচিত ।
ত্রিপুরাদের “বৈসুখ”, মারমাদের “সাংগ্রাই”, ও চাকমাদের
“বিজু” --- এ তিন উৎসবের নামের আধ্যক্ষর নিয়ে “বৈসাবি” নামের উৎপত্তি । ১৯৮৫ সাল থেকে
সম্মিলিত উদ্যোগে বৈসাবি উৎসব পালিত হয়ে আসছে ।
বৈসাবি উৎসব |
মঙ্গল শোভাযাত্রা
বাংলাদেশের জনগণের লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক মঙ্গল শোভাযাত্রা
। দেশের লোকজ সংস্কৃতির উপস্থাপনের মাধ্যমে সব শ্রেণীর মানুষকে একত্র করার লক্ষ্যে
১৯৮৫ সালে যশোরের “চারুপীঠ” নামের একটি সংগঠন প্রথমবারের মতো বর্ষবরণ করতে আনন্দ শোভাযাত্রা
আয়োজন করে ।
যশোরের সে শোভাযাত্রার পর ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় প্রথম আনন্দ শোভাযাত্রার । ১৯৯৫ সালের পর থেকে
এ আনন্দ শোভাযাত্রাই “মঙ্গল শোভাযাত্রা” নামে পরিচিতি লাভ করে । শিল্পী ইমদাদ হোসেন
“মঙ্গল শোভাযাত্রা”র নামকরণ করেন ।
৩০ নভেম্বর ২০১৬ জাতিসংঘ এর শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (UNESCO) এর নির্বন্তুক বা অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায় বাংলা নববর্ষ বরণের বর্ণিল উৎসব “মঙ্গল শোভাযাত্রা” ।
এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।