লালসালু
- সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ | বুক রিভিউ - লালসালু উপন্যাসটি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এর
প্রথম উপন্যাস । সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত লেখক । লালসালু ১৯৪৮
সালে রচিত এবং প্রকাশিতও হয় ১৯৪৮ সালে । লালসালু উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের
ক্লাসিকাল সৃষ্টিকর্ম হিসেবে বিবেচিত হয় ।
লালসালু
১৯৪০ কিংবা ১৯৫০ দশকের বাংলাদেশের গ্রামসমাজ এর পটভূমি নিয়ে লেখা হয়েছে ।
গ্রামসমাজ এর পটভূমি নিয়ে লেখা হলেও এই উপন্যাসে রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া । এই
উপন্যাসটি উর্দু, ফরাসি, ইংরেজি, জার্মান ও চেক ভাষায় অনুদিত হয়েছে ।
আরও পড়ুনঃ চিলেকোঠার সেপাই - আখতারুজ্জামান ইলিয়াস | বুক রিভিউ
আরও পড়ুনঃ হাঙর নদী গ্রেনেড – সেলিনা হোসেন | বুক রিভিউ
লালসালু
বন্ধুরা, আজকের ব্লগ পোস্টে যে বইটির রিভিউ করবো সেই বইটির নাম “লালসালু” । এই উপন্যাসের লেখক বাংলাদেশের বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ । এই উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশীত হয় ১৯৪৮ সালে । তাহলে চলুন বন্ধুরা লালসালু - সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক ।
লালসালু উপন্যাসের মূলভাব
প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক সৈয়দ অলিউল্লাহ এর প্রথম উপন্যাস “লালসালু” । এটি একটি সামাজিক সমস্যামূলক উপন্যাস । উপন্যাসটি লেখক এর সাহসী প্রচেষ্টা সার্থক ফসল । ঢাকা ও কলকাতা মধ্যবিত্ত নাগরিক জীবন তখন নানা ঘাত-প্রতিঘাতে অস্থির ।
ব্রিটিশ
শাসন বিরোধী আন্দোলন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মন্বন্তর, সাম্প্রদায়িক
দাঙ্গা, দেশবিভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা, আবার নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তান গড়ে তোলার
উদ্দীপনা ইত্যাদি নানারকম সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আবর্তে মধ্যবিত্তের জীবন তখন
বিচিত্রমুখী জটিলতায় বিপর্যস্ত ও উজ্জীবিত ।
নবীন
লেখক সৈয়দ অলিউল্লাহ এ চেনা জগতকে বাদ দিয়ে তার প্রথম উপন্যাসের জন্য গ্রামীণ
পটভূমির সমাজ পরিবেশকে বেছে নিলেন । উপন্যাসের বিষয় সামাজিক রীতি-নীতি ও প্রচলিত
ধারণা বিশ্বাস ।
চরিত্রসমূহ
একদিকে কুসঙস্কারাচ্ছন্ন ধর্মভীরু, শোষিত, দরিদ্র গ্রামবাসী, অন্যদিকে শঠ,
প্রতারক, ধর্মব্যবসায়ী এবং শোষক ভূস্বামী ।
গ্রামবাসীর
সরলতা ও ধর্ম বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভন্ড ধর্ম ব্যবসায়ী মজিদ প্রতারণার জাল
বিস্তার এর মাধ্যমে কিভাবে নিজের শাসন ও শোষণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তারই বিবরণে
সম্মৃদ্ধ এই উপন্যাস ।
উপন্যাসের
কাহিনীটি ছোট, সাধারন ও সামান্য । কিন্তু এর গ্রন্থনা ও বিন্যাস অত্যন্ত মজবুত ।
উপন্যাসটি শিল্পীত সামাজিক দলিল হিসেবে বাংলা সাহিত্যের একটি অবিস্মরণীয় সংযোজন ।
লালসালু উপন্যাস pdf
বন্ধুরা,
আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা লালসালু উপন্যাস pdf খোঁজ করে থাকেন । আপনাদের সুবিধার্তে
এখানে লালসালু উপন্যাস এর pdf ফাইলটি দেওয়া হলো । এখান থেকে লালসালু উপন্যাসটি
ডাউনলোড করে নিতে পারবেন ।
লালসালু - সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ |
লালসালু লেখক পরিচিতি
নামঃ
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ।
জন্মঃ
১৫ আগস্ট ১৯২২, ষোলশহর চট্টগ্রাম (আদি নিবাস নোয়াখালী) ।
মৃত্যুঃ
১০ অক্টোবর ১৯৭১, প্যারিস, ফ্রান্স ।
উপন্যাসঃ
লালসালু (১৯৪৮), চাঁদের অমাবস্যা (১৯৬৪), কাঁদো নদী কাঁদো (১৯৬৮) ।
ছোটগল্পঃ
নয়নচারা (১৯৪৬), দুই তীর ও অন্যান্য গল্প (১৯৬৫), গল্প-সমগ্র (১৯৭২) ।
নাটকঃ
সুড়ঙ্গ (১৯৬৪), তরঙ্গভঙ্গ (১৯৬৪), বহিপীর (১৯৬০), উজানে মৃত্যু (১৯৬৬) ।
পুরস্কারঃ
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬১), আদমজী পুরস্কার (১৯৬৫), একুশে পদক (১৯৮৩)
।
লালসালু উপন্যাস সংক্ষেপে
শ্রাবণের
শেষে নিরাক পড়া এক মধ্যাহ্নে মহব্বত নগর গ্রামে মজিদের প্রবেশের নাটকীয় দৃশ্যের
মধ্য দিয়ে উপন্যাসের শুরু । এরপর গ্রামের মাতব্বর খালেক ব্যাপারীর বাড়িতে সে
সমবেত গ্রামের মানুষকে তিরস্কার করছে, “আপনারা জাহেল, বেএলেম, আনপড়হ ।
মুদাসসের
পীরের মাজার আপনারা এমন করে ফেলি রাখিছেন? অলৌকিকতার অবতারণা করে মজিদ জানায় যে,
পীরের স্বপ্নাদেশে মাজার তদারকির জন্য এ গ্রামে তার আগমন । মজিদের তিরস্কার ও
স্বপ্নাদেশের বিবরণ শুনে গ্রামের মানুষ ভয়ে এবং শ্রদ্ধায় বিগলিত হয় গভীর আগ্রহে
তার প্রতিটি হুকুম পালন করে ।
গ্রাম
প্রান্তরের বাঁশঝাড় সংলগ্ন কবরটি দ্রুত পরিচ্ছন্ন করে ঝালরওয়ালা লালসালুতে ঢেকে
দেওয়া হয় । কবরটি অচিরেই মাজারে এবং মজিদের শক্তির উৎস পরিণত হয় ।
মজিদের
স্বাগত সংলাপ থেকে জানা যায়, শস্যহীন নিজ অঞ্চল থেকে ভাগ্যঅন্বেষণে বেরিয়ে পড়া
মজিদ নিজের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে এমন মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে । মাজারের আয়
দিয়ে অল্প দিনের মধ্যে মজিদ ঘরবাড়ি ও জমিজমার মালিক হয়ে যায় এবং তার মনোভূমির
এক অনিবার্য আকাঙ্ক্ষায় বিধবা যুবতী রহিমাকে বিয়ে করে ।
নিঃসন্তান
মজিদের সন্তান-কামনাসূত্রে তার দ্বিতীয় স্ত্রীরূপে আগমন ঘটে জামিলার । প্রতিষ্ঠা
লাভের সাথে সাথে মজিদ ধর্ম-কর্মের পাশাপাশি সমাজেরও কর্তা ব্যক্তি হয়ে ওঠে ।
মজিদ
গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের উপদেশ দেয় এবং গ্রাম্য বিচার-সালিশিতে সেই হয়ে
ওঠে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী প্রধান ব্যক্তি । এক্ষেত্রে মাতব্বর খালেক বেপারীর তার
প্রধান সহায়ক শক্তি । ধীরে ধীরে সে গ্রামবাসীর পারিবারিক জীবনেও প্রভাব বিস্তার
করে ।
তাহেরের
বাপ মায়ের মধ্যকার একান্ত পারিবারিক বিবাদকে কেন্দ্র করে তাহেরের বাপের কর্তৃত্ব
নিয়েও প্রশ্ন তোলে । নিজের মেয়ে গায়ে হাত তোলার অপরাধে মেয়ের কাছে মাফ চাওয়ায়
। অপমান সহ্য করতে না পেরে তাহেরের বাপ শেষ পর্যন্ত নিরুদ্দেশ হয় ।
খালেক
বেপারীর নিঃসন্তান স্ত্রী আমেনা সন্তান কামনায় অধীর হয়ে মজিদের প্রতিদ্বন্দ্বী
আওয়ালপুরের পীরের প্রতি আস্থাশীল হলে মজিদ তাকেও শাস্তি দিতে পিছপা হয় না ।
আমেনার চরিত্রে কলঙ্ক আরোপ করে খালেক বেপারীকে দিয়ে তাকে তালাক দিতে বাধ্য করে
মজিদ ।
গ্রামবাসী
যাতে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে মজিদের মাজারকেন্দ্রিক পশ্চাৎপদ জীবনধারা থেকে সরে
যেতে না পারে, সেজন্য সে শিক্ষিত ও প্রতিবাদী যুবক আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার
স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেয় ।
এভাবে
একের পর এক ঘটনার মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ গ্রাম্য সমাজ ও মানুষের
বাস্তব চিত্র “লালসালু” উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন ।
লালসালু উপন্যাসের প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ
লালসালু উপন্যাসের লেখক কে?
উত্তরঃ
সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ ।
প্রশ্নঃ
লালসালু উপন্যাসের রচনাকাল কোনটি?
উত্তরঃ
১৯৪৮ সাল ।
প্রশ্নঃ
লালসালু উপন্যাসের উপজীব্য বিষয় কি?
উত্তরঃ
ধর্মীয় ভন্ডামির নিখুঁত চিত্র ।
প্রশ্নঃ
“Tree without Roots” কোন গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ?
উত্তরঃ
লালসালু ।
এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।