চিলেকোঠার সেপাই - আখতারুজ্জামান ইলিয়াস | বুক রিভিউ
- চিলেকোঠার সেপাই এর লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক
। বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এর পরেই আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সর্বাধিক প্রশংসিত
বাংলাদেশী লেখক ।
বাস্তবতার নিপুণ চিত্র, ইতিহাস ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা,
গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সূক্ষ্ম কৌতুকবোধ তার রচনাকে এনে দিয়েছে ব্যতিক্রমী ধর্মী পরিচয়
। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে সমাজ বাস্তবতার অনন্য সাধারণ রূপকার বলা হয়ে থাকে । আজকের
বুক রিভিউতে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এর “চিলেকোঠার সেপাই” নিয়ে আলোচনা করবো ।
আরও পড়ুনঃ হাঙর নদী গ্রেনেড – সেলিনা হোসেন | বুক রিভিউ
আরও পড়ুনঃ রাইফেল রোটি আওরাত – আনোয়ার পাশা | বুক রিভিউ
চিলেকোঠার সেপাই
বন্ধুরা, আজকের ব্লগ পোস্টে যে বইটির রিভিউ করবো সেই বইটির নাম “চিলেকোঠার সেপাই” । এই বইয়ের লেখক বাংলাদেশের বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস । এই বইটি প্রথম প্রকাশীত হয় ১৯৮৭ সালে । তাহলে চলুন বন্ধুরা চিলেকোঠার সেপাই - আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক ।
চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু
“চিলেকোঠার সেপাই” ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত একটি মহাকাব্যিক উপন্যাস । তৎকালীন গণ আন্দোলনের সাথে কৃষক, শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের একাত্মতা প্রকাশ পায় এই উপন্যাসটিতে ।
এ উপন্যাসে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন গণ-অভ্যুত্থান চলাকালীন
পূর্ব বাংলার চিত্র । ঔপন্যাসিক ছোট ছোট কাহিনী পর্বের সুন্দর সম্মেলনের মাধ্যমে উপন্যাসটিকে
একটি মহাকাব্যিক রুপ দিয়েছেন ।
শহরের বস্তি থেকে শুরু করে যমুনার দুর্গম চর এলাকা পর্যন্ত
উপন্যাসটির কাহিনী বিস্তৃত হয়েছে । অতি সূক্ষ্ম এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণ শক্তিতে উপন্যাসের
শব্দে শব্দে একটি আলাদা তাৎপর্য সৃষ্টি হয়েছে ।
লেখক এর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন লেখায় এক একটি চরিত্রের
বাস্তবতা, পরাবাস্তবতা, ঘটনার সাথে চরিত্রের বাস্তবতা, কল্পনার মিশ্রণে প্রতিটি পৃষ্ঠায়
পাঠক নতুন দৃষ্টিতে জীবনকে আবিষ্কার করতে সক্ষম হন ।
উপন্যাসের কাহিনীবিন্যাসই পাঠককে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে
যায় । “চিলেকোঠার সেপাই” উপন্যাসটি ১৯৮০ এর দশকের শুরুতে “রোববার” নামের একটি সাপ্তাহিক
পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং ১৯৮৭ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ।
চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাস pdf
বন্ধুরা, আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা চিলেকোঠার সেপাই
উপন্যাস pdf খোঁজ করে থাকেন । আপনাদের সুবিধার্তে এখানে চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাস এর
pdf ফাইলটি দেওয়া হলো । এখান থেকে উপন্যাসটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন ।
চিলেকোঠার সেপাই - আখতারুজ্জামান ইলিয়াস |
চিলেকোঠার সেপাই লেখক পরিচিতি
জন্মঃ ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩, গোটিয়া গ্রাম, গাইবান্ধা
(মাতুলালয়); তার পৈতৃক নিবাস বগুড়া ।
মৃত্যুঃ ৪ জানুয়ারি ১৯৯৭, ঢাকা ।
গল্পগ্রন্থঃ অন্য ঘরে অন্য স্বর (১৯৭৬), খোয়ারি (১৯৮২),
দুধভাতে উৎপাত (১৯৮৫), দোজখের ওম (১৯৮৯), জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল (১৯৯৭) ।
প্রবন্ধগ্রন্থঃ সংস্কৃতির ভাঙা সেতু (১৯৯৮) ।
উপন্যাসঃ চিলেকোঠার সেপাই (১৯৮৭) ও খোয়াব নামা (১৯৯৬)
।
পুরস্কারঃ হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৭), বাংলা
একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), সা’দাত আলী আখন্দ
সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৬), আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৬) এবং একুশে পদক মরণোত্তর (১৯৯৮) ।
চিলেকোঠার সেপাই গ্রন্থ সংক্ষেপ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ১৯৬৯ সালে ব্যাপক
গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়েছিল । সে গণঅভ্যুত্থান সব অর্থেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে
অনন্য ।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের যারা প্রধান শক্তি ছিল, সেই
শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ কিভাবে আন্দোলন-পরবর্তী সময়টিতে প্রতারিত এবং বঞ্চিত হলো, বামপন্থীদের
দোদুল্যমানতা আর ভাঙ্গনের ফলে, জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে যথাযথভাবে ধারণ করতে না
পারার কারণে অজস্র রক্তপাতের পরও রাজনীতির ময়দান থেকে তাদের পশ্চাদপসরণ ঘটলো, আওয়ামী
লীগ প্রধান শক্তি হয়ে উঠলো, উপন্যাসটির উপজীব্য সেই ঐতিহাসিক সময়টুকুই ।
মকবুল হোসেনের ছেলে আবু তালেব এর মিছিলে গিয়ে গুলিতে
মারা যাওয়ার সংবাদ এর মধ্য দিয়ে উপন্যাসের কাহিনী এগিয়ে চলে । ওসমান এ উপন্যাসের
গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান চরিত্র, যে একজন ছোটখাটো সরকারি চাকরিজীবী ।
উপন্যাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হাড্ডি খিজির
। যে ওসমানের বাড়িওয়ালা রহমতউল্লাহর ভাগ্নে আলাউদ্দিন মিয়াঁর গ্যারেজ দেখাশোনা করে
।
এই দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা ও স্তরের চরিত্রই উপন্যাসটিকে
টেনে নিয়ে গেছে ঊনসত্তরের উত্তাল সময়ের ভেতর দিয়ে । আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র
আনোয়ার, যে মূলত একজন বামপন্থী কর্মী ।
ঊনসত্তরের টালমাটাল বিক্ষুব্ধ সময়েই সে ঘটনাক্রমে তার
গ্রামের বাড়িতে যায় এবং প্রত্যক্ষ করে জনৈক গ্রাম্য জোতদার খয়বার গাজী এর শোষণ ও
অত্যাচার এবং সেটিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট তীব্র জনরোষ ।
উপন্যাসের কাহিনীকে পূর্ণতা দিতেই উঠে আসে দরিদ্র যুবক
চেংটু কিংবা করমালী যারা খয়বার গাজীর বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার ধৃষ্টতা দেখায়
।
অন্যদিকে স্বাভাবিক নিয়মেই গতি পায় ওসমানের অবদমিত
কামনা, রেস্তোরাঁর আড্ডায় চায়ের কাপে তুমুল ঝড়, হাড্ডি খিজির ও তার পারিপার্শ্বিক
নিম্নবিত্ত চরিত্রগুলোর চিরাচরিত জীবনযাপন; আর এসব কিছুই ছাপিয়ে উপন্যাসটি হয়ে ওঠে
ঐ কালের এক মহাকাব্যিক আখ্যান ।
উপন্যাসের শেষ পর্যায়ে চিলেকোঠার চার দেওয়াল থেকে
মুক্তির প্রচেষ্টা ওসমানকে উম্মত করে তোলে । পরিচিতরা বদ্ধ পাগল হিসেবে চিহ্নিত করে
তাকে আটকে রাখে । শেষ পর্যন্ত নিহত খিজিরের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সে ঘরে তালা ভেঙে
সবার অগোচরে রাস্তায় বেরিয়ে আসে ।
মূলত, চিলেকোঠার চার দেওয়ালের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে বিচ্ছিন্নতা ও আত্মপ্রেমের বন্ধন থেকেও তার মুক্তি ঘটে । বৃহত্তর গণআন্দোলনের জোয়ারে অবশেষে ওসমান একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে মিশে যেতে সক্ষম হয় ।
চিলেকোঠার সেপাই FAQ
প্রশ্নঃ “চিলেকোঠার সেপাই” উপন্যাসের রচয়িতা কে?
উত্তরঃ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
প্রশ্নঃ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস কোনটি?
উত্তরঃ চিলেকোঠার সেপাই
প্রশ্নঃ আখতারুজ্জামান সেলিম ইলিয়াস এর জন্ম কত সালে ও কোথায়?
উত্তরঃ ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩, গোটিয়া গ্রাম, গাইবান্ধা ।
প্রশ্নঃ চিলেকোঠার সেপাই প্রথম কত সালে প্রকাশিত হয়?
উত্তরঃ চিলেকোঠার সেপাই প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে ।
এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।
আরও পড়ুনঃ আরেক ফাল্গুন – জহির রায়হান | বুক রিভিউ