ফুটবলের রাজা পেলে | পেলের জীবনী - ফুটবল বিশ্বের সবথেকে জনপ্রিয় খেলা । ফুটবল নিয়ে এই যে উম্মাদনা সেটি একদিনে হয়নি । একসময় ফুটবল নিছক একটি খেলাই ছিল । কিন্তু একে অসাধারণ করেছেন পেলে । ব্রাজিলের তিনি “কালো মানিক” হিসেবে খ্যাত । অনেকের চোখেই তিনি সর্বকালের সেরা ফুটবলার ।
পেলে সম্প্রতি ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ মারা যান । এই ধরাতে ৮২ বছর পার করে চলে গেলেন ওপারে । ফুটবলকে কেন্দ্র করে কেবল তিনি নিজেই বিশ্বখ্যাত হননি, করেছেন ব্রাজিলকেও বিশ্বখ্যাত । ব্রাজিলকে দিয়েছেন বিশ্বজোড়া খ্যাতি ।
আরও পড়ুনঃ ম্যারাডোনার জীবন কাহিনী | Maradona's Life Story
আরও পড়ুনঃ মেসির রেকর্ড সমূহ ২০২২ | বিশ্বকাপে মেসির রেকর্ড
এই পৃথিবীতে রেখে গেছেন তাঁর অনেক স্মৃতি । তার মৃত্যুতে অনেক ফুটবল প্রেমী ও তার ভক্তরা অনেক কেঁদেছেন । সেই কালো মানিক হিসাবে খ্যাত “ফুটবলের রাজা পেলে” কে নিয়ে আজকের এই বিশেষ আয়োজন ।
একনজরে পেলে
নামঃ এডসন অরান্তেস দো নাসিমেন্তো (পেলে)
জন্মঃ ২৩ অক্টোবর ১৯৪০
মৃত্যুঃ ২৯ ডিসেম্বর ২০২২
জন্মস্থানঃ ত্রেস কোরাকোয়েস, ব্রাজিল
মৃত্যুর স্থানঃ মরম্বি, সাও পাওলো, ব্রাজিল
পিতাঃ দন্দিনহো
মাতাঃ সেলেস্তে আরাস
উচ্চতাঃ ১.৭৩ মি (৫ ফুট ৮ ইঞ্চি)
মাঠে অবস্থানঃ ফরোয়ার্ড, অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ।
ফুটবল বিশ্বকাপে পেলে
অংশগ্রহনঃ ৪ বার (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৭০)
চ্যাম্পিয়নঃ ৩ বার
গোলঃ ৩টি
সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতাঃ ১৭ বছর ২৩৯ দিন
ফাইনালে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় ও গোলদাতাঃ ১৭ বছর ২৪৯
দিন
পেলের গোল সংখ্যা
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস (এর হিসাবে): ১,২৭৯ টি গোল
(১৩৬৩ ম্যাচে)
ফিফা (এর হিসাবে): ১,২৮১ টি গোল (১৩৬৩ ম্যাচে)
ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন (এর হিসাবে): ১,২৮১ টি গোল
(১৩৬৩ ম্যাচে)
ব্রাজিলের হয়ে ৯৫ টি গোল (১১৩ ম্যাচে)
পেলের নিজস্ব হিসাব: ১,২৮৩ টি গোল (১৩৬৩ ম্যাচে)
পেলে নামের রহস্য
পেলের আসল নাম এডসন অরান্তেস দো নাসিমেন্তো ও পেলে নামটা
এসেছে অপভ্রংশ থেকে । খুব ছোটবেলায় পেলে গোলকিপার হিসেবে খেলতেন । তার বাবার প্রিয়
খেলোয়াড় ছিলেন সাও পাওলোর ক্লাব ভাস্কো দি লরেন্সোর গোলকিপার “বিলে” ।
চার বছরের ছোট পেলে যখন গোল কিপিং করতেন বল ধরলেই বাবা
চিৎকার করে উঠতেন “বিল বলটা ধর” । এরপর মিনাস গেরাইসের বাচ্চারা যখন মাঠে ফুটবল খেলত
তখন সবাই এডসনকে “বিলে” নামে ডাকা শুরু করে ।
বাচ্চাদের উচ্চারণে এক সময় “বিলে” থেকে “ব” বাদ পড়ল
হয়ে গেল “পিলে” । এভাবে অপভ্রংশ হয়েই একসময় জন্ম নিল “পেলে” নামটি । সেই ছেলে “পেলে”
নামেই হয়ে উঠলেন সর্বকালের সেরা ফুটবলার ।
পেলের ফুটবল থেকে অবসর
পেলে ১৯৭৪ সালে ফুটবল থেকে প্রথম অবসরের ঘোষণা দেন ।
১৯৭৫ সালে আবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব নিউইয়র্ক কসমস এর হয়ে খেলতে চুক্তিবদ্ধ হন ।
এরপর ১৯৭৭ সালে অবসরে যান । কসমস এর হয়ে তিনি ৬৪ ম্যাচে ৩৭ গোল করেন ।
পেলের আত্মজীবনী
পেলে নিজের জীবনী নিয়ে লিখেছেন Why Soccer Matters
: A Look at More Than Sixty Years of International Soccer । ১ এপ্রিল ২০১৪ প্রকাশিত
এ বইটি ফুটবল ইতিহাসের এক প্রামাণ্য দলিল ।
পেলে যখন গায়ক ও অভিনেতা
পেলে শুধুমাত্র ফুটবল দিয়েই বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করেননি
--- গান, অভিনয়, এমনকি সাংবাদিকতায়ও তার পদচারণা ছিল । দশটির মতো চলচ্চিত্র এবং বেশ
কিছু টিভি ধারাবাহিক অভিনয় করেন তিনি । একশোর বেশি গান লিখেছেন । তার অভিনীত অন্যতম
চলচ্চিত্র “কিং পেলে” ও “ভিক্টোরিয়া” ।
পুরস্কার ও সম্মাননা
১৯৫৮: বিশ্বকাপের সেরা তরুণ খেলোয়াড়
১৯৭৮: ইউনিসেফ এর আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার
২০০০: ফিফার শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় (ম্যারাডোনার সাথে
যৌথভাবে)
২০০৪: ফিফার সেন্টিনিয়াল অ্যাওয়ার্ড
২০১২: স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক
ডিগ্রি ।
ফুটবলের বাইরের পেলে
অবসরে যাওয়ার পরও ফুটবলের বাইরে নানামুখী সামাজিক ও
মানবিক কাজে সক্রিয় ছিলেন পেলে, যেমন ---
মন্ত্রীঃ ১৯৯৫ সালে পেলেকে ব্রাজিলের প্রথম ক্রীড়ামন্ত্রী
নিয়োগ দেওয়া হয় । সেসময় ব্রাজিল ফুটবলের দুর্নীতি রুখতে পেলে এর উদ্যোগে ২৪ মার্চ
১৯৯৮ আইনও পাস করা হয়, এই আইনকে অনেকে “পেলে আইন” নামে অভিহিত করে থাকে । ১৯৯৮ সালের
৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন পেলে ।
১৯৯২ সালে জাতিসংঘের বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশ বিষয়ক
দুত হন ।
১৯৯৩ সালে ইউনেস্কো এর শুভেচ্ছা দূত হন ।
২০১৮ সালে পেলে শিশুদের জন্য একটি দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা
করেন । যার নাম দিয়েছিলেন “প্লে ফাউন্ডেশন” । এই সংস্থা
সারা বিশ্বের দরিদ্র ও অধিকার বঞ্চিত শিশুদের ক্ষমতায়নে কাজ করে থাকে ।
পেলের প্রয়াণ (মৃত্যু)
পেলে মারা যান ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ । ৩ জানুয়ারি ২০২৩
পেলেকে সমাধিস্থ করা হয় মেমোরিয়াল নেকরোপোল একুমেনিকায় । এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু
সমাধিস্থল । ১৯৮৩ সালে এই সমাধিস্থল নির্মাণ করা হয় । এর স্থপতি পেপে আলস্টাট ।
এখানকার এককটি কবরের দাম ৬,০০০ – ২০,০০০ ডলার পর্যন্ত । তবে সেটিও তিন বছরের জন্য । আর পারিবারিক প্যাকেজ ৫০,০০০ ডলার । তবে এখানে পেলের কবর থাকবে স্থায়ীরুপে । মৃত্যুর আগে ২০০৩ সালে এ জায়গা পছন্দ করে গিয়েছিলেন পেলে ।
এই রকম আরো সুন্দর সুন্দর পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।
আরও পড়ুনঃ ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২৬ কোথায় অনুষ্ঠিত হবে | ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২৬