রুই মাছের
উপকারিতা | রুই মাছ - আমাদের দেশ নদীমাতৃক দেশ । তাই তো আমাদের বলা হয় মাছে ভাতে
বাঙালি । আর বাঙালির দৈনিক খাবারের তালিকায় মাছ থাকবে না, এটা ভাবাই যায় না ।
আমাদের খাবারের মাছের তালিকায় রুই-কাতলার প্রাধাণ্য বেশি । মাছ খাওয়ার তালিকায়
আমরা বেশির ভাগ রুই মাছকেই প্রাধাণ্য দিয়ে থাকি ।
আসলে এই রুই মাছ আমাদের দৈনন্দিন খাওয়ার চাহিদা পুরন করার পাশাপাশি শরীরকে অনেক রোগ থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে । তাই আজকের আলোচনা রুই মাছেকে ঘিরে । তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নিই রুই মাছের উপকারিতা | রুই মাছ এর বিস্তারিত সম্পর্কে ।
আরও পড়ুনঃ মাশরুম খাওয়ার উপকারিতা কি | মাশরুমের স্বাস্থ্য উপকারিতা
আরও পড়ুনঃ কচি ডাবের পানির উপকারিতা | ডাবের পানির উপকারিতা
রুই মাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম কি?
রুই মাছ (ইংরেজি নাম: Rohu Carp; বৈজ্ঞানিক নাম: Labeo Rohita) বাংলাদেশ ও ভারতে বহুল পরিচিত মাছগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম । রুই মাছের স্থানীয় নাম রুই, রোহিতা, রুহিত, রাউ, নলা, গরমা, নওসি ইত্যাদি ।
রুই মাছের পুষ্টিগুন
রুই
মাছ আমাদের খুবই পরিচিত একটি মাছ । সুস্বাদু এ মাছটির রয়েছে অত্যান্ত ভালো
পুষ্টিগুণ । গবেষণায় দেখা গেছে, রুই মাছের শরীরে রয়েছে - ক্যালরি ৭৯ গ্রাম, পানি
৭৬.৭ গ্রাম, নাইট্রোজেন ২.৬৬ গ্রাম, প্রোটিন ১৬.৬ গ্রাম, ফ্যাট ১.৪ গ্রাম এবং
সোডিয়াম ১০০ মিলিগ্রাম উপকারি উপাদান রয়েছে ।
এছাড়া
এতে রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফলফরাস, আয়রন এবং কপার । এসব
পুষ্টিকর উপাদান গুলো মানব শরীরের জন্য অনেক উপকারী ।
রুই মাছের প্রাপ্তিস্থান
রুই
মাছ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের নদীতন্ত্রের প্রাকৃতিক প্রজাতির ।
মিষ্টি পানির পুকুর, হ্রদ, নদী ও মোহনায় পাওয়া যায় এই মাছ । এই মাছ বাংলাদেশের
বিভিন্ন বড় বড় নদীগুলোতে বিচরণ করে এবং ডিম ছাড়ার সময় এলে বিভিন্ন প্লাবন
ভূমিতে প্রবেশ করে এরা ।
দারুন
স্বাদ, সহজ চাষাবাদ পদ্ধতি এবং অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারণে ও পুষ্টি ঘাটতি মেটাতে
সক্ষম বলে শ্রীলংকা, চীন, রাশিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া এবং আফ্রিকান
দেশগুলোতে বাণিজ্যিক ভাবে রুই মাছের চাষ হচ্ছে । উল্লেখ্য যে আন্দামান
দ্বীপপুঞ্জের মিষ্টি পানির নদীতেও এই মাছের চাষ হচ্ছে ।
রুই মাছ চাষ পদ্ধতি
রুই
মাছ বাংলাদেশে দেশিও কার্প জাতীয় মাছের সাথে মিশ্র চাষ করা হয় । রুই মাছ পানির
মধ্যস্তরের মাছ । মধ্যস্তরে থাকার কারণে পানি উপরের স্তরের মাছ যেমন কাতলা এবং
নিচের স্তরের মাছ যেমন কালো কার্প মাছের সাথে চাষ করা হয়ে থাকে ।
কতটুকু খেতে হবে এই মাছ?
ভারসাম্য
বজায় রেখে খাওয়ার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট পুষ্টিবিদরা । তাদের মতে, দৈনিক রুই
মাছের একটা বড় টুকরাই একজন মানুষের জন্য যথেষ্ট ।
গবেষকরা
বলেছেন, নিয়মিত রুই মাছের পুষ্টিকর উপাদানগুলো যদি আপনার শরীরে প্রবেশ করে তাহলে
অনেক উপকার পাওয়া যাবে । সেইসঙ্গে সার্বিকভাবে শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য
করে রুই মাছ ।
রুই মাছের ছবি |
রুই মাছের উপকারিতা
রুই
মাছ অত্যান্ত সুস্বাদু । রুই মাছ খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে । আমাদের মাঝে অনেকেই
আছেন যারা রুই মাছের নানা উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান । আপনাদের সুবিধার্থে নিচে রুই
মাছের কয়েকটি উপকারিতা দেওয়া হলো ---
রক্ত
জমাট বাঁধার সমস্যা দূর করে
National
Center for Biological Information - এর তথ্যানুযায়ী, Omega-3 ফ্যাটি অ্যাসিড
রক্তের অণুচক্রিকাকে জমাট বাঁধতে দেয় না, ফলে রক্তনালিতে জমাট বাঁধার কারণে
স্ট্রোক হতে পারে না । বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্রেও স্ট্রোক প্রতিরোধে রুই মাছের
ভূমিকার কথা উল্লেখ রয়েছে । পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, ভালো মানের প্রোটিনের অন্যতম
উৎস রুই মাছ ।
পুষ্টির
ঘাটতি দূর করে
রুই
মাছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা শরীরের প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে
সক্ষম । তাই তো এক কথায় বলা যেতে পারে যে রুই মাছ হল সেই প্রধান হাতিয়ার যা দিয়ে
ছোট-বড় রোগকে কুপোকাত করা সম্ভব । প্রসঙ্গত, রুই মাছে উপস্থিত সেলেনিয়াম এমন
কিছু এনজাইমের জন্ম দেয়, যা ক্যান্সার রোগকেও দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে
থাকে ।
ত্বক সুস্থ
থাকে
ত্বকের
নানা রকম সংক্রমণ বা প্রদাহের সমস্যাও কমতে পারে এই মাছ নিয়মিত খেলে । এই মাসে
থাকা Omega-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে নানা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে ।
দূষণের
হাত থেকে বাঁচায়
রুই
মাছে থাকা বিশেষ কিছু উপাদান ফুসফুসের কর্মক্ষমতা এতটাই বাড়িয়ে দেয় যা বায়ু
দূষণের কু-প্রভাব মানব শরীরের উপর পড়তেই দেয় না । সেই সঙ্গে অ্যাজমার প্রকোপও
হ্রাস করে ।
দৃষ্টিশক্তি
ঠিক রাখে
ওমেগা
থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের আরো কিছু গুণ রয়েছে । কাজের কারণে সারাদিন কম্পিউটারের
সামনে কাটাতে হয় অনেকেই । তাছাড়া স্মার্টফোন তো আছেই । এগুলোর আলো চোখের ওপর
নানা ধরনের প্রভাব ফেলে । দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, চোখ শুকিয়ে যায় । চোখের এ ধরনের
সমস্যা কমাতে পারে রুই মাছ । ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড চোখের বহু সমস্যাকে প্রতিহত
করে ।
বৈজ্ঞানিক
গবেষনা অনুসারে, Omega-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে
আমাদের ত্বককে রক্ষা করে । সেইসঙ্গে একজিমা এবং সোরিয়াসিসের মতো রোগের
চিকিৎসাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে । প্রসঙ্গত, এই মাছে থাকা প্রোটিন
কোলাজেনের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে । যার ফল স্বরুপ স্বাভাবিকভাবেই ত্বক
উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ।
হাড়ের
ব্যথা কমায়
যারা
হাড়ের ব্যথায় ভোগেন, তারা নিয়মিত এই মাছ খেলে সমস্যা কমে যাবে অনেকটাই ।
বিজ্ঞানীদের Omega-3 ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অস্টোওপোরোসিস রোগের মধ্যে যে গভীর
একটা সম্পর্ক রয়েছে সে বিষয়টি নজরে এসেছে । সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের মতে, প্রাকৃতিক
এই উপাদানটির মধ্যে এমন কিছু শক্তি রয়েছে, যা এই ধরনের হাড়ের রোগের প্রকোপও
কমাতে দারুণ উপকারে আসে ।
হার্ট সুস্থ থাকে
রুই
মাছে উপস্থিত Omega-3 ফ্যাটি অ্যাসিড হলো হার্টের জন্য মহৌষধ । এই মাছ খাওয়ার ফলে
হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে । সেইসঙ্গে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও
হ্রাস পাবে । অনিয়ন্ত্রিত জীবন, অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দওয়া এবং আরও নানা কারণে কম
বয়সিদের মধ্যেও বাড়ছে হৃদরোগের আশঙ্কা এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন, সুস্থ জীবন
পেতে রুই মাছ খাওয়াটা কতটা জরুরি ।
রুই মাছের অপকারিতা
প্রতিটি জিনিসের ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে । তদ্রুপ
রুই মাছের উপকারিতার পাশাপাশি রুই মাছের অপকারিতাও রয়েছে ।
খাবার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা গবেষনাতে দেখেছেন যদি প্রতি
নিয়ত অর্থাৎ ঘন ঘন ফিশফ্রাই খাওয়া হয় তাহলে মানুষের হার্ট বা হৃদযন্ত্র খারাপ হওয়ার
সম্ভবনা থাকে । আর অনেক বেশি পরিমানে ফিশফ্রাই খাওয়া হলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে
যায় প্রায় 44% এর মতো ৷
মাছের চর্বিতে থাকে মানব শরিরের জন্য উপকারি Omega-3
ফ্যাটি অ্যাসিড । মাছ যখন ফ্রাই করা হয় Omega-3 ফ্যাটি অ্যাসিড পরিমান মাছে থাকেনা
বললেই চলে, ফ্রাই বা ভাজি করার ফলে কিন্তু সেটা আর ও অনেক কমে যেতে থাকে ।
উচ্চ তাপে তেল ভেঙে ক্ষতিকর রাসায়নিক ক্রিয়া তৈরি করা হয়ে থাকে, আর মাছ ভাজি বা ফ্রাই করার ফলে ক্ষতিকর ক্যালোরির পরিমানও বেড়ে যায় । যা হার্টের জন্য খুবই ক্ষতিকর ।
এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।
আরও পড়ুনঃ শরীর দুর্বল থেকে মুক্তির উপায় | শরীর দুর্বল হলে করণীয়