মুনীর চৌধুরীর কবর নাটক | মুনীর চৌধুরীর 'কবর' - আবু
নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, নাট্যকার,
সাহিত্য সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী, বাগ্মী এবং বুদ্ধিজীবী । বাংলা সাহিত্যে তার অবদান
অনস্বীকার্য । ১৯৭১ সালে মুনীর চৌধুরী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি
সামরিক বাহিনী কর্তৃক হত্যাকাণ্ডের অন্যতম একজন শিকার । মুনীর চৌধুরীর সৃষ্টি কবর মূলত
একটি নাটক । আজকের বুক রিভিউতে মুনীর চৌধুরীর কবর নাটক নিয়ে আলোচনা করবো ।
আরও পড়ুনঃ বিষাদ সিন্ধু উপন্যাস - মীর মোশাররফ হোসেন | বুক রিভিউ
আরও পড়ুনঃ পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় রিভিউ | সৈয়দ শামসুল হক
বন্ধুরা, আজকের ব্লগ পোস্টে যে বইটির রিভিউ করবো সেই বইটির নাম “কবর” । এর লেখক বাংলাদেশের বিখ্যাত সাহিত্যিক মুনীর চৌধুরী । এই বইটি প্রথম প্রকাশীত হয় ১৯৬৬ সালে । তাহলে চলুন বন্ধুরা মুনীর চৌধুরীর কবর নাটক সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক ।
কবর নাটকের পটভূমি
স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশের নাট্যসাহিত্যের অন্যতম প্রধান
কারিগর মুনীর চৌধুরী । অসাধারণ প্রতিভাধর নাট্যকার মৌলিক ও অনুবাদ নাটক দিয়ে বাংলা
নাট্যসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন । তার নাটকগুলো স্বদেশপ্রেম ও সমাজ চেতনায় উদ্দীপ্ত ।
তার “কবর” নাটকটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায়
রচিত । ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দী
হিসাবে থাকা অবস্থায় তিনি ১৯৫৩ সালের ১৭ জানুয়ারি নাটকটি রচনা করেন ।
জানা যায় আরেব রাজবন্দী রণেশ দাশগুপ্ত মুনীর চৌধুরীর
কাছে জেলখানায় মঞ্চস্থ করা যায় এমন একটি নাটক লিখে দেওয়ার জন্য চিঠি লিখেছিলেন ।
যেখানে দেশপ্রেম থাকবে, আলো-আঁধারি পরিবেশ থাকবে এবং নারী চরিত্রটি এমন ভাবে রচিত হবে
যাতে পুরুষ অভিনয় করতে পারে ।
মুনীর চৌধুরী রণেশ দাশগুপ্তের অনুরোধ মাথায় রেখেই কবর
নাটকটি রচনা করেছিলেন । নাটকটি সর্বপ্রথম ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জেলখানাতে মঞ্চস্থ
হয় । ফনি চক্রবর্তীর নির্দেশনায় নাটকটিতে অভিনয় অংশ নেন বন্দি নলিনী দাস, অজয় রায়
প্রমুখ । ১৯৫৫ সালের আগস্ট মাসে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার আজাদী সংখ্যায় কবর নাটকটি প্রথম
প্রকাশিত হয় ।
কবর নাটক pdf
বন্ধুরা, আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা কবর নাটক
pdf খোঁজ করে থাকেন । আপনাদের সুবিধার্তে এখানে কবর নাটক এর pdf ফাইলটি দেওয়া হলো ।
এখান থেকে নাটকটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন ।
মুনীর চৌধুরীর কবর নাটক |
কবর নাটক লেখক পরিচিতি
জন্মঃ ২৭ নভেম্বর ১৯২৫; মানিকগঞ্জ; তার পৈতৃক নিবাস
নোয়াখালী ।
নিখোঁজঃ স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়ের প্রাক্কালে আলবদর
বাহিনী কর্তৃক অপহৃত ও নিখোঁজ হন ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ ।
নাটকঃ রক্তাক্ত প্রান্তর (১৯৬২), কবর (মানুষ নষ্ট ছেলে
ও কবর) চিঠি (১৯৬৬), দণ্ডকারণ্য (১৯৬৬), পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য (১৯৬৯) ।
অনুবাদ নাটকঃ মুখরা রমণী বশীকরণ (১৯৭০), রূপার কৌটা
(১৯৬৯), কেউ কিছু বলতে পারে না (১৯৬৭) ।
প্রবন্ধ গ্রন্থঃ ড্রাইডেন ও ডি, এল, রায় (১৯৬৩, পরে
তুলনামূলক সমালোচনা গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত), মীর মানস (১৯৬৫), তুলনামূলক সমালোচনা (১৯৬৯),
বাংলা গদ্যরীতি (১৯৭০) ।
পুরস্কারঃ ১৯৬২ সালে নাটকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার,
১৯৬৫ সালে “মীর মানস” গ্রন্থের জন্য দাউদ পুরস্কার, ১৯৬৬ সালে সিতারা-ই-ইমতিয়াজ খেতাব
লাভ এবং ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন (মরণোত্তর) ।
কবর নাটকের সারসংক্ষেপ
মুনীর চৌধুরীর “কবর” ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রথম
প্রতিবাদী নাটক । নাটকের পুরো ঘটনাই গোরস্থানের ভেতর সংঘটিত হয় । এ নাটকের কেন্দ্রীয়
চরিত্র মাত্র তিনটি --- নেতা, ইন্সপেক্টর হাফিজ ও মুর্দা ফকির ।
মদ্যপ নেতা ও ইন্সপেক্টর হাফিজের সংলাপের মধ্য দিয়ে
নাটকের সূত্রপাত । ভাষা শহীদদের লাশ গুম করার নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য নেতা ও তার
দলবল নিয়ে গোরস্থানে আসেন । নেতার এই কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য ছিলেন
ইন্সপেক্টর হাফিজ ।
নাট্যকার নেতা ও হাফিজ চরিত্রের মধ্য দিয়ে তৎকালীন
রাজনীতিবিদ ও ব্যক্তি স্বার্থান্বেষী মানুষের রূপ উন্মোচন করেছেন । বাংলার শ্রেষ্ঠ
সন্তানদের শেষ চিহ্নটুকু ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নানা ধরনের পরিকল্পনা করতে থাকেন তারা
।
সব কিছু যখন পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছিল, তখনই অশরীরী
আত্মার মত হঠাৎ মুর্দা ফকির নামক এক চরিত্রের আগমন ঘটে, আধপাগল এই মানুষটি যেন সমাজের
বিবেক হিসেবে আবির্ভূত হন ।
তেতাল্লিশ এর দুর্ভিক্ষে নিজের চোখের সামনে সমস্ত আপনজনকে
মরতে দেখেছেন । মানুষগুলোকে কবর দেওয়ার সামর্থ্যও তার ছিল না । সেই থেকে মানসিক ভারসাম্য
হারিয়ে গোরস্থানের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান তিনি, নাম হয় মুর্দা ফকির ।
মুর্দা ফকির “মুর্দা” নয় জীবিত । তবুও নেতা ও হাফিজ
দুজনেই তাকে মনে মনে ভয় পায় । লাশগুলো এখন এখনো জীবিত আর তাদের কবর থেকে উঠিয়ে তিনি
মিছিল বের করবেন এমন অদ্ভুত একটি কথা বলে তাদের ভড়কে দেন মুর্দা ফকির ।
মুর্দা ফকির নেতা ও হাফিজের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কিছু
দূর গিয়ে আবার ফিরে এসে বলেন, গন্ধ! তোমাদের গায়ে মরা মানুষের গন্ধ! তোমরা এখানে
কি করছ? যাও তাড়াতাড়ি কবরে যাও । ফাঁকি দিয়ে ওদের পাঠিয়ে দিয়ে নিজেরা বাইরে থেকে
মজা লুটতে চাও, না? না, না আমার রাজ্যে এসব চলবে না ।
মুর্দা ফকিরের এই সংলাপের মধ্য দিয়েই নাটকটির সারসত্য
প্রকাশিত হয়েছে । এখানে যারা জীবিত তারা প্রকৃত জীবিত নয়; জীবন্মৃত অবস্থায় তারা
জীবন্ত লাশ মাত্র । আর যাদের তারা অন্যায় ভাবে হত্যা করেছে তারাই জীবিত, চির জাগরুক
।
তাইতো লাশগুলো কবরে ঢুকতে চায় না, বিদ্রোহ করে । হাফিজের
কথার প্রতিবাদ করে ওরা বলে, “মিথ্যা কথা । আমরা মরিনি । আমরা মরতে চায়নি । আমরা মরবো
না । ... কবরে যাব না” ।
কবর নাটকের প্রশ্ন
|| প্রশ্নঃ “কবর” কোন শ্রেণীর গ্রন্থ?
উত্তরঃ নাটক ।
|| প্রশ্নঃ ভাষা আন্দোলনভিত্তিক নাটক কোনটি?
উত্তলঃ কবর ।
|| প্রশ্নঃ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির পটভূমিতে রচিত
“কবর” নাটকের রচয়িতা কে?
উত্তরঃ মুনীর চৌধুরী ।
|| প্রশ্নঃ মুনীর চৌধুরীর “কবর” নাটকের প্রেক্ষাপট কি?
উত্তরঃ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ।
|| প্রশ্নঃ “কবর” নাটকটি সর্বপ্রথম কোথায় অভিনীত হয়?
উত্তরঃ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ।
এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।
আরও পড়ুনঃ পদ্মা নদীর মাঝি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় | বুক রিভিউ