চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিচিতি | চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা - বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা । এই জেলাকে অনেকে নবাবগঞ্জ এবং চাঁপাই নামেও ডাকে । ব্রিটিশ আমলে এই জেলা মালদহ জেলার একটি অংশ ছিলো ।
১৯৪৭ সালে এটি তৎকালীন মালদহ থেকে আলাদা হয়ে পূর্ব পাকিস্থানে
অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ১৯৮৪ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে । চাঁপাইনবাবগঞ্জ
জেলা আমের জন্যও বিখ্যাত । আজকের ব্লগ পোস্টে “চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিচিতি
| চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা” নিয়ে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো ।
আরও পড়ুনঃ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ২০২৩ আবেদন | একাদশ শ্রেণিতে আবেদনের নিয়ম ২০২৩
অন্য পোস্টঃ হিজরী সনের সূচনা ও আশুরায় করণীয়
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পটভূমি
ব্রিটিশ শাসনামলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মালদহ জেলার অংশ ছিল । ১৯৪৭ সালে র্যাডক্লিফ কমিশন অনুসারে নবাবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) এবং তার পার্শ্ববর্তী শিবগঞ্জ, নাচোল, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর থানাকে মালদা থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয় । শাসন ব্যবস্থার সুবিধার্তে ১ নভেম্বর ১৯৪৮ রাজশাহী জেলার একটি থানা ও দিনাজপুরের অন্তর্ভুক্ত পোরশা থানা সহ একটি নতুন মহাকুমার সৃষ্টি হয় । এ মহাকুমার নাম রাখা হয় নবাবগঞ্জ ।
১৯৮২ সালে থানাগুলোকে উপজেলা এবং মহাকুমাকে জেলায় রূপান্তরিত
করার ফলে নবাবগঞ্জের ৫টি থানা শিবগঞ্জ, নাচোল, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর, নবাবগঞ্জ সদর উপজেলায়
উন্নীত হয় । ১ মার্চ ১৯৮৪ নবাবগঞ্জ মহাকুমাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জেলা ঘোষণা করা হয়
। ১ আগস্ট ২০০১ সালে সরকারিভাবে নবাবগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাখা
হয় ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নামকরণ
প্রাক-ব্রিটিশ আমলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছিল মুর্শিদাবাদের
নবাবদের বিহার ভূমি । নবাবরা এখানে শিকার করতে আসতেন বলে স্থানের নাম হয় নবাবগঞ্জ
। আবার ইতিহাস সূত্রে “চাপাই” নামকরণের কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না । তবে এ ব্যাপারে
দু'রকম জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে ।
প্রথমতঃ নবাবগঞ্জের মহেশপুর গ্রামে নবাব আমলে ‘চম্পাবতী’
মতান্তরে ‘চম্পারানী’ বা ‘চম্পাবাঈ’ নামে এক সুন্দরী বাঈজি বাস করতেন । তার নৃত্যের
খ্যাতি চারপাশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি নবাবদের প্রিয় পাত্রী হয়ে ওঠেন
। তার নাম অনুসারে এ জায়গার নাম হয় ‘চাপাই’ ।
দ্বিতীয়তঃ এ অঞ্চলে রাজা লখিন্দরের বাসভূমি ছিল । লখিন্দরের
রাজধানীর নাম ছিল চম্পক । চম্পক নাম থেকেই ‘চাপাই’ নামের উৎপত্তি বলে মনে করা হয় ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মানচিত্র
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সম্পর্কে তথ্য
- প্রতিষ্ঠা: ১ মার্চ ১৯৮৪
- সীমানা: উত্তরে নওগাঁ জেলা, দক্ষিনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, পূর্বে রাজশাহী ও নওগাঁ জেলা, পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ।
- আয়তন: ১,৭০২,৫৫ বর্গ কিমি (সুত্র: BBS) ।
- জনসংখ্যা: ১৮,৩৫,৫২৭ জন ।
- সাক্ষরতা (৭ বছর তদুর্ধ): ৭১.৯২ শতাংশ ।
- ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি): ১,০৭৮ জন ।
- প্রধান নদনদী: গঙ্গা (পদ্মা) পূনর্ভবা ও পাগলা নদী ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রশাসনিক কাঠামো
- উপজেলা: ৫টি --- চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগ,ঞ্জ নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট ।
- থানা: ৫টি ।
- পৌরসভা: ৪টি --- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ, রহনপুর, নাচোল ।
- ইউনিয়ন: ৪৫ টি ।
- জাতীয় সংসদের আসন: ৩টি ।
বাংলাদেশের সর্ব পশ্চিমের
- জেলা – চাঁপাইনবাবগঞ্জ,
- উপজেলা – শিবগঞ্জ,
- ইউনিয়ন – মনকষা,
- স্থান – মনকষা ।
জানেন কি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা
- আয়তনে: বাংলাদেশের ৪০ তম,
- রাজশাহী বিভাগের: ৭ম ।
- জনসংখ্যায়: বাংলাদেশের ৪০ তম,
- রাজশাহী বিভাগের: ৭ম ।
- সাক্ষরতার হারে: বাংলাদেশের ৩৮ তম,
- রাজশাহী বিভাগের: ৫ম ।
মুক্তিযুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ
সেক্টর: ৭ নং
হানাদার মুক্ত দিবস ---
- ১১ ডিসেম্বর: গোমস্তাপুর
- ১১ ডিসেম্বর: শিবগঞ্জ
- ১৫ ডিসেম্বর: চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর
- ১৫ ডিসেম্বর: নাচোল ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি
- ইলা মিত্র (ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী)
- প্রফেসর ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য)
- প্রফেসর মুহাম্মদ রফিকুন নবী (র’নবী) (চিত্রশিল্পী)
- বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান শেলী (সাবেক প্রধান বিচারপতি)
- মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য)
- মমতাজউদ্দীন আহমেদ (নাট্যকার) ।
গম্ভীরা গান
গম্ভীরা বাংলাদেশের লোকসংগীত এর অন্যতম ঐতিহ্য । চাঁপাইনবাবগঞ্জ
ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ অঞ্চলে গম্ভীরার প্রচলন রয়েছে । গম্ভীরা দলবদ্ধ ভাবে
গাওয়া হয় । এটি বর্ণনামূলক গান । চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা অঞ্চলের গম্ভীরার মুখ্য চরিত্রে
নানা-নাতি খুব জনপ্রিয় । ধারণা করা হয় শিবপূজাকে কেন্দ্র করে গম্ভীরের প্রচলন হয়
। শিবের এক নাম ‘গম্ভীর’ । তাই শিবের বন্দনাগীতই হল গম্ভীরা ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের জন্য বিখ্যাত । চাঁপাইনবাবগঞ্জ
জেলা আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত । এ জেলায় সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয় শিবগঞ্জ, ভোলাহাট,
নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় । উৎপাদিত আমের মধ্যে ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসাপাত, আশ্বিনা
ও বোম্বাই অন্যতম ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের দর্শনীয় স্থান
- সদর: আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র (পূর্বনাম আম গবেষণা কেন্দ্র), বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-৩ ।
- শিবগঞ্জ ছোট সোনা মসজিদ, তাহখানা কমপ্লেক্স, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি, সোনা মসজিদ স্থলবন্দর, শাহ নেয়ামত উল্লাহ এর মাজার ।
- নাচোল: আলি শেরপুর মসজিদ, নাচোল রাজবাড়ী ।
- ভোলাহাট: সমুন্নত ভোলাহাট স্মৃতিসৌধ ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ FAQ
প্রশ্ন: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার থানা কয়টি?
উত্তর: থানা ৫টি যথা --- চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগ,ঞ্জ
নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট ।
প্রশ্ন: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আয়তন কত?
উত্তর: চাঁপাইনবাবগঞ্জ আয়তন ১,৭০২,৫৫ বর্গ কিমি (সুত্র:
BBS) ।
প্রশ্ন: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পৌরসভা কয়টি?
উত্তর: পৌরসভা ৪টি যথা --- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ,
রহনপুর, নাচোল ।
প্রশ্ন: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ইউনিয়ন কয়টি?
উত্তর: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ইউনিয়ন ৪৫টি ।
এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।
অন্য পোস্টঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর অভাবজনিত রোগ | ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর কাজ কি