বান্দরবান জেলা পরিচিতি | বান্দরবান জেলা বিস্তারিত
- বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের সর্ব পূর্বের জেলা । বর্তমানে এই জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের
একটি প্রশাসনিক অঞ্চল । বান্দরবান একটি পার্বত্য জেলা । এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসাবে
যুক্ত হয় ১৮৬০ সালে । তখন ব্রিটিশরা এই এলাকার নাম দেয় চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস বা
পার্বত্য চট্টগ্রাম । এটি চট্টগ্রাম জেলার অংশ হিসাবে বাংলা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল
। বান্দরবান জেলা ছিল বোমাং সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত । জেলার আদি নাম “বোমাং থং” । আজকের
ব্লগ পোস্টে “বান্দরবান জেলা পরিচিতি | বান্দরবান জেলা বিস্তারিত” নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
করবো ।
আরও পড়ুনঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিচিতি | চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা
অন্য পোস্টঃ চ্যাট জিপিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা | Chat GPT Artificial Intelligence
বান্দরবান জেলার পটভূমি
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে জেলা ঘোষণা করা হয় এবং বান্দরবানকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয় । ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেজুলেশন অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি সালে বিভক্ত করা হয় । সার্কেল গুলো ---চাকমা, মং এবং বোমাং ।
বান্দরবান সে সময় বোমাং সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত থাকায়
এ জেলার আদি নাম “বোমাং থং” । বান্দরবান ১৯৫১ সালে মহাকুমা হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম
শুরু করে । পরবর্তীতে ১৮ এপ্রিল ১৯৮১ তৎকালীন লামা মহাকুমার ভৌগলিক ও প্রশাসনিক সীমানাসহ
সাতটি উপজেলার সমন্বয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ।
বান্দরবান নামকরণ
বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে
। এ এলাকায় একসময় বাস করত অসংখ্য বানর । বানরগুলো শহরের প্রবেশমুখে ছড়ার পাড়ে (ক্ষুদ্রনদী)
পাহাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত । একসময় অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায়
বানরের দল পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধ ভাবে ছড়া পার হয় ।
বানরের ছড়া (ক্ষুদ্রনদী) পারাপারের এই দৃশ্য দেখতে
পায় এখানকার স্থানীয় মানুষ । সে সময় থেকে জায়গাটি পরিচিতি পায় “ম্যঅক্সিছি ছড়া”
নামে । মারমা ভাষায় ‘ম্যাঅক্সি’ এর অর্থ হচ্ছে বানর আর ‘ছি’ অর্থ হচ্ছে বাঁধ । কালের
প্রবাহে বাংলা ভাষী মানুষের সাধারণ উচ্চারণে এ এলাকা বান্দরবান নামে পরিচিতি লাভ করে
। তবে মারমা ভাষায় বান্দরবান এর প্রকৃত নাম “রদ ক্যওচি ম্রো” ।
বান্দরবান জেলার মানচিত্র
বান্দরবান সম্পর্কে কিছু তথ্য
- প্রতিষ্ঠা: ১৮ এপ্রিল ১৯৮১ ।
- সীমানা: পূর্বে মিয়ানমার ও পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলা, পশ্চিমে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা, উত্তরের পার্বত্য রাঙামাটি জেলা, এবং দক্ষিনে মিয়ানমার ।
- আয়তন: ৪,৪৭৯,০১ বর্গ কিলোমিটার ।
- জনসংখ্যা: ৪,৮১,১০৯ জন ।
- সাক্ষরতা (৭ বছর ও তদুর্ধ): ৬৩.৬৪% ।
- ঘনত্ব: (প্রতি বর্গ কিমি): ১০৭ জন ।
- প্রধান নদ-নদী: সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাকখালী ।
বান্দরবান জেলার প্রশাসনিক কাঠামো
- উপজেলা: ৭টি --- বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম, রুমা, থানচি ও লামা ।
- থানা: ৭টি ।
- পৌরসভা: ২টি --- বান্দরবান ও লামা ।
- ইউনিয়ন: ৩৪ টি ।
- জাতীয় সংসদের আসন: ১টি ।
- জাতীয় সংসদের ৩০০ নং আসন: পার্বত্য বান্দরবান ।
বাংলাদেশের সর্ব পূর্বের
- জেলা: বান্দরবান
- উপজেলা: থানচি
- ইউনিয়ন: তিন্দু
- স্থান: আখাইনঠং ।
জানেন কি : বান্দরবান জেলা
- আয়তনে: বাংলাদেশের তৃতীয়
- চট্টগ্রাম বিভাগের: তৃতীয়
- জনসংখ্যায়: বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জেলা
- চট্টগ্রাম বিভাগের: ১১ তম
- সাক্ষরতার হারে: বাংলাদেশের ৬২ তম
- চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ তম ।
মুক্তিযুদ্ধে বান্দরবান
সেক্টর: ১ নং
হানাদার মুক্ত দিবস ---
- ১৩ ডিসেম্বর: থানচি ও লামা
- ১৪ ডিসেম্বর: বান্দরবান সদর
- ১৪ ডিসেম্বর: রোয়াংছড়ি
- ১৪ ডিসেম্বর: কদম আলী
- ১৬ ডিসেম্বর: রুমা
- ১৬ ডিসেম্বর: নাইক্ষ্যংছড়ি
বান্দরবান জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি
- ইউ. কে. চিং মারমা (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে একমাত্র বীর বিক্রম খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা)
- জাফর ইকবাল (ফুটবলার)
- বীর বাহাদুর উশৈ সিং (রাজনীতিবিদ) ।
বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট ১১ টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর
বসবাস রয়েছে একমাত্র বান্দরবান জেলাতে । এরা হলো মারমা, চাকমা, মুরং, ত্রিপুরা, লুসাই,
খুমি, বম, খেয়াং, চাক, পাংখোয়া ও তঞ্চঙ্গা ।
প্রকৃতি কন্যা বান্দরবান
প্রকৃতির কন্যা হিসেবে অপরূপা বান্দরবান এক নামে পরিচিত
। পাহাড় কন্যা, পর্যটন কন্যা, বাংলার দার্জিলিং, নৈসর্গিক ভূমি এবং অনেকে মেঘ-পাহাড়ের
দেশও বলে থাকেন বান্দরবানকে । আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে পাহাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু
পাহাড়ে গভীর অরণ্য ও সুনসান নীরবতার কারণে পর্যটকদের সহজেই কাছে টানে বান্দরবান ।
বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান
- সদর: চিম্বুক পাহাড়, প্রান্তিক হ্রদ, নীলগিরি, বোমং রাজবাড়ী, বৌদ্ধ স্বর্ণমন্দির, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, নীলাচল, শুভ্রনীলা ।
- রুমা: তাজিংডং (দেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ), কেওকারাডাং, ঋজুক ঝরনা, যাদি পাই ঝরনা, পাতাংঝিরি ঝরনা, বগা লেক ।
- থানচি: নাফাখুম ঝরনা, বাকলাই ঝরনা, জীবননগর পাহাড়, আলীকদম, রূপমুহুরী ঝরনা, মেরাইনডং পাহাড়, ডিম পাহাড় ।
- লামা: সাঙ্গু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ।
- রোয়াংছড়ি: দেবতাখুম, শিপ্পি পাহাড় ।
- নাইক্ষ্যংছড়ি: বাংলাদেশের রাবার জোন, উপবন পর্যটনকেন্দ্র, প্যানারোমা পর্যটনকেন্দ্র, শৈলচূড়া আশারলতি চা বাগান ।
বান্দরবান জেলা FAQ
প্রশ্ন: বান্দরবান জেলার আয়তন কত?
উত্তর: বান্দরবান জেলার আয়তন ৪,৪৭৯,০১ বর্গ কিলোমিটার
।
প্রশ্ন: বান্দরবান জেলার থানা কয়টি?
উত্তর: বান্দরবান জেলার থানা ৭টি --- বান্দরবান সদর,
রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম, রুমা, থানচি ও লামা ।
প্রশ্ন: বান্দরবান কোন বিভাগে?
উত্তর: বান্দরবান চট্টগ্রাম বিভাগে অবস্থিত ।
প্রশ্ন: বান্দরবান উপজেলা কয়টি?
উত্তর: বান্দরবান উপজেলা ৩৪টি ।
প্রশ্ন: বান্দরবান জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত?
উত্তর: বান্দরবান তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত ।
এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।
অন্য পোস্টঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় | গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়