শবে বরাতের তাৎপর্য | শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত -
প্রতি বছরই ঘুরে উপস্থিত হয় শবে বরাত, পবিত্র মাহে শাবান । দুনিয়াবী জীবনাচরণে অবাঞ্চিত
ভাবে এসে পড়া পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তির এক মহা উপলক্ষ এই মাস । ইবাদতময় মুক্তিরজনীর
মাসকে ঘিরে আজকের এই বিশেষ ব্লগ পোস্ট । আজকের ব্লগ পোস্টের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে “শবে
বরাতের তাৎপর্য | শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত” ।
আরও পড়ুনঃ হিজরী সনের সূচনা ও আশুরায় করণীয়
আরও পড়ুনঃ হতাশা থেকে মুক্তির উপায় ইসলাম | হতাশা থেকে মুক্তির উপায় কি
মাহে শা’বান
আরবি চন্দ্র বর্ষের অষ্টম মাস শা’বান । হাদীস শরীফে এমাসের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত এর কথা বর্ণনা করা হয়েছে । রাসুল (সাঃ) অন্য মাসের থেকে এ মাসেই বেশি নফল রোজা রাখতেন । এ মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতই “শবে বরাত” ।
শবে বরাত
শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত “শবে বরাত” নামে পরিচিত
। “শব” ফারসি শব্দ যার অর্থ রাত আর “বরাত” আরবি শব্দ যার অর্থ মুক্তি বা নাযাত ইত্যাদি
। “শবে বরাত” অর্থ সৌভাগ্য রজনী, পুণ্যময় রজনী, নাজাতের রজনী ইত্যাদি ।
এ রাত সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “লাইলাতুন
নিসফি মিন শা’বান” অর্থাৎ শা’বানের মধ্যভাগের রাত্রি । লাইলাতুল বরাতে উম্মতে মোহাম্মদী
একাগ্রচিত্তে তওবা-ইস্তেগফার ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে গুনাহ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়
। চিরস্থায়ী আবাসস্থল জান্নাতের পথ সুগম করে । আর এজন্যই এর নামকরণ হয়েছে “শবে বরাত”
বা “নাজাতের রজনী” ।
শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত
|| ইমাম তিরমিজি (রহঃ) বলেন: উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা
(রাঃ) বর্ণনা করেন --- আমি এক রাতে রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বিছানায় পেলাম না । তাই আমি
তাকে খুঁজতে বের হলাম । ‘বাকি’ নামক কবরস্থানে তাকে পেলাম । তিনি [রাসুলুল্লাহ (সাঃ)]
বললেন: তুমি কি আশঙ্কা করছো যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করবেন?
আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমি মনে করছি আপনি আপনার
অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন । তিনি বললেন: মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন মধ্য শা’বানের
রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন, অতঃপর কালব গোত্রের পালিত বকরির পরিমাণের চেয়েও বেশি
পরিমাণ মানুষদের ক্ষমা করেন ।
|| আলী ইবনে আবু তালেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: যখন মধ্য শা’বানের রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে সালাত আদায় করবে দিবসে সিয়াম পালন করবে । কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা সূর্যাস্তের পর দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে বলেন:
“আছে কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করবো । আছে কি কেউ
রিজিক প্রার্থনাকারী? আমি তাকে রিজিক দান করব । আছে কি কেউ বিপদে নিপতিত ব্যক্তি? আমি
তাকে সুস্থতা দান করব । এভাবে ফজর পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে” । (ইবনে মাজাহ ও বায়হাকী)
শবে বরাতের রোজা কয়টি
আলী ইবনে আবু তালেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন: যখন মধ্য শা’বানের রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে সালাত আদায় করবে দিবসে
সিয়াম পালন করবে ।
শা’বান মাসের ১৪ তারিখের দিবাগত রাত্রে ইবাদত করতে হবে
এবং ১৫ তারিখ রোজা রাখতে হবে । অর্থাৎ শবে বরাতের রোজা একটি ।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম
আরবি মাসের অষ্টম মাসের নাম শাবান মাস । এই মাসের ১৪
তারিখ দিবাগত রাত্রে এই নামাজ পড়তে হয় । কথিত আছে এই রাত্রে মহান আল্লাহ তায়ালার
আদেশে পৃথিবীর মানুষের জন্য ফেরেশতারা রিযিক বন্টন করে থাকে । এই রাত্রে নফল ইবাদত
করা উত্তম এবং ওই তারিখে রোজা রাখা উচিত । এই দিনের ফজিলত অশেষ ।
হাদীস শরীফে আছে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন ----
طوبا ليماي أعمال في الليل نصفي من شعبانة خيران
উচ্চারণঃ “তুবা লিমাই ইয়া’মালু ফি লাইলাতিন নিসফি মিন
শা’বানা খাইরান”
অর্থঃ যারা শাবান মাসের ১৫ তারিখে রাত্রিতে ইবাদত করবে
তাদের সৌভাগ্য তাদের জন্যই সন্তোষ জনক ।
অন্য একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ বলেছেন ----
رجل شامة ياما خميسة أشارا من شعبان لام تاماسياهون نارو عبادان
উচ্চারণঃ “মান ছামা ইয়াওমা খামিসা আশারা মিন শাবান লাম
তামাস্যাহুন নারু আবাদান”
অর্থঃ যে ব্যক্তি শাবান মাসের ১৫ তারিখে রোজা রাখবে
দোযখের আগুন তাকে স্পর্শ করতে পারবে না ।
নামাজের নিয়মঃ এই রাতে নির্দৃষ্ট সংখ্যায় কোন নফল নামাজ
নেই । তবে এড়াতে দু'রাকাত করে কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ পড়ার কথা উল্লেখ ।
প্রত্যেক রাকাত নামাজে সূরা ফাতিহার পর সূরা কদর একবার
ও সূরা এখলাছ ২৫ বার পড়তে হয় । অথবা সূরা ফাতিহার পর আয়াতুল কুরসি একবার ও সূরা
এখলাছ ২৫ বার পড়া যায় । যদি সূরা এখলাছ ২৫ বার পড়তে কেউ অক্ষম হয় তাহলে ৩ বার সূরা
ইখলাস পড়লেও হয় ।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত
শবে বরাতের রাত্রে গোসল করে এশার নামাজ আদায় করবেন
। তারপর দুই রাকাত সুন্নতের পর যে যত রাকাত নামাজ পড়তে পারেন তাতে কোন বাধা-নিষেধ
নেই । দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়বেন । নামাজের নিয়ত নিচে দেওয়া হলো ----
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাক’আতাই
ছালাতি লাইলাতিল বারাআতি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার
।
অর্থঃ আমি দুই রাকাত লাইলাতুল বরাতের নামাজ আদায় করিবার
জন্য কেবলা মুখী হয়ে নিয়ত করিলাম । আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ।
শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস
|| হযরত আবু বক্কার সিদ্দিক (রাঃ) বলেন নবী করিম বলেছেন
----
“হে লোক সকল! তোমরা শাবান মাসের ১৫ তারিখে রাত জাগিয়া
এবাদত করো । ওই রাতে খুবই পবিত্র মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদেরকে বলেন: তোমাদের
মধ্য কেউ প্রার্থনা করার আছে কি? আজকে আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব । রাসুলুল্লাহ
বলেছেন এই রাত্রে মহান আল্লাহ তা’আলা সকলের গুনা মাফ করিবেন । কিন্তু আট (৮) শ্রেণীর
লোকের গুনাহ মাফ করিবেন না । যারা জাদুকর, গণক, বখিল, সুদখোর, জেনাকার, নেশাখোর, পিতা
মাতার প্রতি দুর্ব্যবহার করে এবং জেনাকারিনী ।
|| হাদিছে আছে এক সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সিজদা পড়িয়া কাঁদছেন । তখন হযরত আয়েশা (রাঃ) এসে পাশে দাঁড়ালেন । তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: তুমি কি জানো আজকে কোন রাত্রি? ইহা সাবানের ১৫ই রাত । এই রাত্রে মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবার রাত্রি । যাও আজকে যত পারো মহান আল্লাহর কাছ থেকে আদায় করে নাও ।
এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।
আরও পড়ুনঃ রোজা কি | রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ