হিজরী সনের সূচনা ও আশুরায় করণীয়

হিজরী সনের সূচনা ও আশুরায় করণীয় - মুসলিম উম্মাহর কৃষ্টি সংস্কৃতি ও মুসলিম জীবনে হিজরি সনের গুরুত্ব অপরিসীম । ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, আনন্দ-উৎসব সহ সবক্ষেত্রেই মুসলিম উম্মাহ হিজরি সনের উপর নির্ভরশীল । আর হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমে অনুষ্ঠিত আশুরার রয়েছে আলাদা মর্যাদা ও তাৎপর্য । তাই আজ আপনাদের জন্য হিজরী সনের সূচনা ও আশুরায় করণীয় সম্পর্কে এ লেখা ।

আরও পড়ুনঃ হতাশা থেকে মুক্তির উপায় ইসলাম | হতাশা থেকে মুক্তির উপায় কি

হিজরী সনের সূচনা ও আশুরায় করণীয়

আরও পড়ুনঃ হযরত ওমর রাঃ এর শাহাদাত | হযরত ওমর রাঃ

হিজরী সন

হিজরী হল ইসলাম ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি প্রতিপালনের জন্য ব্যবহৃত চন্দ্র ভিত্তিক ধর্মীয় পঞ্জিকা বিশেষ । হিজরী সন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের - এর হিজরতের ১৭ বছর পর দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) - এর নির্দেশে তারিখ থেকে চালু করা হয় । এ হিসাবে প্রথম হিজরী সন গণনা শুরু হয় ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ।

হিজরী সনের সূচনা

প্রাচীন আরবে সুনির্দিষ্ট কোনো গণনা প্রথা প্রচলিত ছিল না । বিশেষ ঘটনার নামে সাধারণত বছরগুলোর নামকরণ (যেমন : বিদায়ের বছর, অনুমতির বছর, হস্তীর বছর ইত্যাদি) করা হতো । এছাড়াও অর্থব্যবস্থা পরিচালনা সুসংহতকরণে নথিপত্র প্রস্তুত ও কর ধার্য করার পর আদায়ের তারিখ নির্দিষ্ট করা নিয়ে হযরত ওমর (রাঃ) বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হন । উপরন্তু দলিলপত্রে তারিখ উল্লেখ না থাকায় নানা ধরনের অসুবিধার সৃষ্টি হয় । এসব সমস্যা দূরীকরণেই হিজরী সন গণনার সূচনা হয় ।

হিজরি সনের গুরুত্ব

জীবনকে সহজ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করার জন্য এ পৃথিবীতে মহান আল্লাহ তায়ালা সকল কিছুই সুনির্ধারিত করে দিয়েছেন । এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজেই আরবি ১২ মাসের নাম সমুহ নির্ধারণ করে দেন ।

এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনের সূরা তাওবার ৩৬ নং আয়াতে এরশাদ করেন,

“নিশ্চয়ই পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কিতাবে (শরীয়তের বিধান ও গণনায়) মাস বারোটি । তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত । ইহাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান” । উক্ত আয়াতে উল্লেখিত সম্মানিত চারটি মাস হল --- মহররম, রজব, জিলকদ জিলহজ ।

সুরা বাকারার ১৮৯ নং আয়াতে আল্লাহ পাক আরো বলেন, “তারা আপনাকে চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলুন - এ হলো মানুষ এবং হজের জন্য সময় নির্ধারক” । এ আয়াত থেকে স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের হিসাব - নিকাশের সুবিধার্থে পঞ্জিকা স্বরূপ চন্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন ।

এজন্য চন্দ্র মাস তথা হিজরি সনের গুরুত্ব অপরিসীম । রমজানের রোজা, দুই ঈদ, হজ ও জাকাত চন্দ্রবর্ষ বা হিজরী সন ধরেই আমল করতে হয় ।

আশুরা

আশুরা আরবি শব্দ আশারা থেকে এসেছে, যার অর্থ দশম বা দশমী । মহররম মাসের ১০ তারিখকে পবিত্র আশুরা বলা হয় । সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পৃথিবীতে আগমন পর্যন্ত বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এ আশুরার দিনে । হযরত মূসা আলাইহিস সালাম- এর নীল দরিয়া পাড়ি এবং ফেরাউনের সদলবলে ডুবে মরা আশুরার দিনের অন্যতম প্রধান ঘটনা ।

আশুরা ও কারবালা

৬৮০ খ্রিস্টাব্দে, হিজরী ৬১ সনের ১০ মহররম ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে সংঘটিত হয় মানব ইতিহাসের নির্মমতম হৃদয়বিদারক ঘটনা । এদিন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের - প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, ফাতেমা দুলাল ও চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রাঃ) - এর পুত্র ইমাম হোসাইন (রা) সপরিবারে দামেস্কের অধিপতি ইয়াজিদের দুর্ধর্ষ বাহিনীর হাতে শাহাদত বরণ করেন ।

আশুরায় করণীয়

প্রতিটি ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার অন্যতম দুটি শর্ত রয়েছে –

১.আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত করা এবং

২. রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণিত পথ ও পন্থা অনুসারে তা হওয়া ।

আশুরার রোজা রাখা ছাড়া অন্য কোন রীতিনীতি, সংস্কৃতিও ইবাদত ইসলাম অনুমোদন করে না । তাই মহররম মাসের ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ তারিখে দুটি রোজা রাখার মাধ্যমেই আশুরার দিনটিকে পালন করা উত্তম । এ রোজা রাখা সুন্নত । আশুরার আমলর সাথে কারবালার ঘটনার কোন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্ক নেই ।

আরবি ১২ মাসের নাম

  1. মহরম 
  2. সফর 
  3. রবিউল আউয়াল 
  4. রবিউস সানি 
  5. জমাদিউল আউয়াল 
  6. জমাদিউস সানি 
  7. রজব 
  8. সাবান 
  9. রমজান 
  10. শাওয়াল 
  11. জিলকদ
  12.  জিলহজ ।

আরবি ভাষায় সাতদিন

** ইয়াওমুস সাবাত – শনিবার

** ইয়াওমুল আহাদ - রবিবার

** ইয়াওমুল ইসনাইন - সোমবার

** ইয়াওমুছ ছালাছা - মঙ্গলবার

** ইয়াওমুল আরবিআ - বুধবার

** ইয়াওমুল খামিস - বৃহস্পতিবার

** ইয়াওমুল জুম্মাআ - শুক্রবার

হিজরী সনের উল্লেখযোগ্য কিছু তারিখ

** ১ মহররম : আরবি নববর্ষ

** ১০ মহররম : আশুরা

** ১২ রবিউল আউয়াল : মিলাদুন্নবী

** ২৭ রজব : শব ই মেরাজ

** ১৫ শাবান : শব-ই-বরাত

** ২৭ রমজান : শব ই কদর

** ১ শাওয়াল : ঈদ-উল-ফিতর

** ৮ - ১৩ জিলহজ : পবিত্র হজ

** ১০ জিলহজ : ঈদ উল আযহা ।


এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


আরও পড়ুনঃ হযরত হুসাইন রাঃ এর শাহাদাত

Previous Post Next Post