পদ্মা নদীর মাঝি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় | বুক রিভিউ
- পদ্মা নদীর মাঝি এর লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি
কথাসাহিত্যিক । তার প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় । ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে সর্বাধিক পঠিত, আলোচিত ও জনপ্রিয় একটি উপন্যাস হচ্ছে পদ্মা
নদীর মাঝি । আজকের বুক রিভিউতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর পদ্মা নদীর মাঝি নিয়ে আলোচনা
করবো ।
আরও পড়ুনঃ লালসালু - সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ | বুক রিভিউ
আরও পড়ুনঃ চিলেকোঠার সেপাই - আখতারুজ্জামান ইলিয়াস | বুক রিভিউ
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত এই উপন্যাসটি ভারতীয় তৎকালীন পত্রিকা পূর্বাশাতে ১৯৩৪ সালে নিয়মিত প্রকাশিত হয় এবং এই উপন্যাসটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে । এই উপন্যাসটি বিশ্বের অনেক ভাষায় অনূদিত হয় । ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথভাবে বাংলা ভাষায় “পদ্মা নদীর মাঝি” নিয়ে একটি চলচিত্র নির্মিত হয় এবং এই চলচিত্রটি অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে ।
পদ্মা নদীর মাঝি
বন্ধুরা,
আজকের ব্লগ পোস্টে যে বইটির রিভিউ করবো সেই বইটির নাম “পদ্মা নদীর মাঝি” । এই
উপন্যাসের লেখক বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় । এই
উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশীত হয় ১৯৩৬ সালে । তাহলে পদ্মা নদীর মাঝি - মানিক
বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক ।
পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাস এর মূলভাব
উপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সর্বাধিক পঠিত এবং
বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত জনপ্রিয় উপন্যাস “পদ্মা নদীর মাঝি” । এই উপন্যাসের পটভূমি বাংলাদেশের
বিক্রমপুর-ফরিদপুর এলাকা ।
পদ্মা নদী এবং এর তীরবর্তী কেতুপুর গ্রামের জেলে মাঝিদের
বাস্তব জীবনকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের কাহিনী গড়ে উঠেছে । ঘনবসতি জেলেপাড়ার মাঝি ও
জেলেদের জীবনের সুখ-দুঃখ হাসি-কান্না অভাব-অভিযোগ নিপুণতার সাথে চিত্রিত হয়েছে ।
তাদের প্রতিটি দিন কাটে দীনহীন অসহায় আর ক্ষুধা দারিদ্র্যের
সাথে লড়াই করে । দু'বেলা দু'মুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটাই যেন তাদের জীবনের পরম আরাধ্য
। এটুকু পেলেই তারা খুশি ।
পদ্মা নদীর মাঝি বাংলা সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক
উপন্যাস । এ উপন্যাসের আঙ্গিক গঠন, রচনাশৈলী, পাত্র-পাত্রীদের মুখে আরোপিত ভাষা, জীবনাচরণ,
সংস্কৃতি-এ সবই আঞ্চলিক উপন্যাসের পরিচয়বাহী ।
১৯৩৪ সাল থেকে উপন্যাসটি পূর্বাশা পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে
প্রকাশিত হতে থাকে এবং ১৯৩৬ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । প্রকাশিত হওয়ার পর এটি
ভারতীয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি ভাষায় অনূদিত হওয়ার গৌরব লাভ করে ।
ভারতের একাধিক প্রদেশের প্রাদেশিক ভাষা ইংরেজি, চেক,
হাঙ্গেরীয়ান,
রুশ, লিথুয়ানিয়ান, নরওয়েজিয়ান ও সুইডিশ ভাষায় এ উপন্যাস প্রকাশিত হয় ।
আরেক ফাল্গুন উপন্যাস pdf
বন্ধুরা, আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা “পদ্মা নদীর মাঝি
উপন্যাস pdf” খোঁজ করে থাকেন । আপনাদের সুবিধার্তে এখানে পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাস এর
pdf ফাইলটি দেওয়া হলো । এখান থেকে উপন্যাসটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন ।
পদ্মা নদীর মাঝি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় |
পদ্মা নদীর মাঝি লেখক পরিচিতি
লেখকের নামঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ।
জন্মঃ ১৯ মে ১৯০৮; বিহার জেলার সাঁওতাল পরগনার দুমকা
গ্রামে ।
মৃত্যুঃ ৩ ডিসেম্বর ১৯৫৬ ।
উপন্যাসঃ জননী (১৯৩৫), দিবারাত্রির কাব্য (১৯৩৫), পুতুল
নাচের ইতিকথা (১৯৩৬), পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৩৬), শহরতলী (১৯৪০-৪১), অহিংসা (১৯৪১), শহরবাসের
ইতিকথা (১৯৪৬), চতুষ্কোণ (১৯৪৮), জীয়ন্ত (১৯৫০), সোনার চেয়ে দামি (১৯৫১), চিহ্ন (১৯৪৭),
স্বাধীনতার স্বাদ (১৯৫১), ইতিকথার পরের কথা (১৯৫২), আরোগ্য (১৯৫৩), প্রভৃতি
গল্পঃ অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প (১৯৩৫), প্রাগৈতিহাসিক
(১৯৩৭), মিহি ও মোটা কাহিনী (১৯৩৮), সরীসৃপ (১৯৩৯), বৌ (১৯৪৩), সমুদ্রের স্বাদ (১৯৪৩),
ভেজাল (১৯৪৪), হলুদ পোড়া (১৯৪৫), আজ কাল পরশুর গল্প (১৯৪৬), মাটির মাশুল, ছোট-বড়
(১৯৪৮), ছোট বকুলপুরের যাত্রী (১৯৪৯), শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৫০), ফেরিওয়ালা (১৯৫৩), উত্তরকালে
গল্প সংগ্রহ ।
প্রবন্ধঃ লেখকের কথা ।
পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের সারাংশ
পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ও নায়ক
কুবের । সে পদ্মানদীর সহায়-সম্বলহীন, নিঃস্ব-ভাগ্যহত মাঝি, প্রতিনিয়তই অভাব-অনটন
এর সাথে লড়াই করে তাকে বেঁচে থাকতে হয় ।
পদ্মাতীরের অজ পাড়াগাঁ কেতুপুরের বাসিন্দা কুবের একদিকে
যেমন পঙ্গু মালার স্বামী, অন্যদিকে সে তার সন্তানের স্নেহময় পিতা । নদীতে সে তার সঙ্গী-সাথীদের
নিয়ে মাছ ধরে, বিশেষত ইলিশ মাছ ধরে সে জীবিকা নির্বাহ করে । একেবারে নিম্নবিত্ত ও
নিম্নতম পর্যায়ের মানুষ কুবের ।
সহজ সরল হওয়ায় তাকে অনেকেই ঠকায় । তার মাঝেও আছে
স্বাভাবিক দোষ-গুণ ও কামনা-বাসনা । একসময় কপিলার প্রতি সে আদিম আকর্ষণ অনুভব করে ।
ঔপন্যাসিক মূলত কুবেরকে কেন্দ্র করে বাকি চরিত্রগুলো
অঙ্কন করেছেন । এ উপন্যাসের নায়িকা কপিলা চতুর, চপল ও উপস্থিত বুদ্ধি সম্পন্ন এক যুবতী
। তার আচরণের মধ্যে কিছুটা আদিম ও অসংস্কৃত মনের পরিচয় লক্ষণীয় । যা সমাজের চোখে
অনেকটাই নিন্দনীয় । ব্যক্তিগত পরিচয় সে মালার বোন, সাংসারিক পরিচয় সে শ্যামদাসের
স্ত্রী ।
উপন্যাসের রহস্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রধান চরিত্র
হোসেন মিয়া । নোয়াখালীর এই লোকটি বহুদর্শী ও বহু অভিজ্ঞ এক ব্যক্তি । পদ্মার তীর
সংলগ্ন মাঝিপ্রধান গ্রামগুলোর অসহায় মাঝিদের মাঝে প্রায়ই সে সেবকরূপে আবির্ভূত হয়
। তবে তার এ সেবা কর্মের পেছনে রয়েছে এক গভীর দুরভিসন্ধি ।
সমুদ্রের বুকে হোসেন মিয়া একটি দ্বীপের পত্তন নিয়েছিল
। নাম তার ময়নাদ্বীপ । বিভিন্ন এলাকা থেকে দরিদ্র মানুষদের নিয়ে ময়নাদ্বীপে লোক
বসতি গড়ে তুলেছিল সে । এই ময়না দ্বীপকে ঘিরে হোসেন মিয়ার সব স্বপ্ন ।
কুবের একসময় ঘটি ও টাকা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে
জেল খাটার ভয়ে হোসেন মিয়ার কাছে অসহায় ভাবে আত্মসমর্পণ করে । এক অসংস্কৃত, আদিম
ও নিষিদ্ধ ভালোবাসার প্রতি আকৃষ্ট কুবের কপিলাকে নিয়ে চিরকালের জন্য চলে যায় হোসেন
মিয়ার ময়নাদ্বীপে ।
এ উপন্যাসে আরও রয়েছে রাসু, ধনঞ্জয়, শীতল বাবু, পীতম
মাঝি, গোপী, মালা, গণেশ, আমিনুদ্দি, রসুল, ফতেমা, প্রভৃতি চরিত্র । এ সকল চরিত্রের
সমন্বয়ে এ উপন্যাসটিতে একটি সার্থক সমাজচিত্র অংকন এর কৃতিত্ব দেখিয়েছেন ঔপন্যাসিক
।
পদ্মা নদীর মাঝি FAQ
প্রশ্নঃ “পদ্মা নদীর মাঝি” কার লেখা উপন্যাস?
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ।
প্রশ্নঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পদ্মা নদীর মাঝি” উপন্যাসের উপজীব্য কি?
উত্তরঃ জেলে জীবনের বিচিত্র সুখ-দুঃখ ।
প্রশ্নঃ “পদ্মা নদীর মাঝি” উপন্যাসের প্রকাশকাল কোনটি?
উত্তরঃ ১৯৩৬ সাল ।
প্রশ্নঃ “পদ্মা নদীর মাঝি” উপন্যাসের নায়ক কে?
উত্তরঃ কুবের ।
এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।