লিভার ভালো রাখার উপায়
কি | লিভার ভালো রাখার উপায় - লিভার মানবদেহের সবথেকে বড় গ্রন্থি । দেহ প্রক্রিয়ায়
যতগুলো কাজ হয় তার সবগুলোর সঙ্গে লিভার জড়িত । তাই সুস্থ থাকার জন্য লিভারের যত্ন
নেওয়া প্রয়োজন । লিভারকে ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে ভালো পুষ্টি । লিভারের কোন
রোগ বা সমস্যা থাকলে সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি ।
আরও পড়ুনঃ শরীরের ওজন বৃদ্ধি করার সহজ উপায় | ওজন বাড়ানোর উপায়
আরও পড়ুনঃ টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
বন্ধুরা, আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব লিভার ভালো রাখার উপায় কি বা লিভার ভালো রাখার উপায় সমূহ । আপনার লিভার যদি ভাল রাখতে চান, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন এবং প্রতিটি কথা মেনে চলতে চেষ্টা করুন । তাহলে আপনার লিভারকে ভালো রাখতে পারবেন ।
লিভার কি?
লিভার আমাদের মানব দেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ । যার কাজ হলো দেহে প্রবেশ করা টক্সিন বা বিষ বর্জ্যে রূপান্তরিত করা । যে বর্জ্য পরে মল ও মুত্রের সঙ্গে বের হয়ে আসে । আর এটা খুবই জরুরী একটি কাজ । কেননা খাদ্যের সঙ্গে আমাদের দেহে প্রচুর পরিমাণ টক্সিন প্রবেশ করে ।
তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে
সঙ্গে লিভারের কর্মক্ষমতা কমে আসতে থাকে অথবা কোন ভাইরাস রোগের কারণে লিভারের কার্যক্ষমতা
কমে আসে । ফলে দেহ থেকে যথাযথ ভাবে টক্সিন বের করে দেওয়ায় অক্ষম হয়ে পড়ে সেটি ।
ফ্যাটি লিভার কি?
ক্ষতিকর টক্সিনগুলো চর্বি
হিসাবে জমা হয় লিভারে । অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে ফ্যাটি লিভার রোগের সৃষ্টি হতে পারে
। লিভার প্রাকৃতিকভাবেই একটি চর্বিবহুল অঙ্গ, আর লিভারের সব সময় কিছু না কিছু চর্বি
থাকা উচিত ।
ফ্যাটি লিভার রোগ হয়
তখনই যখন লিভারের চর্বি এর নিজের মোট ওজনের ৫% থেকে ১০% বেশি হয় । যখনই আপনার লিভার
টক্সিন নিঃসরণে ভালোমতো কাজ করবে না তখন আপনি ওজন কমানোর জন্য যতই কম ক্যালোরি খান
না কেন বা যতই বেশি শরীর চর্চা করেন না কেন তাতে কোন কাজ হবে না ।
লিভার রোগের লক্ষণ
লিভারে চর্বি হজমের কাজ
করে । আর যখন এটি ঠিকমতো কাজ করবে না তখন চর্বিগুলো অন্ত্র থেকে ফিরে এসে জমা হবে ।
আসুন জেনে নেওয়া যাক লিভার ভালো না থাকার শীর্ষ লক্ষণ গুলো কি কি ---
অকারনে ওজন বেড়ে যাওয়া
লিভার যেহেতু চর্বি হজমের
জন্য প্রধানত দায়ী সেহেতু এটি যথাযথভাবে কাজ না করলে দেহে চর্বি জমতে থাকে । যার ফলে
ব্যাখ্যাতীত ভাবে অকারণে ওজন বাড়তে থাকে ।
দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস
মুখের স্বাস্থ্য ভালো
থাকার পরেও যদি আপনার নিঃশ্বাসের সঙ্গে দুর্গন্ধ বের হয় তাহলে বুঝবেন যে আপনার লিভারে
কোন সমস্যা আছে । লিভার এর স্বাস্থ্য ভালো না থাকার একটি লক্ষণ এটি ।
ক্রমাগত অবসাদ
দেহে টক্সিন জমা হলে তা
মাংসপেশির টিস্যুর বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে । যা থেকে আবার ব্যথা এবং
শারীরিক অবসাদও সৃষ্টি হতে পারে । ক্লান্তি থেকে মেজাজ খিটখিটে হওয়া, মানসিক অবসাদ
এবং ক্ষোভের বিস্ফোরণ এর মতো সমস্যাও তৈরি হতে পারে ।
লিভার ভালো না থাকার শীর্ষ
লক্ষণ গুলির একটি এটি । দেহে অতি উচ্চ মাত্রায় টক্সিন বা বিষ জমা হওয়ারও একটি লক্ষণ
এটি ।
অতিরিক্ত ঘাম বের হওয়া
বেশি বেশি কাজ করার কারণে
লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং সেটি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । তখন লিভার দেহের অন্যান্য
অঙ্গের তাপ ছড়িয়ে দেয় এবং অতিরিক্ত ঘাম বের করার মাধ্যমে লিভার নিজেকে ঠান্ডা করে
।
এলার্জি
লিভার ভালো থাকলে তা এমন
সব এন্টিবডি তৈরি করে যেগুলো অ্যালারজেন বা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান গুলোকে আক্রমণ
করে ধ্বংস করে । কিন্তু লিভারের কার্যক্ষমতা কমে গেলে দেহ ওই অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী
উপাদান গুলোকে জমা করতে থাকে ।
এর প্রতিক্রিয়ায় আবার
দেহ হিস্টামিন উপাদান উৎপাদন করতে থাকে যা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান গুলো দূর করতে
সাহায্য করে । কিন্তু অতিরিক্ত হিস্টামিন উৎপাদন হলে আবার চুলকানি, ঝিমুনি এবং মাথাব্যথা
হতে পারে ।
ব্রণ
লিভারে জমা হওয়ার টক্সিন
দেহে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে । যা থেকে ত্বকে ব্রণ সৃষ্টি হতে পারে । কার্য
ক্ষমতা হারানো লিভারের কারণে সৃষ্ট ত্বকের এই সমস্যা ততক্ষণ পর্যন্ত যাবে না, যতক্ষণ
না পুনরায় চিকিৎসার মাধ্যমে লিভারের কার্যক্ষমতার উন্নতি ঘটানো হবে ।
আরও পড়ুনঃ
- অতিরিক্ত ওজন কমানোর সহজ উপায় | Easy Way to Lose Excess Weight
- গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা | গ্রিন টি বিস্তারিত
- কাজু বাদামের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
লিভার ভালো রাখার উপায়
তবে যাদের লিভার সুস্থ
আছে, তারা কিছু খাবার নিয়মিত খেলে রোগ ব্যাধি অঙ্গটি থেকে দূরে থাকবে । যেমন ---
লেবুর গরম পানি
ভিটামিন সি গ্লুটেথিয়ন
নামক যে এনজাইম উৎপন্ন করে, তা লিভারের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে লিভার পরিষ্কার রাখতে
সহায়তা করে । এই উপাদানটি বেশি পাওয়া যায় কুসুম গরম পানিতে যদি লেবু চিপে খাওয়া যায়
। এতে লিভারে অনেক বেশি এনজাইম উৎপাদনে সহায়তা করে ।
তাই প্রতিদিন সকালে ঘুম
থেকে উঠে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিসহ লেবু পানি পান করুন । এতে করে লিভার পরিষ্কার থাকবে
এবং আপনিও সুস্থ থাকবেন ।
গ্রিন টি
গ্রিন টি এর এন্টিঅক্সিডেন্ট
আমাদের দেহে ফ্রী সার্জিকেল টক্সিসিটি দূর করে এবং আমাদের লিভার পরিষ্কার রাখতে সহায়তা
করে । প্রতিদিন ১ থেকে ২ কাপ গ্রিন টি পান করার ফলে লিভারে জমে থাকা টক্সিন দূর হয়ে
যায় এবং পুরো দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে সক্ষম হয় ।
রসুন
রসুনে রয়েছে সালফার এর
উপাদান যা লিভারের এনজাইমের সঠিক কাজে সহায়তা করে । এছাড়া রয়েছে অ্যালিসিন ও সেলেনিয়াম
যা লিভার পরিষ্কার এর পাশাপাশি লিভারের সুস্থতা নিশ্চিত করে ।
হলুদ
লিভারের সবথেকে পছন্দের
খাদ্য উপাদান হলুদ । হলুদ একটি নিরাময় ঔষধ হিসেবে বিবেচিত । এটি লিভারের ডিটক্স এর
পরিমাণ বৃদ্ধি করে, লিভারকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে । ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
সেই সঙ্গে আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি এর জন্য ব্যবহার করা হয় হলুদ ।
আপেল
পেকটিন নামক এক প্রকার
উপাদান রয়েছে আপেলে । যা শরীরের খারাপ উপাদানগুলো দূর করে ও পরিপাকতন্ত্রকে টক্সিনমুক্ত
করে । লিভারকেও টক্সিন মুক্ত করার কারণে লিভার সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারে ।
সবুজ শাকসবজি
লিভারকে পরিষ্কার ও সক্রিয়
রাখার ক্ষেত্রে সবথেকে ভালো খাবার হলো সবুজ শাকসবজি । সবুজ শাক রান্না করে ও জুস করে
খেতে পারেন । এতে রক্তে টক্সিনমুক্ত রাখার উপাদান রয়েছে ।
লিভার কি কলিজা
লিভার এর বাংলা হলো যকৃৎ
। এটি মানব দেহ ও অন্যান্য বেশ কিছু প্রাণীর দেহের মধ্যকার একটি অঙ্গ বিশেষ । মানুষের
দেহের মধ্যচ্ছদার নিচে পেটের উপরে পাকস্থলীর ডান পাশে লিভারের অবস্থান । এই লিভার/যকৃৎকে
চলতি বাংলা ভাষায় সচরাচর কলিজা বলে উল্লেখ
করা হয় ।
লিভার রোগের কারন
লিভারের বিভিন্ন ধরনের
রোগের মধ্যে হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস, ফ্যাটি লিভার ডিজিজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।
লিভারের রোগগুলোর মধ্যে যেসব কারণগুলোকে দায়ী করা হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো
---
👉 দেরি করে ঘুমাতে যাওয়া,
👉 ঘুম থেকে দেরিতে ওঠা,
👉 সকালবেলা প্রস্রাব না
করা,
👉 সকালের নাশতা না করা,
👉 বেশি বেশি ভাজাপোড়া জাতীয়
খাবার খাওয়া,
👉 বেশি বেশি চর্বি-জাতীয়
খাবার খাওয়া,
👉 বেশি পরিমান অ্যালকোহল
জাতীয় পানীয় পান করা ইত্যাদি ।
সঠিক নিয়মে চললে এবং সঠিক খাদ্য নির্বাচন করে গ্রহণ করলেই লিভারকে সুস্থ রাখা যায় ।
এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।