রোজা কি | রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ

রোজা কি | রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ - রোজা ইসলাম ধর্মের তৃতীয় রুকুন বা ভিত্তি বা স্তম্ভ । রোজা মহান আল্লাহ তা’আলা মানুষের ধৈর্যের শিক্ষাদান ও আত্মার বিভিন্ন রিপু দমন করার জন্য ফরজ করেছেন । এই রোজা প্রত্যেক জ্ঞান সম্পন্ন বয়স্ক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ করা হয়েছে । 

এই রোজা ইসলাম ধর্মের তৃতীয় রুকুন বা ভিত্তি, সেই কারণেই রোজাকে অস্বীকার করার কোন উপায় বা কারণ নেই । চলুন তবে জেনে নিই রোজা কি ও রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ ।

আরও পড়ুনঃ অজু ভঙ্গের কারণ কয়টি | কি কি কারণে অযু ভঙ্গ হয়

রোজা কি | রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ

আরও পড়ুনঃ মহান আল্লাহর ৯৯টি নাম ও তার অর্থ

বন্ধুরা, আজকের ব্লগপোস্টে রোজা কি এবং রোজা ভঙ্গের কারণ সমুহ সম্পর্কে আলোচনা করব । আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা রোজা সম্পর্কে জানতে চান । আর সেই কারনে রোজা নিয়ে আজকের বিশেষ আলেচনা । আশা করি আজকের এই আর্টিকেল আপনাদের ভালো লাগবে ।

রোজা কি?

শুরুতেই আমরা জেনেছি রোজা ইসলামের তৃতীয় রুকুন বা ভিত্তি বা স্তম্ভ । এই রোজা প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম নর-নারীর প্রতি ফরজ করেছেন । মহান আল্লাহ তায়ালা তার কিতাব কোরআন পাকে এরশাদ করেছেন ---

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী বান্দাদের উপর ফরজ করা হয়েছিল । ইহা এইজন্য করা হয়েছে যাতে তোমরা খোদাভীরুতা ও সাধুতা অবলম্বন করো।”

মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনের অন্য আরেকটি আয়াতে বলেছেন ---

“রমজান মাস এমন একটি মাস, যে মাসের মধ্যে পবিত্র কোরআন শরিফ নাযিল করা হয়েছে । এই পবিত্র কিতাব মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক এবং সত্য পথ প্রদর্শনের ও সত্য-মিথ্যার প্রভেদ করার স্পষ্ট নিদর্শন । তোমাদের ভেতর যে কেহ রমজান মাস প্রাপ্ত হয়, সে যেন উহাতে রোজা রাখে । যে ব্যক্তি পীড়িত হয় কিংবা প্রবাসে (সফরে) থাকে, সেই ব্যক্তি যেন (ইফতারের দিবসগুলির) পরিমান (হিসাব করিয়া) পরবর্তী দিবসে রোজা রাখে।”

রোজা সম্পর্কে মহানবী রাসুল (সাঃ) বলেছেন ---

“আমার উম্মতদিগকে রমজান মাসে এমন পাঁচটি নেয়ামত দান করা হইয়াছে যাহা পূর্ববর্তী কোন উম্মতকে দান করা হয় নাই”।

মহানবী রসূল (সাঃ) রোজা সম্পর্কে যে পাঁচটি নেয়ামতের কথা বলেছেন এবং হাদীসে উল্লেখিত আছে সে পাঁচটি নেয়ামত নিম্নরূপ ---

নেয়ামত – ১: রোজাদারদের মুখের ঘ্রাণ মহান আল্লাহ পাকের নিকট মেশক বা কস্তুরীর চাইতেও অধিক সুগন্ধি বলে বিবেচিত ।

নেয়ামত – ২: রোজাদার ব্যক্তির প্রতি মহান আল্লাহ তাআলার আর একটি নেয়ামত এই যে, রোজাদার ব্যাক্তির পক্ষ হয়ে পানির মাছ মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে ।

নেয়ামত – ৩: মহান আল্লাহ তাআলার আরেকটি বিশেষ নিয়ামত এই যে, রোজার মাসে দৈনিক নতুন নতুন সাজে বেহেশতকে সাজানো হয় এবং মহান আল্লাহ পাক বেহেশতকে উদ্দেশ্য করে বলেন ---“আমার নেক বান্দাগণ পৃথিবীর দুঃখপূর্ণ জীবন শেষ করে তোমার বুকে স্থান নেওয়ার জন্য শীঘ্রই আসছে। ”

নেয়ামত – ৪: রমজান মাসে ইবলিশ শয়তানকে বন্দি করে রাখা হয় । এজন্য শয়তান অন্য মাসের মতো এই মাসে রোজাদারকে ধোকা ও বিভ্রান্ত করতে পারেনা ।

নেয়ামত – ৫: এই মাসের শেষ রাত্রিতে রোজাদার বান্দাগণের সমস্ত গুনাহ হতে ক্ষমা পাওয়ার কথা ঘোষণা করে দেওয়া হয় ।

রোজার নিয়ত

আরবিঃ ناويتو أن عشوما غدام من شهري رمضان المباركي فردلق يا الله فتاقبابال ميني إناكا أنتاس سميول عليم.

উচ্চারণঃ নাওআইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রামাদ্বানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বাব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলীম ।

বাংলা নিয়তঃ “মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামীকাল রোজা রাখার নিয়ত করছি। ”

ইফতারের দোয়া

আরবিঃ الله هوما تشمت لاكا وتوكلت على رزققة وافتارتو برماتيكا يا ارهمر رحيمين

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ছুমতু লাকা ওয়া তাওয়াক্কালতু আ’লা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন ।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য রোজা রেখেছি, আপনার উপর নির্ভর করেছি এবং আপনার দেওয়া রিযিক দিয়ে রোজা খুলছি ।

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ

আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ জানতে চান । যারা এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী তাদের জন্য নিচে রোজা কি কি কারণে ভঙ্গ হয় তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো ---

কারণ-১: স্বেচ্ছায় পানাহার, স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গম, ঔষধ ও তামাক আদি পান করলে রোজা ভঙ্গ হবে এবং এতে কাজা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে ।

কারণ-২: নাক-কানে এমনভাবে ঔষধ দেওয়া যাতে উহা পেটে বা মাথায় পৌঁছে যায় ।

কারণ-৩: পেট ও মাথার জখমে এরূপ ঔষধ লাগানো যাতে পেট ও মাথায় পৌঁছে যায় ।

কারণ-৪: অনিচ্ছাসত্ত্বেও কুলির পানি ভেতরে গেলে ।

কারণ-৫: স্বেচ্ছায় মুখভর্তি বমি করলে ।

কারণ-৬: কাঁকর জাতীয় ঘৃণিত বস্তু গিলে ফেললে ।

কারণ-৭: রাত্রি ভ্রমে প্রভাতে সেহরি খেলে ।

কারণ-৮: সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ইফতার করলে।

কারণ-৯: ভুলে আহার করতঃ রোজা ভেঙে গেছে ধারণায় পুনরায় পেট পুরে খেলে ।

কারণ-১০: জবরদস্তি করে কেউ খাওয়ালে ।

কারণ-১১: সারা রমজানে রোজার নিয়ত না করলে ।

কারণ-১২: গলায় বৃষ্টির পানি প্রবেশ করলে ।

কারণ-১৩: স্ত্রীকে চুম্বন বা স্পর্শ করার পানি বের হলে ।

বছরে যে ৫দিন রোজা রাখা হারাম

অনেকেই জানতে চান বছরের কোন কোন দিন রোজা রাখা হারাম । বছরে মূলত ৫দিন রোজা রাখা হারাম । সেগুলো হচ্ছে ---

১। ঈদুল ফিতরের দিন

২। ঈদুল আযহার দিন এবং উহার সংলগ্ন পরের তিনদিন ।


এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


আরও পড়ুনঃ হযরত হাসান রাঃ এর শাহাদাত | Martyrdom of Hazrat Hasan

Previous Post Next Post