ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় | Ways to Increase Skin Radiance

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় | Ways to Increase Skin Radiance - অনেকের ক্ষেত্রে অল্প বয়সে কপালে বলিরেখা পড়ে কিংবা চোখের নিচে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল পড়ে যেটা সহজে সারতে চায় না । এর পাশাপাশি ত্বকে আগের যে উজ্জলতা ছিল হঠাৎ দেখা যায় নষ্ট হয়ে গেছে বা মুখের ত্বক মলিন হয়ে যাচ্ছে কিংবা আগে ত্বকে যে গ্ল্যামারেজ ভাবটা ছিল সেটা দ্রুত কমে বা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।

এই সমস্যায় পড়লে অনেকেই কিন্তু বিভিন্ন প্রকার ক্রিম বা ঔষধ ট্রাই করে থাকেন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য । কিন্তু আসলে তাদের নজর দিতে হবে মূলত খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং চিন্তা মুক্ত জীবন যাপনের প্রতি ।

আরও পড়ুনঃ ছেলেদের চেহারা সুন্দর করার খাবার | ছেলেদের চেহারা ফর্সা করার উপায়

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়

আরও পড়ুনঃ ফেসিয়াল করার উপকারিতা ও পদ্ধতি | Facial benefits and procedures

আর এগুলো পুরুষ এবং মহিলা সবার ত্বকের জন্যই প্রযোজ্য এই বিষয়গুলো জানা এবং সুন্দর ও সুস্থ ত্বক মেইনটেইন করার জন্য খুবই প্রয়োজন । ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য সবার প্রথমে খাবারের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে । আজকের ব্লগ পোস্টে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা করবো । তাহলে চলুন জানি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় ---

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির খাবার

ত্বকের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় হিসাবে কি করতে হবে বা কোন ধরনের খাবার খেতে হবে? সেটা অনেকেই জানতে চান । আজকের আলোচনায় আপনাদের সাথে কিছু খাবারের কথা বলব যা ত্বককে উজ্জ্বল করতে, ব্রণ মুক্ত রাখতে এবং রোদে পোড়ার ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে ।

লাল রঙের ফল ও সবজি

লাল রঙের ফল ও সবজির মধ্যে রয়েছে টমেটো, তরমুজ, পাকা পেঁপে, লালশাক ও ডালিম বা বেদানা । এই ফলগুলোতে আছে লাইকোপিন নামে একটি উপাদান । যেটা খেলে শরীরের ইন্টার্নাল সান ব্লকার হিসেবে কাজ করে ।

রোদের আল্ট্রাভায়োলেট রেস স্কিন ড্যামেজের অন্যতম প্রধান একটি কারণ । এটি ত্বকে উজ্জ্বলতা কমায়, আমাদের কোলাজেন ড্যামেজ করে, ফলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমিয়ে দেয় । এর ফলে ত্বকের প্রিম্যাচিওর এইজিং হয় বা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যায় । তাই সুন্দর ও সুস্থ ত্বকের জন্য ত্বককে রোদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

লাল রং এর ফল ও সবজি, যেটা যে সিজনে পাওয়া যায় সেগুলো রেগুলার খেলে আমাদের ত্বকের রোদের ক্ষতি প্রতিরোধ করার ইন্টার্নাল ক্ষমতা বাড়বে । তাই লাল রং এর ফল ও সবজি বেশি করে খেতে হবে ।

টমেটো এর ক্ষেত্রে একটি টিপস । টমেটো রান্না করে খেলে আমাদের শরীর লাইকোপিন আরো বেশি করে শোসন করে । তাই তরকারিতে টমেটো দিয়ে খেলে যেমন বেশি উপকার পাওয়া যাবে তেমনি তরকারির স্বাদও বাড়বে ।

বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও বীজ

বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও বীজের মধ্যে রয়েছে কাঠ বাদাম, চিনাবাদাম, কাজুবাদাম । আর বীজ এর মধ্যে আছে তোকমা বীজ, তিসি বীজ, কুমড়া বীজ । এই বাদাম ও বীজ গুলোতে আছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ভিটামিন ই ।

প্রতিদিন এয়ার পলিউশন বা ধুলা-বালি থেকে ত্বকে ফ্রি রেডিক্যালস তৈরি হয় এবং ত্বকের অক্সিডেশন হয় যার কারণে ত্বকে ড্যামেজ হয়, ত্বক দেখতে নিস্তেজ-নিষ্প্রাণ লাগে এবং ত্বকে-চামড়ায় ভাঁজ পড়ে ।

ভিটামিন ই এই ফ্রিরেডিকেলস ধ্বংস করে ত্বককে অক্সিডেশন থেকে রক্ষা করে । বাদাম এবং বীজে আছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে অক্সিডেশন থেকে রক্ষা করে ।

বাদাম ও বীজে আরো আছে জিংক । জিংক আমাদের ত্বককে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সাথে ফাইট করতে সাহায্য করে । এর জন্য ত্বকে ব্রণ, লাল দাগ এবং ইনফ্লামেশন মুক্ত করতেও বাদাম এবং বীজ খাওয়া বেশ কার্যকর । আমরা খুব সাধারণভাবে এগুলো স্নাক্সে অ্যাড করতে পারি । এতে করে ত্বক ভালো থাকবে এবং বাড়তি পুষ্টি পাওয়া যাবে ।

বাদামের ক্ষেত্রে অনেক বেশি খাওয়া যাবে না । কারণ বাদামে অনেক হাই ক্যালরি থাকে । তাই দিনে এক মুঠো বা ৫ থেকে ১০ টি বাদাম খেতে পারেন । তোকমা দানা এবং তিসির বীজ ১ টেবিল চামচ দুধের সাথে বা জুসের সাথে বা ওঠস সাথে বা সালাদে দিয়েও খেতে পারেন ।

সবুজ রঙের ফল ও শাকসবজি

সবুজ রঙের ফল ও শাক-সবজি এর মধ্যে আছে পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, কাঁচামরিচ, ক্যাপসিকাম এবং সব ধরনের সবুজ শাক । এগুলোতে আছে ভালো পরিমাণ ভিটামিন সি যা আমাদের কোলাজেন প্রটেকশন বাড়াতে সাহায্য করে ।

কোলাজেন আমাদের শরীরের একটি প্রোটিন । এটি অনেকটা আঠার মতো কাজ করে । কোলাজেন আমাদের শরীরের একটি টিস্যু আর একটা টিস্যুকে একসাথে আটকে রাখতে সাহায্য করে । এতে স্কিন টাইট থাকে মানে চামড়া ঝুলে পড়ে না । স্কিনের ইলাস্টিসিটি বাড়ে । এক কথায় আমাদের স্কিন ইয়াং লুকিং রাখতে কোলাজেন খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

আর সবুজ ফল ও শাক সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এগুলো ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বকে দাগ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে ।

অন্য পোস্টঃ 

কমলা রঙের সবজি ও ফল

কমলা রঙের সবজি ও ফলের মধ্যে রয়েছে গাজর, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, পাকা আম । এগুলোতে আছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন এবং আছে যা দেয় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ।

ভিটামিন এ আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে । এছাড়া রোদের ক্ষতি থেকে সুরক্ষা করতেও সাহায্য করে । আর ভিটামিন এ এর অভাব হলে স্কিন ড্রাই হয়ে যায় এবং ত্বকে ব্রণ এর সমস্যা দেখা দেয় ।

অনেক ক্রিম এবং কসমেটিকস এর উপাদান এর লিস্ট ভিটামিন এ, ভিটামিন ই থাকে । এগুলো অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন । এর সুফল অল্প সময়ের জন্য ।

তবে লম্বা সময় ধরে এর সুফল পাওয়ার জন্য আমাদের খাবারের মাধ্যমে শরীরের ভেতর থেকে ট্রিটমেন্ট করতে হবে । এতে করে স্কিন টার্নওভার এর সময় মানে নতুন স্কিন তৈরির সময় ভেতর থেকে পরিবর্তন আসবে । এতে ত্বকের উজ্জলতা থাকবে দীর্ঘ্য সময় ধরে ।

ডাল, ডিম, মাছ, মুরগির মাংস

এই খাবারগুলোতে আছে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন, যা সুস্থ এবং সুন্দর ত্বক গঠনে প্রয়োজন । এছাড়াও এই খাবারগুলোতে আছে কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড । যা ভিটামিন সি এর পাশাপাশি কোলাজেন তৈরীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

বয়সের সাথে সাথে আমাদের শরীরের কোলাজেন প্রটেকশন কমে যায় । তাই কোলাজেন তৈরীর উপাদান গুলো খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরে নিয়মিত সাপ্লাই করা খুবই জরুরী ।

হাইড্রেশন

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ভালো ত্বকের জন্য খুবই দরকারি একটি উপাদান । আমাদের শরীর ডিহাইড্রেশন হলে ত্বকের কোমলতা কমে যায়, স্কিন ড্রাই হয়ে যায়, স্কিন দেখতে নিস্তেজ-নিষ্প্রাণ লাগে ।

এছাড়াও পানি আমাদের শরীরে খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করতে সাহায্য করে । পানি সেই সাথে অনেক ক্ষতিকারক কেমিক্যালসকে দূর করে এবং শরীরের ব্লাড সার্কুলেশন ঠিক রাখে । তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত প্রতিদিন ৬ - ৮ গ্লাস পানি পান করা ।

যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করার ফলে ত্বক সব সময় উজ্জ্বল থাকে । তাই আমাদের সবসময় পরিমান মত এবং নিয়মিত পানি পান করা উচিত ।

ত্বকের লাবণ্য বৃদ্ধির কিছু উপায়

** আমরা অনেকেই মুখ বারবার স্পর্শ করি । একটা কথা মনে রাখবেন, মুখের ত্বক বারবার টাচ করা যাবে না । কারণ আমাদের হাতে অনেক রোগ জীবানু থাকে যা ত্বকের অনেক ক্ষতি করে । মুখের ত্বকে হাত দেওয়ার দরকার হলে আগে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে ।

** আমরা যখন কাজে বা প্রয়োজনে বাইরে যাই তখন বাইরে থেকে ফিরে এলে সাবান বা ফেসিয়াল ক্লিনজার দিয়ে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে । যাতে মুখের ত্বকের ময়লা ও রোগ জীবাণু দূর হয়ে যায় । এর ফলে ত্বক থাকবে উজ্জ্বল এবং লাবণ্যময় ।

** ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা দরকার । কারণ ব্যায়াম করলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, যেটা ত্বকে অক্সিজেন এবং পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেয় ।

** প্রতি রাত্রে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম ত্বকের অনেক উপকার করে । ঘুমের সময় ত্বকে যে বিভিন্ন ড্যামেজ গুলো হয় সেগুলো রিপিয়ার হয় । ত্বকে কোলাজেন তৈরি হয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় ।

ঘুম কম হলে ত্বকের ব্লাড ফ্লো কমে যায়, এতে ত্বক মলিন ও নিস্তেজ দেখায় । তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে হলে নিয়মিত ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে ।

** অনেকেই পানি কম খান আর সে কারনে ত্বক নিস্তেজ ও নিষ্প্রান হয়ে পড়ে । তাই পানি পানের পরিমান বাড়াতে হবে । প্রতিদিন ৬-৮ গ্লাস পানি পানের চেষ্টা করুন ।

শেষ কথা

সুন্দর ত্বকের বিষয়ে একটি জিনিস নিশ্চিত, সেটা হচ্ছে আমরা যা খাই সেটার পুরোপুরি প্রভাব আমাদের ত্বকের উপর পড়ে । তবে কোনো খাবারই ত্বক রাতারাতি পরিবর্তন করে না । আমাদের ত্বকের পুরাতন কোষ ঝরে গিয়ে নতুন কোষ তৈরি হয় । তাই পুরাতন ত্বক থেকে নতুন ত্বকের লেয়ার বের হতে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মত সময় লাগে ।

তাই যে খাবার গুলোর কথা আলোচনা করেছি সেগুলোর মধ্য থেকে যেটা যখন পাওয়া যায় সেগুলো নিয়মিত খেলে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে ত্বকের সুন্দর পরিবর্তন দেখতে পাবেন ।


আরও পড়ুনঃ ব্রণ দূর করার ফেসপ্যাক | ব্রণ দূর করার উপায়

Previous Post Next Post