১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের ইতিহাস | দেশ ভাগের ইতিহাস (সংক্ষিপ্ত)
- ভারত এবং পাকিস্তান পাশাপাশি দুটি দেশ । এই দুটি দেশ বৃটিশ শাসন থেকে মুক্তি পায়
যথাক্রমে ১৪ এবং ১৫ আগষ্ট ১৯৪৭ সালে । ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে বিশ্ব
মানচিত্রে স্থান পায় ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি দেশ । যা এই দেশ ভাগের অতি সম্প্রতি
৭৫ বছর পূর্ণ হল ।
আরও পড়ুনঃ বাংলার নবাবী আমল | Nawab period of Bengal
আরও পড়ুনঃ ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস | বিভিন্ন ভাষায় নববর্ষের শুভেচ্ছা
আজকের ইতিহাস নিয়ে আলোচনায় ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের ইতিহাস | দেশ ভাগের ইতিহাস (সংক্ষিপ্ত) এর ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবো । অনেকেই দেশ ভাগের ইতিহাস অর্থাৎ ভারত এবং পাকিস্তান জন্মের ইতিহাস জানেন না । যারা জানেন না তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি অনেক উপকারে আসবে । তাহলে চলুন জেনে নিই ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের ইতিহাস সম্পর্কে ।
দেশ ভাগের ইতিহাস
ব্রিটিশ ভারতকে দুটি স্বাধীন অধিরাজ্য অর্থাৎ ভারত ও পাকিস্তানের বিভক্ত করার ঘটনায়দেশ বিভাজন বা দেশভাগ নামে পরিচিত । ব্রিটিশ শাসন অবসানের প্রাক্কালে তৎকালীন মুসলিম লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ হিন্দু ও মুসলিম জাতির ভিত্তিতে দ্বিজাতি তত্ত্বের উন্মেষ ঘটান ।
১৯৪৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের সম্মেলনে
“সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌম রাষ্ট্র” ধারণা সংশোধন করা হয় এবং দ্বিজাতি তত্বের ওপর ভিত্তি
করে একটি সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।
২২ - ২৩ মার্চ ১৯৪০ লাহোরে বাংলাসহ ভারতের একাধিক প্রদেশে
তার দ্বিজাতি তত্ত্বের চূড়ান্ত ব্যাখ্যা তুলে ধরেন । মুসলিম প্রধান বেলুচিস্থান, সিন্ধু,
উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে হবে পাকিস্তান ।
পাঞ্জাব ও বাংলায় যেহেতু মুসলিমদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা
ছিল না, সিদ্ধান্ত হলো এ দুটি প্রদেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে
।
১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন
১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন হল যুক্তরাজ্যের (ব্রিটিশ
সরকার) সংসদের একটি আইন, যার ফলে বিভক্ত ব্রিটিশ বৃহত্তর ভারত দুটি নতুন রাষ্ট্র ভারত
এবং পাকিস্তানে পরিণত হয়েছে । ১৯৪৭ সালের ১৮ই জুলাই এই আইনটি রাজকীয় সম্মতি পেয়েছিল,
এবং এইভাবে ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান (তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান, বর্তমান
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান) অঞ্চল তৈরি হয় ।
ভারতের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সংকট দূর করার লক্ষ্যে
৩ জুন ১৯৪৭ ব্রিটিশ সরকার ভারত বিভাগ পরিকল্পনা গ্রহণ করে । উক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী,
১৮ই জুলাই ১৯৪৭ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক ভারত স্বাধীনতা আইন পাশ করা হয় । আইনের
বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নরূপ ---
👉 বৃহত্তর ভারতকে বিভক্ত করে ভারতীয় এবং পাকিস্তান নামের
দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি করা হয় ।
👉 ভারত এবং পাকিস্তানের গণপরিষদ নিজ নিজ দেশের পক্ষে সংবিধান
রচনা করার ক্ষমতা লাভ করে ।
👉 রাষ্ট্রদুটি ব্রিটিশ কমনওয়েলথ ভুক্ত থাকবে কি না নিজ
নিজ দেশের গণপরিষদ তা নির্ধারণ করার অধিকার লাভ করে ।
👉 নতুন সংবিধান রচিত এবং প্রবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত উভয়
রাষ্ট্রকে নিম্নোক্ত বিধান গুলি মেনে চলতে হবে ।
- নিজ নিজ রাষ্ট্রের মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শক্রমে ব্রিটিশ রাজ গভর্নর জেনারেল নিয়োগ করবেন ।
- মন্ত্রিসভার পরামর্শক্রমে গভর্নর জেনারেল প্রাদেশিক গভর্নর নিয়োগ করবেন ।
- ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন এর সঙ্গে সঙ্গতি নেই এই অজুহাতে রাষ্ট্রদুটির কোনো আইন নাকচ করা যাবে না ।
র্যাডক্লিফ আইন
সিরিল র্যাডক্লিফ নামে একজন ব্রিটিশ আইনজীবীকে ভারত
উপমহাদেশের সীমানা নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয় । র্যাডক্লিফ আগে কখনোই ভারতে আসেন
নি । প্রথমবারের মতো ভারত এসে অর্পিত দায়িত্বের জন্যে মাত্র পাঁচ সপ্তাহ ছিলেন ।
এই অল্প সময়ে তিনি যে রেখাগুলো টানেন তা আধুনিক ইতিহাসের
বৃহত্তম জোরপূর্বক গণঅভিবাসনের সূচনা । পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত হয় প্রায় দেড় কোটি মানুষ
। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহত হয় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ
। দুই দেশের সীমারেখা টানার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণের পাশাপাশি র্যাডক্লিফকে মুসলিম
এবং হিন্দু জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর ভিত্তি করতে বলা হয় ।
ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলো ছাড়াও উপমহাদেশে ফরাসি,
পর্তুগিজ বা ওলন্দাজ শাসন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অন্য অনেক অঞ্চলের পাশাপাশি স্থানীয়
রাজাদের দ্বারা শাসিত সার্বভৌম দেশীয় রাজ্য ছিল । স্বাধীনতার পর ব্রিটিশরা স্বশাসিত
দেশগুলোকে দলিল স্বাক্ষরের মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানের যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেয় ।
এই অঞ্চলগুলো কয়েকটি এখন পর্যন্ত ভারত বা পাকিস্তানের
অংশ হয়ে ওঠেনি । এর মধ্যে অন্যতম কাশ্মীর, যেটি প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গে এখনো একীভূত
হয়নি, আবার রাজনৈতিক স্বাধীনতাও লাভ করেনি । সিরিল র্যাডক্লিফ এর নাম অনুসারে ৪,
৫০,০০০ বর্গ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সীমান্তরেখার নাম রাখা হয় “র্যাডক্লিফ আইন” ।
দেশ বিভাজন
যখন এই দেশ বিভাজন প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন প্রচুর সহিংসতা
ছড়িয়ে পড়ে ছিলো । হবু ভারত থেকে অনেক মুসলিম স্বাধীনভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে পাকিস্তান
পালিয়ে যায় এবং অনেক হিন্দু ও শিখ সম্প্রদয়ের মানুষ হবু পাকিস্তান থেকে ভারত পালিয়ে
যায় ।
দুই স্থানের অনেক নাগরিক সহিংসতা এড়াতে তাদের সমস্ত
স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ফেলে রেখে হবু দুই দেশে চলে যায় । আর এভাবেই ভারত ও পাকিস্তান
বিভাজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় ।
র্যাডক্লিফ ও ভারতের সীমানা |
দেশ ভাগের কারিগর
সিরিল জন র্যাডক্লিফ ভারতের সীমানা নির্ধারণে গঠিত
র্যাডক্লিফ কমিশনের প্রধান । কমিশনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ থেকে দু'জন
করে সদস্য ছিলেন । সদস্যরা সবাই ছিলেন আইনজীবী ।
র্যাডক্লিফ নতুন দুটি রাষ্ট্র ভারত এবং পাকিস্তানের
মানচিত্র ও আন্তর্জাতিক সীমানা নির্দেশ করে তার রিপোর্ট পেশ করেন । তারই প্রস্তাবনায়
বৃহত্তর ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হয়ে ১৪ ও ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান এবং ভারত নামে
দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্ম লাভ করে ।
দেশীয় রাজ্য
১৯৪৭ সালের ৪ জুন উপমহাদেশের সর্বশেষ গভর্নর জেনারেল
মাউন্টব্যাটেন একটি সংবাদ সম্মেলন করেন, যেখানে তিনি দেশীয় রাজ্যগুলিকে উদ্দেশ্য করে
বলেন, দেশীয় রাজ্যগুলো তারা যে কোন একটি অধিরাজ্যে সংযুক্ত হবার জন্য স্বাধীন অর্থাৎ
দুই দেশের যে কোনো দেশে যোগ দিতে পারে ।
বাংলায় প্রিন্সলি স্টেটকে বলা হয় “স্থানীয় রাজ্য”
বা “দেশীয় রাজ্য” । যুক্তরাজ্যের অধীন ভারতে দুই ধরনের প্রাদেশিক ব্যবস্থা ছিল । একটা
হল প্রভিন্স এবং অন্যটি হলো প্রিন্সলি বা দেশীয় রাজ্য ।
এইরূপ রাজ্য ব্রিটিশদের অধীন হলেও সীমিত স্বায়ত্তশাসন
ভোগ করতো । তারা সরাসরি এবং পূর্ণ ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত হতো না । এইরূপ রাজ্যের স্থানীয়
শাসকরা রাজা, মহারাজা, নিজাম ইত্যাদি পদবি ব্যবহার করতেন ।
ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার সময় ভারতবর্ষের ৫৬৫ টি দেশীয়
রাজ্য এবং ১১টি প্রভিন্স ছিল । দেশীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে আবার কিছু রাজ্য ছিল বাড়তি
মর্যাদা সম্পন্ন । তাদের বলা হতো স্যালুট স্টেট (Salute State) ।
রাজ্য গুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল জম্মু ও কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ ইত্যাদি । আকারেও সেগুলো বড় ছিল । যেমন জম্মু ও কাশ্মীরের আয়তন ছিল তখন প্রায় দুই লাখ সাত হাজার বর্গ কিলোমিটার । [সুত্রঃ উইকিপিডিয়া]
এই রকম আরো আর্টিকেল পড়তে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।
আরও পড়তে পারেনঃ পদ্মা নদীর মাঝি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় | বুক রিভিউ