হযরত ওমর রাঃ এর শাহাদাত | হযরত ওমর রাঃ

হযরত ওমর রাঃ এর শাহাদাত | হযরত ওমর রাঃ - হযরত ওমর রাঃ এর পূর্ণ নাম ওমর ইবনুল খাত্তাব (عمر بن الخطاب‎‎) । হযরত ওমর রাঃ ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ও প্রধান সাহাবীদের অন্যতম । ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রাঃ এর মৃত্যুর পর হযরত ওমর রাঃ ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন । 

আজকের ব্লগ পোস্টে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রাঃ এর শাহাদাত ও হযরত ওমর রাঃ কে নিয়ে আলোচনা করবো ।

আরও পড়ুনঃ হযরত হুসাইন রাঃ এর শাহাদাত

হযরত ওমর রাঃ এর শাহাদাত | হযরত ওমর রাঃ

আরও পড়ুনঃ রোজা কি | রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ

হযরত ওমর রাঃ ইসলামী আইনের একজন বিশেষজ্ঞ ব্যাক্তি ছিলেন । সর্বদা ন্যায়ের পক্ষে থাকার কারণে তাকে আল-ফারুক অর্থাৎ সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী হিসাবে উপাধি দেওয়া হয় । মহা নবী হযরত মুহাম্মাদ সাঃ এর খলিফা হিসাবে "আমিরুল মুমিনিন" উপাধিটি সর্বপ্রথম তার ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়েছে ।

হযরত ওমর রাঃ এর জন্ম

হযরত ওমর রাঃ মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশের বনু আদি গোত্রে আনুমানিক৫৮৩ বা ৫৮৪ খৃষ্টাব্দে আরবের মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন । হযরত ওমর রাঃ এর পিতার নাম খাত্তাব ইবনে নুফায়েল এবং মাতার নাম হানতামা বিনতে হিশাম । তার মা বনু মাখজুম গোত্রের সদস্য ছিলেন । যৌবনে তিনি মক্কার নিকটে তার বাবার উট চরাতেন ।

ইসলাম এর পূর্বে আরবে লেখাপড়ার রীতি বেশি প্রচলিত না থাকলেও নিজ আগ্রহে তরুণ বয়সে ওমর রাঃ লিখতে ও পড়তে শেখেন । কুরাইশ বংশের ঐতিহ্য অনুসারে তিনি তার কৈশোরেই যুদ্ধবিদ্যা, অশ্বারোহণ ও কুস্তি শেখেন । হযরত ওমর রাঃ দীর্ঘদেহী ও শারীরিকভাবে শক্তিশালী ছিলেন । কুস্তিবীর হিসেবে তার খ্যাতি ছিল সারা আরব জুড়ে । এছাড়াও তিনি একজন সুবক্তা হিসাবেও পরিচিত ছিলেন ।

হযরত ওমর রাঃ এর ইসলাম গ্রহণ

হযরত ওমর রাঃ একদিন মুসলমানদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অজ্ঞাতসারে তার পবিত্র মুখে পবিত্র কোরআন শরীফের আবৃতি অর্থাৎ তেলাওয়াত শুনেন । এরপর তার মনে ভাবান্তর ঘটার বর্ণনা পাওয়া যায় । একদিন হযরত ওমর রাঃ তার ভগ্নি ও ভগ্নিপতিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য নির্দয় ভাবে শাসন করতে গিয়ে নিজেই ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন । এরপর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কাছে স্বয়ং উপস্থিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ।

ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ফলে তাঁর জীবনের আমূল পরিবর্তন ঘটে । পরবর্তীকালে তিনি ইসলামের সেবার অক্ষয় কীর্তি রেখে যান । হিজরতের চার বছর পূর্বে যখন তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, তখন তার বয়স ছিল ২৬ বছর । এরপর তিনি পূর্ণশক্তিতে ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত হয়ে পড়েন ।

মদিনায় হযরত ওমর রাঃ ব্যক্তিগত উদ্যম এবং মনোবলের প্রভাবেই তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিষ্ঠিত ইসলামী সমাজে মর্যাদা লাভ করেন । সৈনিক হিসাবে ও তার প্রভূত খ্যাতি ছিল । হযরত ওমর রাঃ বদর, উহুদ ও অন্যান্য অনেক যুদ্ধে যোগদান করেন ।

হাদীসে বর্ণিত আছে, পবিত্র আল কুরআনের কয়েকটি স্থানে হযরত ওমর রাঃ-এর উক্তির সমর্থনে ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল । পবিত্র কাবা গৃহের পাশে মাকামে ইব্রাহীম এ সালাত আদায়, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বিবি গনের সামনে পর্দা পালন ইত্যাদি । সাহাবীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ হযরত ওমর রাঃ-এর অগ্রগণ্য ছিলেন । হযরত ওমর রাঃ সে কথা বিনয় সহকারে স্বীকার করতেন । পাশাপাশি সব সময় হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক রাঃ কে যথাপোযুক্ত সম্মান করতেন ।

হযরত ওমর রাঃ কে ফারুক বলা হয় কেন

ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রাঃ এর মৃত্যুর পর হযরত ওমর রাঃ ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হিসাবে হযরত আবু বকর রাঃ এর স্থলাভিসিক্ত হন । হযরত আবু বকর রাঃ ইসলামী আইনের একজন অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ ছিলেন । হযরত ওমর রাঃ সর্বদা ন্যায়ে পক্ষ অবলম্বন করতেন এবং সদা সত্যকথা বলতেন । আর এই সকল গুণের কারনে হযরত ওমর রাঃ কে আল-ফারুক বা সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী হতো ।

আবু বকরের মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন । উমর ইসলামী আইনের একজন অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ ছিলেন । ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করার কারণে তাকে আল-ফারুক (সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী) উপাধি দেওয়া হয়।

হযরত ওমর রাঃ এর শাসন আমল

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পর হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ-এর খিলাফত কালে হযরত ওমর রাঃ ছিলেন তাঁর প্রধান উপদেষ্টা । হযরত আবু বকর রাঃ মৃত্যুর পূর্বে হযরত ওমর রাঃ কেই তার স্থলাভিষিক্ত মনোনীত করেন । সাহাবীগণও সর্বসম্মতভাবে হযরত হযরত ওমর রাঃ কে তাদের খলিফা রূপে গ্রহণ করেন ।

এভাবে নেতা নির্বাচনের আরবিয় প্রথা অনুসারে জনগণের সমর্থনের ভিত্তিতেই হযরত ওমর রাঃ তার খিলাফত জীবন শুরু করেন । মুসলিম রাষ্ট্রের পরিধি বৃদ্ধি করার জন্য যুদ্ধ করা তার মূল অভিপ্রায় ছিল না । যেসব সেনাপতি মুসলিমদের প্রয়াসকে সাফল্যমন্ডিত করেছিলেন হযরত ওমর রাঃ ছিলেন তাদের সবার থেকে উত্তম । এক্ষেত্রে তার কৃতিত্ব সর্বজনবিদিত ।

হযরত ওমর রাঃ-এর সময়ই ইসলামী রাষ্ট্রের বাস্তব ভিত্তি স্থাপিত হয় । যখনই কোনো প্রশ্ন বা সমস্যার উদ্ভব হতো হযরত ওমর রাঃ সাহাবীগণকে একত্র করে জিজ্ঞাসা করতেন । সে বিষয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কোন উক্তি বা সিদ্ধান্ত আছে কি না । তিনি আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন । পবিত্র আল-কোরআন ও সুন্নাহই ছিল তার সংবিধান । বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আলী রাঃ, আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাঃ প্রমূখ ছিলেন তার পরামর্শ সভার সদস্য ।

হযরত ওমর রাঃ-এর জীবনযাপনের মান সাধারণ নাগরিকের মতোই ছিল । এই বিষয়ে হযরত ওমর রাঃ-এর দৃষ্টান্ত সত্যই বিরল । হযরত ওমর রাঃ-অন্তরে মহান আল্লাহর ভয় ও ভক্তির মধ্যে দৃশ্যত ভয়ই ছিল প্রবলতর । হযরত ওমর রাঃ যে সম্মান অর্জন করেন তা তার চরিত্র গুণের কারণে । শারীরিক শক্তির জন্য নয় ।

হযরত ওমর রাঃ রাতের আধারে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়াতেন কেন

হযরত ওমর রাঃ ছিলেন অবহেলিত, বঞ্চিতেদের সত্যিকার সেবক। জনগনের দুঃখ তাকে কাঁদাত । জনগণের কল্যাণ ও সেবা করাকে তিনি তার ইমানি দায়িত্বের অংশ বলে মনে করতেন ।

হযরত ওমর রাঃ তার শাসনামলে তার রাজ্যের নাগরিকদের অবস্থা নিজের চোখে দেখার জন্য রাতের বেলা ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন । এভাবে ঘুরে বেড়ানোর কারনে তার চোখে যে অনিয়ম ধরা পড়তো পরে তার ব্যবস্থা নিতেন । এটা হযরত ওমর রাঃ এর একটি অনন্য গুন ।

সেই সময়কার দুর্ভিক্ষের সময় তার বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে “আজ যদি ফোরাত নদীর তীরে একটি প্রাণীও অনাহারে মারা যায়, তার জন্য আমি ওমর মহান আল্লাহর নিকট দায়ী থাকব”

হযরত ওমর রাঃ এর শাসন আমল কত বছর

হজরত ওমর রাঃ ছিলেন ন্যায়পরায়ণ শাসক । হযরত ওমর রাঃ এর শাসন আমল বা খিলাফাত কাল ছিলো ১০ বছর । তিনি ২৩ আগস্ট ৬৩৪ খ্রি. থেকে ৩ নভেম্বর ৬৪৪ খ্রি. পর্যন্ত ইসলামের দ্বিতীয় খলিফার দ্বায়িত্ব পালন করেন ।

হযরত ওমর রাঃ এর শাহাদাত

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সত্যিকারের সাহাবী এবং পবিত্র আল-কুরআন ও সুন্নাহ এর পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসারী খলিফা রূপে মর্যাদার উচ্চ শিখরে সমাসীন থাকাকালে ২৬ জুন ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে হযরত ওমর রাঃ মুগীরা ইবনে শুবা-এর খ্রিস্টান ক্রীতদাস আবু লুলুর ছুরিকাঘাতে শাহাদত বরণ করেন ।

ইতিহাসে কথিত আছে যে, হযরত ওমর রাঃ-এর নিকট আবু লুলু তার মনিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে । হযরত ওমর রাঃ-এর বিচারে অসন্তুষ্ট হয়ে ব্যক্তিগত আক্রোশের বশে অতর্কিত ভাবে তাকে হত্যা করে ।

মৃত্যুর পূর্বে হযরত ওমর রাঃ ৬ জন বিশিষ্ট সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছিলেন (হযরত উসমান রাঃ এবং হযরত আলী রাঃ ও তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন) । পরে পরামর্শক্রমে তাদের মধ্য থেকে একজনকে খলিফা মনোনীত করার উপদেশ দিয়ে যান । যার ফলশ্রুতিতে হযরত ওসমান রাঃ পরবর্তী খলিফা মনোনীত হন ।

হযরত ওমর রাঃ এর হত্যাকারীর নাম কি

হযরত ওমর রাঃ এর হত্যাকারীর নাম হচ্ছে আবু লুলু । আবু লুলু ছিলো মুগীরা ইবনে শুবা-এর খ্রিস্টান ক্রীতদাস । এই আবু লুলু এর ছুরিকাঘাতে হযরত ওমর রাঃ শাহাদত বরণ করেন ।

ইতিহাসে পাওয়া যায় এই আবু লুলু তার মনিব মুগীরা ইবনে শুবা-এর বিরুদ্ধে হযরত ওমর রাঃ এর কাছে অভিযোগ করে । অতঃপর হযরত ওমর রাঃ এর বিচারও করেন । কিন্তু ক্রীতদাস আবু লুলু এর এই বিচার মনপুত না হওয়ায় অসন্তুষ্ট হয়ে ব্যক্তিগত আক্রোশে অতর্কিত ভাবে হযরত ওমর রাঃ হত্যা করে ।

হযরত ওমর রাঃ এর উক্তি

হযরত ওমর রাঃ-এর বিখ্যাত উক্তি রয়েছে, তিনি বলেছিলেন সেই সময়কার দুর্ভিক্ষের সময়- “আজ যদি ফোরাত নদীর তীরে একটি প্রাণীও অনাহারে মারা যায়, তার জন্য আমি ওমর মহান আল্লাহর কাছে দায়ী থাকব” ।

হযরত ওমর রাঃ বলেন --- “আল্লাহকে ভয় করো, কেননা যে তাকে ভয় করে সে কখনো একাকীত্ব অনুভব করে না”।

হযরত ওমর রাঃ বলেন --- “আজকের কাজ আগামীকাল করার জন্য রেখে দিবে না । পরে দেখা যাবে কাজগুলো জমা হয়ে যাবে এবং তুমি কিছুই অর্জন করতে পারবেন না” ।

হযরত ওমর রাঃ বলেন --- “যিনি ছাড়া কোন রব নেই সেই আল্লাহর কসম, যদি আমার কাছে দুনিয়ার সকল স্বর্ণ এবং রৌপ্য থাকতো, আমি সেগুলোর বিনিময়ে হলেও মৃত্যুর পরে যে ভয়াবহতা রয়েছে তা থেকে বাঁচার চেষ্টা করতাম” ।

হযরত ওমর রাঃ বলেন --- “সেই মানুষগুলোর মাঝে ভালো কিছু নেই যারা অন্যদের সদুপদেশ দেয় না, এবং সেই মানুষদের মাঝে ভালো কিছু নেই যারা উপদেশ গ্রহণ করতে পছন্দ করে না” ।


এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


আরও পড়ুনঃ হযরত হাসান রাঃ এর শাহাদাত | Martyrdom of Hazrat Hasan

Previous Post Next Post