শারীরিক সুস্থতায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা | ব্যায়ামের সুফল

শারীরিক সুস্থতায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা | ব্যায়ামের সুফল - সুস্থ থাকতে কে না চায়? সুস্থতা বিধাতার এক অতি উত্তম উপহার । সুস্থ থাকতে হলে আপনাকে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে । আর এই নিয়ম-কানুন এর মধ্যে প্রথম যেটির কথা উল্লেখ করতে হয়, সেটি হচ্ছে ব্যায়াম । শারীরিক সুস্থতায় ব্যায়ামের গুরুত্ব অপরিহার্য ।

আমাদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার, হাইপার ডিসলিপিডেমিয়া বা রক্তে কোলেস্টেরল-এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি -- এই জাতীয় অসুখে দিনের পর দিন ভোগ করতে হয় । আর সেই জন্য সঠিকভাবে হাঁটাহাঁটি করতে না পারলে অথবা ব্যায়াম করতে না পারলে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে ।

আরও পড়ুনঃ সুস্থ থাকার খাবার তালিকা | শরীর সুস্থ রাখার খাবার

শারীরিক সুস্থতায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা

আরও পড়ুনঃ এলার্জি দূর করার উপায় কি | এলার্জি দূর করার উপায়

আজকের ব্লগ পোস্টে শারীরিক সুস্থতায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করবো । কিভাবে বা কোন ধরনের ব্যায়াম করলে আপনি সুস্থ থাকবেন তা নিয়ে কিছু টিপস আপনাদের জানাবো । যা আপনাদের অনেক কাজে আসবে । তাহলে চলুন সুস্থ থাকতে ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা ও ব্যায়ামের সুফল সম্পর্কে জেনে নেই ।

ব্যায়াম কি?

ব্যায়াম বা শরীরচর্চা হল যে কোন ধরনের শারীরিক কার্যক্রম বা কসরত যেটা শারীরিক সুস্থতা রক্ষা বা সুস্থতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং শরীরকে নিরোগ রাখতে সহায়তা করে । সাধারনত ব্যায়াম বলতে একটু জোরে হাটাহাটি, জগিং, সাতার কাটা, সাইকেল চালানো, টেনিস, ফুটবল এবং বিভিন্ন রকমের শারীরিক কসরতকে বোঝায় ।

আপনি যদি এই ব্যায়ামগুলো করেন তাহলে আপনার শরীরের মাংশপেশীগুলো ব্যাবহার হয় এবং শরীরের অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি পায় । এসব ব্যায়ামের ফলে আমাদের শরীরের হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সহনশীলতা বৃদ্ধি পায় । এর ফলে শরীর সুস্থ থাকে ।

শারীরিক সুস্থতায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা
খালি হাতে ব্যায়াম

ব্যায়াম কত প্রকার?

ব্যায়াম সাধারণত দুই প্রকার, যথা ---

(ক) খালি হাতে ব্যায়াম । যেমন --- একটু জোরে হাটাহাটি, জগিং, সাতার কাটা, সাইকেল চালানো, টেনিস, ফুটবল ইত্যাদি ।

শারীরিক সুস্থতায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা
সরঞ্জাম সহকারে ব্যায়াম

(খ) সরঞ্জাম সহকারে ব্যায়াম । যেমন --- জিমনেশিয়ামে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামে থাকে । এই সমস্ত সরঞ্জাম দিয়েও ব্যায়াম করা হয় । এই ব্যায়াম গুলো করা হয় সাধারণত পেশি বৃদ্ধির জন্য করা হয়ে থাকে ।

কোন ধরনের ব্যায়াম করা উচিত?

ব্যায়াম বলতে কেউ হয়তো নিয়মিত একটু জোর কদমে হাঁটছেন ছাদে অথবা ট্রেডমিলে আবার কেউ করছেন যোগাসন । ঠিক কী কী করলে শরীরের প্রয়োজনীয় ওয়ার্কআউট হয় তা জানতে হবে ।

👉 ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়স্ক সুস্থ ও শারীরিকভাবে ফিট মানুষের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি গতিতে এবং ৭৫ মিনিট জোর গতিতে অ্যারোবিক ব্যায়াম করা প্রয়োজন । সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন করতে হবে পেশী শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম ।

👉 অ্যারোবিক এক্সারসাইজ বলতে হাটা, জগিং, সাইকেল চালানো, স্কিপিং, সাঁতার কাটা ইত্যাদি ব্যায়াম করতে পারেন ।

👉 সাধ্যমত জোরে জোরে হাঁটলে হার্ট ও ফুসফুসের বেশি উপকার হয় । প্রতিদিন একটানা ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটুন । যদি একটানা হাঁটতে না পারেন তাহলে সকালে ২০ মিনিট এবং বিকালে ২০ মিনিট হাঁটুন ।

👉 হাটু কোমর গোড়ালির অবস্থা দেখে নেবেন । হাট-ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কম থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যারোবিক ব্যায়াম করুন । তবে হাটা বা জগিং এর আগে ভালো হাঁটার জুতা পরে নিবেন । জুতা ভালো না হলে পায়ে ব্যথা হতে পারে ।

👉 স্ট্রেচিং করুন । স্ট্রেচিং কিভাবে করতে হয় কমবেশি সবাই জানে । বিশেষ কিছু নয়, শরীরের প্রতিটি পেশীসন্ধিকে সচল রাখার জন্য এই ব্যায়াম খুবই উপকারী । পা-কোমর-শিরদাঁড়ার স্ট্রেচিং এই সময় খুব কাজে আসবে । কোন ব্যথা-বেদনা বা অস্থিসন্ধি ও পেশীর বড় কোনো সমস্যা না থাকলে করতে পারেন ।

👉 পেশী জোরদার বা মাসল সে্ট্রন্ডেনিং করার ব্যায়াম দুই ভাবে করা যায় । ওজন নিয়ে এবং শরীরের ওজনকে ব্যবহার করে । যাকে বডি ওয়েট ট্রেনিংও বলা হয়ে থাকে । এর মধ্যে বিভিন্ন রকম স্কোয়াটিং আছে, তেমনি রয়েছে লেগ রাইজিং, প্লাঙ্ক, পুশ-আপ ইত্যাদি । তবে বয়স্ক বা ক্রনিক অসুখ আছে বা ফিটনেস কম বা হাটু-কোমরে ব্যথা আছে এমন মানুষের পক্ষে অভ্যাস না থাকলে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তার জন্য উপযোগী ব্যায়াম করা উচিত । অন্যথায় তার বিভিন্ন রকম সমস্যা সম্মুখীন হতে হবে । সুস্থরা অবশ্যই করতে পারেন এর সবকটি ব্যায়াম ।

👉 বর্তমানে নতুন ধরনের ব্যায়াম এর ধারা চালু হয়েছে যাতে সুরের তালে তালে এ্যারোবিক্স এর সঙ্গে স্ট্রেচিং, ব্যালেন্সিং, স্ট্রেংথ ট্রেনিং একসঙ্গে সব হয়ে যায় । সেরকমই একটি ব্যায়াম হলো টাবাটা । বয়স কম হলে, ফিটনেস ঠিক থাকলে টাবাটা করা যেতে পারে ।

👉 নিয়মিত ইয়োগা করতে পারেন । ইয়োগা সব বয়সী মানুষ করতে পারেন, ইয়োগা করার জন্য স্পেসও খুব কম লাগে, তাই বাসার যে কোনো জায়গায় ইয়োগা করতে পারেন ।

👉 ব্যায়াম করার পাশাপাশি নিয়মিত মেডিটেশন করলে আরও ভালো হয় । মেডিটেশন করলে মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে পারবেন এবং মনটা হয়ে উঠবে প্রানবন্ত ।

ব্যায়াম কখন করতে হয়?

ব্যায়ামের জন্য উপযুক্ত সময় হলো সকাল । সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর অনেক রিল্যাক্স থাকে । এ সময় ব্যায়াম করলে আপনার সারাটা দিন অনেক ভালো যাবে ।

এছাড়া আপনি বিকালেও ব্যায়াম করতে পারেন । কারণ এই সময়টাও ব্যামের জন্য উপযুক্ত । শারীরিক কসরত করলে শরীর থেকে অনেক ঘাম ঝরে তাই নরম আবহাওয়াতে ব্যায়াম করাই ভালো । দুপুরে যদি আপনি ব্যায়াম করে তাহলে খুব তাড়াতাড়ি কাহিল হয়ে যেতে পারেন তাই এ সময় ব্যায়াম না করাটাই শ্রেয় ।

ব্যায়াম কয় ঘণ্টা করতে হয়?

ব্যায়াম নিয়মিত সাধারণত ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা করা উচিত । এই সময় নিয়মিত আপনাকে ব্যায়াম করতে হবে । এবং সপ্তাহে কমপক্ষে ৫ দিন ব্যায়াম করা উচিত ।

ব্যায়ামের সুফল

ব্যায়াম করলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরে যায় । হার্ট ও ফুসফুসকে তাজা রাখে ব্যায়াম । সুগার-হাই প্রেসার-কোলেস্টেরল কম রাখতে সাহায্য করে ব্যায়াম । নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং হাড় নরম হয়ে ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায় । ফিজিক্যাল ফিটনেস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে ব্যায়াম ।


এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


আরও পড়ুনঃ শরীরের ওজন বৃদ্ধি করার সহজ উপায় | ওজন বাড়ানোর উপায়

Previous Post Next Post