আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা | Agartala Conspiracy Case

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা | Agartala Conspiracy Case - বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা । ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে দায়ের করা মামলা গণআন্দোলনের মুখে ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে প্রত্যাহার করা হয় ।

আজকের ব্লগপোস্টে ইতিহাস নিয়ে আলোচনায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা | Agartala Conspiracy Case এর পূর্বাপর তুলে ধরা হয়েছে আপনাদের জানার জন্য । আশা করি এই ব্লগ পোষ্টটি আপনাদের ইতিহাস জানতে সাহায্য করবে এবং ভালো লাগবে ।

আরও পড়ুনঃ ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের ইতিহাস | দেশ ভাগের ইতিহাস (সংক্ষিপ্ত)

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা

আরও পড়ুনঃ বাংলার নবাবী আমল | Nawab period of Bengal

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা কি?

পাকিস্তান সরকার জানুয়ারি ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে সেনাবাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা ও প্রাক্তন সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করে তা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত ।

তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ছিল যে, তারা সীমান্তবর্তী দেশ তৎকালীন ভারত সরকারের সহায়তায় পূর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে মূল পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন ।

ভারত এর ত্রিপুরার আগরতলায় সে সময়কার ভারতীয় পক্ষ ও আসামি পক্ষদের মাঝে এ ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে উক্ত মামলায় উল্লেখ থাকায় এই মামলাকে “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা” বলা হয়ে থাকে ।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পটভূমি

১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ছয় দফা কর্মসূচির মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনের দাবি পূর্বপাকিস্তানে ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করে । এতে ভীতসন্ত্রস্ত গভর্নর মোনায়েম খান বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রতিটি মহাকুমায় মামলা দায়ের করেন এবং জারি হয় বারোটি হুলিয়া (ওয়ারেন্ট) ।

৮ মে ১৯৬৬ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গভীর রাত্রে আটক হন । নিরাপত্তা আইনে ৯ মে ১৯৬৬ থেকে জেলে আটককৃত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্যদের ১৭ জানুয়ারি ১৯৬৮ জেল থেকে মুক্তি দিয়ে সেই সময় সামরিক আইনে আবার গ্রেফতার করে ঢাকাস্থ সেনানিবাসে সামরিক হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয় ।

এর আগে ৬ জানুয়ারি ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তর এক প্রেসনোটে ঘোষনা করে যে, সরকার ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এক চক্রান্ত উদঘাটন করেছে, যা ১২ই জুলাই ১৯৬৭ সালে ভারতের আগরতলায় হয়েছিল ।

এ ঘটনায় ১৮ জানুয়ারি ১৯৬৮ এক সহকারী প্রেস নোটের মাধ্যমে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনে পাকিস্তান সরকার । উক্ত অভিযোগে পাকিস্তান সরকারের দায়ের করা মামলার শিরোনাম ছিল “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য”।

এ মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করা হয় । আগরতলায় তথাকথিত ষড়যন্ত্র নিয়ে পাকিস্তান সরকারের এ মামলা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক ভাবে “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা” নামে পরিচিতি পায় ।

আগরতলা মামলার ট্রাইব্যুনাল গঠন

মামলার বিচারের জন্য ফৌজদারি বিধি সংশোধন করে ২১ এপ্রিল ১৯৬৮ প্রেসিডেন্ট এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে । ১৯ জুন ১৯৬৮ অভিযুক্ত ৩৫ জনের বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যক্রম শুরু হয় ঢাকার কুর্মিটোলা সেনানিবাসে স্থাপিত এক বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ।

তিন সদস্য বিশিষ্ট এ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন অবাঙালি বিচারপতি এস এ রহমান । অপর দুজন - মুজিবুর রহমান খান ও মুকসুমুল হাকিম ছিলেন বাঙালি ।

বন্দীদের মুক্তির দাবিতে গণ-আন্দোলন

সরকারি সাক্ষীরা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সরকারের বিপক্ষেই বিষোদগার করতে থাকেন । সাক্ষীরা বলেন, সরকার তাদের নির্যাতন করে এ মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেছে, অথচ এ মামলা সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না ।

এর ফলে দেশবাসীর কাছে সরকারের ষড়যন্ত্র সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে । ইতিমধ্যে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সরকারি চক্রান্তের বিরুদ্ধে এবং মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সহ বাকি বন্দীদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন ।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি 

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার

উত্তপ্ত গণআন্দোলনে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ঢাকা সেনানিবাসে মামলার ১৭ নং আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় । এ হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে বিক্ষুব্ধ জনতা State Guest House ও অন্যান্য সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ করে ।

গণআন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত আইয়ুব সরকার ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় এবং শেখ মুজিবুর রহমান সহ সকল বন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয় ।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ৩৫ আসামি

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ৩৫ আসামি

পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আরও যে ৩৪ জনকে আসামি করে যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেছিল, সেই ৩৫ জন আসামির নাম নিচে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হল ---

১। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

২। লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন

৩। স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান

৪। সুলতান উদ্দিন আহমেদ

৫। নূর মোহাম্মদ বাবুল (ক্যাপ্টেন বাবুল)

৬। ফজলুর রহমান পি এস পি

৭। ফ্লাইট সার্জেন্ট মফিজুল্লাহ

৮। প্রাক্তন কর্পোরাল এবি আব্দুস সামাদ

৯। প্রাক্তন হাবিলদার দলিল উদ্দিন

১০। রুহুল কুদ্দুস সিএসপি

১১। ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক

১২। ভূপতি ভূষণ (মানিক) চৌধুরী

১৩। বিধান কৃষ্ণ সেন

১৪। সুবেদার আব্দুর রাজ্জাক

১৫। মুজিবুর রহমান, ইপিআরটিসি ক্লার্ক

১৬। সাবেক ফ্লাইট সার্জেন্ট আব্দুর রাজ্জাক

১৭। সার্জেন্ট জহুরুল হক

১৮। মোঃ খুরশিদ

১৯। শামসুর রহমান সিএসপি

২০। রিসালদার এ. কে. এম. শামসুল হক

২১। হাবিলদার আজিজুল হক

২২। এস এ সি মাহফুজুল বারি

২৩। সার্জেন্ট শামসুল হক

২৪। মেজর শামসুল আলম এএমসি

২৫। ক্যাপ্টেন আবদুল মুত্তালিব

২৬। কর্নেল (অব) শওকত আলী

২৭। ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদা এএসসি

২৮। ক্যাপ্টেন এ এন এম নুরুজ্জামান ইবিআর

২৯। সার্জেন্ট আব্দুল জলিল

৩০। মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী

৩১। লে. এম. এম. এম. রহমান

৩২। প্রাক্তন সুবেদার তাজুল ইসলাম

৩৩। মোহাম্মদ আলী রেজা

৩৪। ক্যাপটেন খুরশিদ উদ্দিন এএমসি

৩৫। লেফটেন্যান্ট আব্দুর রউফ

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা mcq

প্রশ্নঃ “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার” কাকে প্রধান আসামী করা হয়?

উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে ।

প্রশ্নঃ “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার” আসামির সংখ্যা কত?

উত্তরঃ আসামির সংখ্যা ৩৫ জন ।

প্রশ্নঃ “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার” কবে দায়ের করা হয়?

উত্তরঃ ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে ।

প্রশ্নঃ “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়” কবে বঙ্গ বন্ধুকে আটক করা হয়?

উত্তরঃ ৮ মে ১৯৬৬ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গভীর রাত্রে আটক করা হয় ।

প্রশ্নঃ “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা” কবে প্রত্যাহার করা হয়?

উত্তরঃ ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে প্রত্যাহার করা হয় ।

প্রশ্নঃ “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার” কোন আসামিকে গুলি করে হত্যা করা হয়?

উত্তরঃ মামলার ১৭ নং আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে ।


এই রকম আরো আর্টিকেল পড়তে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


আরও পড়ুনঃ ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস | বিভিন্ন ভাষায় নববর্ষের শুভেচ্ছা

Previous Post Next Post