খতিয়ান কি কত প্রকার ও কি কি - বিস্তারিত

খতিয়ান কি কত প্রকার ও কি কি - বিস্তারিত আমরা যারা মানুষ তাদের প্রত্যেকের কাছে প্রয়োজনীয় একটি সম্পদ হচ্ছে জমি । আপনার জমি থাকুক বা না থাকুক বা জমি ক্রয় করার আগ্রহ আপনার রয়েছে । তাই খতিয়ান সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকা দরকার রয়েছে । 

যাদের জমি রয়েছে তাদের কাছে এই খতিয়ান অনেক মূল্যবান একটি ডকুমেন্ট । আপনার জমির মালিকানা সঠিক রাখতে হলে নির্ভূল খতিয়ান থাকা চাই । আজকের ব্লগ পোস্টে আলোচনা হবে জমির খতিয়ান কি কত প্রকার ও কি কি  - বিস্তারিত ।

আরও পড়ুনঃ দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম | বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম

খতিয়ান কি কত প্রকার ও কি কি

আরও পড়ুনঃ টেলিটক সিমের ইমারজেন্সি ব্যালেন্স কোড | Teletalk Emergency Balance Code

যারা সাধারনত জমি নিয়ে কাজকারবার করেন তাদের এবং আমাদের মাঝে যাদের এক টুকরো জমি রয়েছে তাদের জমির কাগজ-পত্র সম্পর্কে একটু ধারনা রাখতে হয় । জমির যে কোনো কাগজ-পত্র যে কোনো সময় কাজে লাগতে পারে । তাই মুটামুটি ধারনা রাখুন এতে আপনাদেরই উপকারে আসবে ।

বর্তমান সময় হচ্ছে ডিজিটাল সময় । বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া । ঠিক তেমনি বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় ও ভূমি সেবায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে । অনলাইনের মাধ্যমে আপনারা জেনে নিতে পারবেন জমা-জমি সম্পর্কে যে কোনো তথ্য ।

বন্ধুরা, আজকের ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো জমির খতিয়ান কি? এটি কত প্রকার ও কি কি? খতিয়ান সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন । তাহলে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে ।

খতিয়ান কি?

জায়গা জমির ক্ষেত্রে খতিয়ান অর্থ হচ্ছে “হিসাব”। মূলত জমির মালিকানা স্বত্ব রক্ষা এবং রাজস্ব আদায়ের জন্য জরিপ বিভাগ কর্তৃক প্রতিটি মৌজার জমির এক বা একাধিক মালিক এর নাম, পিতা অথবা স্বামীর নাম, ঠিকানা, জমির দাগ নম্বর, জমির পরিমাণ, জমির হিস্যা (অংশ), খাজনা আদায় ইত্যাদির বিবরণসহ যে রেকর্ড প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে ।

আমাদের মাঝে অনেকেই জানতে চান জমির খতিয়ান কি? আপনাদেরকে বলতে চাই যে জমির খতিয়ান বা পর্চা একই জিনিস । জমির মালিকানা প্রমাণের সরকারি যে দলিল থাকে তাকে খতিয়ান বলে । আমাদের দেশে বিভিন্ন এলাকায় এটাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয় ।

খতিয়ানের প্রকারভেদ

আমাদের বাংলাদেশে এ যাবৎ তিনটি জরিপ হয়েছে । জরিপ অনুযায়ী জমির খতিয়ান বিভিন্ন হয়ে থাকে । যেমন -

১। সিএস খতিয়ান

২। এসএ খতিয়ান

৩। আরএস খতিয়ান

৪। বিএস খতিয়ান/সিটি জরিপ

এখানে উল্লেখ্য যে, বিএস খতিয়ান/সিটি জরিপ আর এস খতিয়ানের অন্তভুক্ত সেই হিসাবে খতিয়ান তিন প্রকার ।

সিএস খতিয়ান কি

বৃটিশ আমলে এই উপমহাদেশে সর্বপ্রথম জমি নিয়ে যে জরিপ বা সার্ভে করা হয় সেটাই হচ্ছে সিএস খতিয়ান (Cadastral Survey)। এই জরিপ ১৮৮৭ সালে শুরু হয়ে ১৯৪০ সালে শেষ হয় ।

এই জরিপ কক্সবাজারের রামুতে শুরু হয় এবং দিনাজপুরে শেষ হয় । জরিপ চলাকালে সিলেট আসাম প্রদেশ এর সাথে সংযুক্ত এবং পার্বত্য চট্রগ্রাম জমিদারি প্রথার সাথে বাঙ্গালীদের বিরোধ থাকায় এই দুটি অঞ্চল সিএস জরিপের আওতায় আনা হয়নি ।

সুতরাং সিএস জরিপ হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম জরিপ এবং এর খতিয়ানকে সিএস খতিয়ান বলা হয় ।

সিএস খতিয়ান চেনার উপায়

এই খতিয়ান উপর থেকে নিচ লম্বালম্বিভাবে হয় । একদম উপরে বাংলাদেশ ফরম নং ৫৪৬৩ লেখা থাকে ।

এসএ খতিয়ান কি

১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয় । আইন পাশের পর ততকালিন সরকার জমিদারি অধিগ্রহণ সাবস্ত করেন ।

এই সময় সরকারি আমিনগণ সরেজমিন অর্থাৎ মাঠে না গিয়ে অফিসে বসে সিএস  খতিয়ান সংশোধন করে খতিয়ান তৈরি করেন । এটাকে এসএ খতিয়ান (State Acquisition Survey) বলে । কোন কোন অঞ্চলে এ খতিয়ানকে টেবিল খতিয়ান বা ৬২ খতিয়ান বলা হয় ।

সরেজমিন না গিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয় বলে এ খতিয়ানে অনেক ধরণের অসমতা দেখা দেয় ।

এসএ খতিয়ান চেনার উপায়

এসএ খতিয়ান সাধারণত এক পৃষ্ঠায় হয়ে থাকে এবং মনে রাখবেন এসএ খতিয়ান কখনও প্রিন্ট কপি হয় না অর্থাৎ হাতে লেখা খতিয়ানটি হচ্ছে এসএ খতিয়ান ।

আরএস খতিয়ান কি

সিএস খতিয়ান (Revisional Survey) সম্পন্ন হওয়ার ৫০ বছর অতিক্রম করে আর এস জরিপ শুরু হয়। আগের খতিয়ানের ভুল সংশোধন করে এতটাই স্বচ্ছ করা হয় যে, মালিকানা ও দখলদার বিরোধ কিংবা ক্রয়-বিক্রয় করার ক্ষেত্রে এটির উপর নির্ভর করতে হয় ।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই জরিপ পরিচালনা করা হয় বলে এর খতিয়ানকে বাংলাদেশ খতিয়ানও বলা হয় ।

আরএস খতিয়ান চেনার উপায়

আরএস খতিয়ান সিএস খতিয়ানের মত লম্বালম্বি দাগ টানা থাকে তবে এটি এক পৃষ্ঠায় হয় । ফরমের একদম উপরে হাতের ডান পাশে ‘রেসার্তে নং’ লেখা থাকে ।

বিএস খতিয়ান/সিটি জরিপ কি

বাংলাদেশে সর্বশেষ যে (City Survey) জরিপ (১৯৯৮-১৯৯৯ সালে) অনুষ্ঠিত হয় যেটার কাজ এখন চলমান রয়েছে । ঢাকা অঞ্চলে এটা মহানগর জরিপ হিসাবে পরিচিত লাভ করে ।

বিএস খতিয়ান চেনার উপায়

বি এস খতিয়ানে ৯ টা কলাম থাকে এবং জমির ধরণ কি তা উল্লেখ থাকে । যেমন- চাষের জমি, পুকুর ইত্যাদি ।

জমির খতিয়ান প্রয়োজন হয় কেন?

জমি ক্রয় করার আগে ক্রয়কারিকে অবশ্যই মালিকানা যাচাই করে নিতে হয় । কেননা বাংলাদেশে প্রতারকের অভাব নেই । নকল মালিক সেজেও জমি বিক্রয় করার প্রতারণা করতে পারে অনেকেই ।

এছাড়াও জমি জমা নিয়ে বিরোধ মিমাংসা করার ক্ষেত্রেও জমির মালিকানা যাচাই করার প্রয়োজন হয় ।

ওয়ারিশদের প্রাপ্ত সম্পত্তি বন্টন করার আগেও মৃত ব্যক্তির মালিকানা যাচাই করার প্রয়োজন হতে পারে । কেননা অন্য কারো জমি দাপুটে ভোগদখল করার নজির আমাদের দেশে আছে ।

জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম

আপনি যদি জমির মালিকানা যাচাই করতে চান তাহলে দুই ভাবে করতে পারবেন । নিচে পদ্ধতি দুটির বিবরণ দেওয়া হলো ---

১। কোন খতিয়ান সম্পর্কে যদি আপনার সন্দেহ হয় তাহলে সেই খতিয়ানটি নিয়ে সেটেলমেন্ট অফিসে গিয়ে খতিয়ানের ভলিয়াম এর সাথে মিলিয়ে দেখুন ।

আপনার খতিয়ান ভলিয়মের সাথে মিল থাকলে খতিয়ানটি সঠিক না থাকে তাহলে বুঝবেন এখানে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে । আর মিল থাকলে বুঝবেন যে ঠিক আছে ।

২। ডিজিটাল এই যুগে ভূমি সংক্রান্ত সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে কোথাও না গিয়ে নিজের বাসায় বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোবাইল অথবা কম্পিউটার দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করাসহ যে কোন খতিয়ান বের করা যায় খুব সহজেই । অর্থাৎ অনলাইনের মাধ্যমেও চেক করতে পারবেন ।


এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


আরও পড়ুনঃ অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন | ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন

Previous Post Next Post