হযরত ফাতিমা রাঃ এর জীবনী | Biography of Hazrat Fatima

হযরত ফাতিমা রাঃ এর জীবনী | Biography of Hazrat Fatima - হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রিয় কন্যা ফাতেমা বিনতে মোহাম্মদ (রাঃ)-এর জন্ম ৬০৫ খ্রিস্টাব্দে মতান্তরে ৬১৫ খ্রিস্টাব্দে । তবে অধিকাংশের ধারণা অনুযায়ী, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নবুয়ত প্রাপ্তির পর মা খাদিজা (রাঃ)-এর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন হযরত ফাতেমা (রাঃ) ।

আরও পড়ুনঃ জানাজার নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি | জানাজার নামাজের বিস্তারিত

হযরত ফাতিমা রাঃ এর জীবনী

আরও পড়ুনঃ গোসলের ফরজ ও সুন্নত কয়টি | গোসলের নিয়ম

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অত্যন্ত স্নেহ করতেন তাঁর কন্যা ফাতেমা (রাঃ)-কে । মুসলমান সমাজে তিনি মা ফাতেমা (রাঃ) নামে অধিক পরিচিত । মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার সংগ্রামী জীবন এসব প্রতিকূল পরিবেশে কাছে পেয়েছেন তার প্রিয় কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে ।

যিনি তার শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সান্তনা ও উপদেশ দিয়ে পিতা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন । মা ফাতেমা (রাঃ)-ই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর একমাত্র সন্তান, যার পুত্র সন্তান অর্থাৎ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নাতি ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন (রাঃ) প্রাপ্তবয়স্ক হতে পেরেছেন ।

মক্কাবাসীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে ও নিজের জীবন রক্ষার্থে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করেন । এ সময় তার প্রিয় কন্যা ফাতেমা (রাঃ)ও মদিনায় চলে আসেন ।

অপরদিকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সার্বক্ষণিক সঙ্গী ও প্রিয় বন্ধু হযরত আলী (রাঃ)ও তার সঙ্গে মদিনায় হিজরত করেন । মদীনায় আগমন এরপর মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার প্রিয় কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বিবাহ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন । সার্বিক বিবেচনায় তিনি পাত্র হিসাবে হযরত আলী (রাঃ)-কে উপযুক্ত মনে করেন এবং নিজ ধর্মের রীতি-নীতিতে উভয়ের বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন ।

মক্কায় কুরাইশ বংশের সন্তান হিসাবে হযরত আলী (রাঃ)-এর আর্থিক উন্নতি ও গোত্রের নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা ছিল । কিন্তু ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি সম্মান ও ভালোবাসার টানে তিনি সবকিছু ত্যাগ করে মদিনায় চলে আসেন । তার কাছে বিবাহ করার মতো কোনো অর্থ না থাকায় তিনি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পরামর্শে তার একমাত্র সম্বল যুদ্ধে ব্যবহৃত একটি ঢাল বিক্রি করে দেন ।

অপরদিকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কন্যা হিসাবে মা ফাতেমা (রাঃ) যে কোনো ধনবান ব্যক্তিকে বিবাহ করতে পারতেন । কিন্তু ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে এবং পিতার প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি হযরত আলী (রাঃ)-কে বিবাহ করেন । দারিদ্রতার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয় তাদের বিবাহিত জীবন । হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর কোন দাস-দাসী রাখার সামর্থ্য ছিল না । নিজ হাতে তিনি সংসারের সব কাজ করতেন এবং মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন ।

অন্যদিকে হযরত আলী (রাঃ) যথাসাধ্য ঘরের কাজে সাহায্য করার পর অন্যদের ভারী কাজ করতেন অর্থ উপার্জনের জন্য । এত দারিদ্র্যের মাঝেও তারা মহান আল্লাহ পাক এর প্রতি সর্বদা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি অনুগত থাকতেন ও তাকে অনুপ্রেরণা যোগাতেন ।

বহু ত্যাগ, তিতিক্ষা, সংগ্রাম ও যুদ্ধবিগ্রহের পর বিনা রক্তপাতে ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে মক্কা বিজয় করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) । এই বিজয়ের নেপথ্যে যথেষ্ট অবদান রাখেন হযরত আলী (রাঃ) এবং মা ফাতেমা (রাঃ) ।

মক্কা বিজয়ের চার বছরের মাথায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (রাঃ)-এর দুনিয়ার জীবনের অবসান ঘটে । মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর হযরত আলী (রাঃ) জানাজার জন্য সব প্রস্তুতি নিতে থাকেন । এসময় শীর্ষ সাহাবী বা অনুসারীদের একাংশ হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে ইসলামের খলিফা হিসাবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন করেন । সব ধরনের যোগ্যতা এবং ব্যাপক সমর্থন থাকায় হযরত আলী (রাঃ)-কে অনেকেই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পরবর্তী খলিফা হিসাবে ভাবতেন ।

ফলে তিনি স্বেচ্ছায় হযরত আবু বক্কর (রাঃ)-কে খলিফা হিসাবে মেনে নেন না বাধ্য হন, এ নিয়ে ঐতিহাসিকবিদরা দুই ভাগে বিভক্ত । একই বিভক্তি রয়েছে এসময় মা ফাতেমা (রাঃ)-এর প্রকৃত অবস্থান ও পরিণতি নিয়ে । একদল ইতিহাসবিদদের মতে, হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর পক্ষ অবলম্বন কারীরা হযরত আলী (রাঃ) এবং মা ফাতেমা (রাঃ)- এর আনুগত্য আদায়ের জন্য তাদের বাড়িতে হামলা চালান । এসময় তাদের ওপর এ সময় তাদের ওপর দৈহিক অত্যাচারের ঘটনা উল্লেখিত রয়েছে কিছু কিছু বর্ণনায় । এই অত্যাচারের ফলে অসুস্থ এবং পরবর্তীতে মা ফাতেমা (রাঃ)-এর মৃত্যু হয় বলে একদল গবেষক মত প্রকাশ করেছেন ।

আবার আরেকদল মনে করেন ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর আগে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিদায় হজ পালন করেন । এই হজের পর পরই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার প্রিয় কন্যা মা ফাতেমা (রাঃ)-কে জানিয়ে দেন যে, তার (মহানবীর) মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে । তিনি আরো জানান যে, তার বংশের মধ্যে মা ফাতেমা (রাঃ) হবেন পরবর্তী মৃত্যুপথযাত্রী ।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জাগতিক মৃত্যুর পর মা ফাতেমা (রাঃ) মূলত একটি বিচ্ছিন্ন ঘরেই একাকী জীবন কাটাতে এবং মহান আল্লাহ পাক এর ইবাদত বন্দেগীর বাইরে প্রাণপ্রিয় পিতার মৃত্যুর শোকে অনবরত কাঁদতেন । এমনই এক বিষাদময় পরিস্থিতিতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর বছরই ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন নারীকুলের শিরোমনি মা ফাতেমা (রাঃ) ।

তবে দুঃখের বিষয়, বিরোধীপক্ষ তার মৃতদেহ বা কবরকে অসম্মান করতে পারে আশঙ্কায় তিনি মৃত্যুর আগে আপনজনদের অনুরোধ করেন গোপনে তার দাফন সম্পন্ন করার জন্য । বাস্তবেও তাই করা হয় । ফলে প্রকৃত পক্ষে মা ফাতেমা (রাঃ)-কে কোথায় কবর দেওয়া হয় তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই ।

শোকাগ্রস্ত হযরত আলী (রাঃ) অতি গোপনে কবরস্থ করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রিয় আদরের কন্যা ও তার প্রিয়তম স্ত্রী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে । হযরত আলী (রাঃ) কখনো কাউকে জানাননি যে হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর কবর কোথায় ।।


এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


আরও পড়ুনঃ হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ এর জীবনী | Biography of Hazrat Abu Bakr Siddique

Previous Post Next Post