ঘুম নিয়ে কিছু কথা | ঘুম বিষয়ক কিছু উপকারী তথ্য

ঘুম নিয়ে কিছু কথা | ঘুম বিষয়ক কিছু উপকারী তথ্য - প্রথমে আমাদের জানতে হবে “ঘুম কি?” এর উত্তর হচ্ছে ঘুম বা নিদ্রা এমন একটি বিষয় যা মানুষ এবং অন্য  প্রাণী দৈনিক কাজের মাঝে বিরতি বা বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া । 

মানুষ বা অন্য প্রাণী যখন ঘুমায় তখন স্বাভাবিক কার্যকালাপ, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া স্থগিত বা স্তিমিত থাকে । আজকের ব্লগ পোস্টে ঘুম নিয়ে কিছু কথা আপনাদের সাথে আলোচনা করবো যা আমাদের প্রত্যেকের জানা উচিৎ ।

আরও পড়ুনঃ কালোজিরা ও মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা | কালোজিরা ও মধুর উপকারিতা

ঘুম নিয়ে কিছু কথা

আরও পড়ুনঃ প্রাকৃতিক উপায়ে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়

এই ঘুম বা নিদ্রা মানুষের বা অন্যান প্রাণীর জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ বিশেষ । মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে নিয়মত ঘুম আবশ্যক । একজন মানুষের যদি ঠিক মতো ঘুম না হয় তাহলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে ।

কতক্ষণ ঘুমানো উচিত

অনেকেই জানতে চান বা প্রশ্ন করে থাকেন একজন মানুষের কতক্ষণ ঘুমানো উচিত? এর উত্তর হচ্ছে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক সাত - আট ঘন্টা ঘুমানো উচিত বা প্রয়োজন । বয়সের ব্যাবধানে ঘুমানোরও সময় নির্ধারিত রয়েছে । আপনাদের সুবিধার্তে বয়স ভেদে ঘুমানোর সময় নিচে দেওয়া হলো –

কোন বয়সে কত ঘণ্টা ঘুমানো উচিত তা জেনে নিন -----

👉 শূন্য থেকে ৩ মাস বয়সী শিশুদের দৈনিক ১৪-১৭ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।

👉 ৪ মাস থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের দৈনিক ১২-১৫ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।

👉 ১ থেকে ২ বছর বয়সী শিশুদের দৈনিক ১১-১৪ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।

👉 ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের দৈনিক ১০-১৩ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।

👉 ৬ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুদের দৈনিক ৯-১১ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।

👉 ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের দৈনিক ৮-১০ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।

👉 ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী মানুষের দৈনিক ৭-৯ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।

👉 ২৬ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মানুষের দৈনিক ৭-৯ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।

👉 ৬৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সী মানুষের ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।

দুপুরে কতক্ষণ ঘুমানো উচিত

সারা দিনের কর্মব্যাস্ত সময় কাটানোর পর একটি ক্লান্তি এড়াতে ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে । সেটি হতে হবে নির্ধারিত । তবে দুপুরে বেশিক্ষণ ঘুমালে আপনার রাতের ঘুমের বিঘ্ন ঘটতে পারে, এছাড়া ও অনেক সমস্যা হতে পারে ।

আপনি যদি দুপুরে বেশি ক্লান্ত বোধ করেন তাহলে ৩০ মিনিটের একটি ঘুম দিতে পারেন । এরপরও যদি আপনার ঘুম অনুভব করেন তাহলে ৬০-৯০ মিনিট ঘুমানো ভালো ।

খালি পেটে ঘুমালে কি হয়

রাতে ঘুমানোর আগে বেশি খাবার খেতে নেই- একথা যেমন সত্য, তেমনি একদম খালি পেটে ঘুমালেও শরীর খারাপ হতে পারে । চলুন জেনে নেওয়া যাক খালি পেটে ঘুমালে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে ---

পুষ্টির ঘাটতি

রাতে না খেয়ে ঘুমালে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হবে । সঠিক পরিমাণ পুষ্টি পেতে তিন বেলা নিয়মিত খাওয়া এবং অন্তত দুবার হালকা নাস্তা করা উচিত ।

রাতের খাবার বাদ দেওয়া উচিত নয় । রাতের খাবার বাদ দিলে পরে তা আপনার যেমন অপুষ্টির কারণ হতে পারে তেমনি আপনি দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন ।

মেটাবলিজমে ক্ষতি

রাতে না খেয়ে ঘুমানোর কারণে মেটাবলিজম ক্ষতিগ্রস্ত হয় । নষ্ট হয়ে যায় শরীরের ইনসুলিনের লেভেল । এমন হলে ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে । এছাড়া কোলেস্টেরল ও থাইরয়েড লেভেলেও ক্ষতিকর ।

ঘুমের সমস্যা

রাতে না খাওয়ার কারণে ঘুমেরও সমস্যা হয় । শরীরের যতটুকু খাবার প্রয়োজন তা পাওয়া যায় না বলে বারবার ঘুম ভেঙে যায় । ফলে এর প্রভাব পড়বে সারাদিনের কাজের ওপর ।

শক্তির অভাব

আমাদের শরীর প্রতিমুহূর্তে শক্তি ব্যবহার করে এবং ক্যালরি খরচ করে । তাই শারীরিক কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন পড়ে জ্বালানির । আর রাতের খাবার না খেলে সেই জ্বালানিতে সংকট তৈরি হয় । দেখা দেয় শক্তির অভাব । তাই ঘুমানোর আগে অবশ্যই পরিমিত খাবার খেতে হবে ।

আরও পড়ুনঃ 

বেশি ঘুমালে কি হয়

সকালে অনেকেই সহজে ঘুম থেকে উঠতে চান না বা ঘুম ভাঙ্গে না । সারাটি দিন চোখে ঘুম ঘুম ভাব থাকেই যায় । এতে সারাদিনের কাজেরও অনেক ভুল হয় । তাই অনেকে প্রয়োজনের থেকেও অতিরিক্ত ঘুমিয়ে নেন । এতে শরীরের লাভের থেকে বরং ক্ষতি বেশি হয়ে থাকে । চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক, বেশি ঘুমালে কি হয় ----

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি

দীর্ঘ সময়ে ঘুমানোর ফলে শারীরিক কাজ কম হওয়ায় রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় । এর ফলে ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিসেরও ১৯ ঘন্টার ঘুমালেই ঝুঁকি সবথেকে বেশি ।

হৃদরোগের ঝুঁকি

দীর্ঘ সময়ের ঘুম বাম ভেন্ট্রিকুলারের ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় । গবেষণা মতে, দীর্ঘসময় ঘুমানোর কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি 46 শতাংশ বৃদ্ধি পায় । যে নারীরা 9 থেকে 11 ঘণ্টা ঘুমান তাদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা 38 শতাংশ বৃদ্ধি পায় ।

ডিপ্রেশন বৃদ্ধি

দীর্ঘসময় ঘুমানোর ফলে আপনার মেজাজে প্রভাবিত হতে পারে । হতাশা বাড়তে পারে । দীর্ঘ ঘুম শারীরিক ক্রিয়াকে হ্রাস করে । যার কারণে এর প্রভাব মন মেজাজের ওপর পড়ে ।

পিঠে ব্যথার সমস্যা

যারা চেয়ারে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করেন তারা যদি দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমানো, তাহলে তাদের পিঠে ব্যথা, ঘাড়, কাঁধ ব্যথার সমস্যা হতে পারে । এটি প্রভাব ফেলতে পারে কাজের ওপরেও ।

ওবেসিটি

বেশি ঘুমের অন্যতম সমস্যা ওবেসিটি । এতে ঘুমের পর ক্লান্তি বাড়ে, স্বাস্থ্য বেড়ে যায় । শরীরে মেদ জমলে সারাদিন ঘুম ঘুম লাগে । ঘুরেফিরে বারবার ক্লান্তি আসে ।

রাতে কি খাওয়া উচিত 

অনেক মানুষ আছে যারা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন । বেশি রাত করে ঘুমাতে গেলে হালকা কিছু খাওয়া শরীরের জন্য ভালো । কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেয়ে ঘুমাতে গেলে ঘুমের সমস্যা হবে না এবং ওজন বাড়বে না । যেমন ----

কলা: এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার । যা আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিপূর্ণ রাখতে পারে । এটি আপনাকে ক্ষুধার্ত করবে না এবং ভালো ঘুমাতে সাহায্য করবে ।

বাদাম: গভীর রাতে খুদা লাগ্লে অন্য কিছুর থেকে বাদাম খাওয়া অনেক ভালো । বাদামের ক্যালরি কম এবং খুবই পুষ্টিকর । বাদাম খেলে আপনার পেটের মেদকে হ্রাস করবে এবং আপনার শরীরের ভর সূচক বজায় রাখতেও সহায়তা করবে । আরো ভালো ফলাফলের জন্য, রাতে বাদাম ভিজিয়ে রেখে সকালে খাওয়া ।

ব্রেড ও পিনাট বাটার: প্রোটিনসমৃদ্ধ চিনাবাদাম পেশী তৈরি করে । এতে উপস্থিত ট্রিপটোফান আপনাকে ঘুমাতে সাহায্য করে । আপনি যখন ব্রেড সহ পিনাট বাটার খান, তখন ভিটামিন বি থাকার কারণে শরীর সহজেই অ্যামাইনো এসিড গ্রহণ করে । এটি কেবল মাত্র আপনার বিপাকক্রিয়া বাড়িয়ে তোলে, সকালে আরও ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করবে ।

দই: উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং উচ্চ ক্যালরিযুক্ত দই ঘুমের মধ্যে পেশী গঠনের জন্য খুব ভালো । রাতে এক বাটি তাজা দই খেলে হজম জনিত সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বস্তি হয় ।

পনির: প্রোটিনসমৃদ্ধ পনির খেলে আপনি বারবার ক্ষুধার সমস্যা এড়াতে পারবেন । এতে উপস্থিত ট্রিপটোফান ঘুমে সাহায্য করে । পাশাপাশি ওজনও হ্রাস করে ।

বেশি ঘুমালে কি মোটা হয়

বেশি ঘুমালে কি মোটা হয় এটা একে বারে সঠিক নয় । আমরা একটি কথা জানি “অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়” । তবে ঘুমানো একটি কাজের মধ্যেই পড়ে ।

আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ সচল থাকে এবং ঘুমানোর সময় মানব শরীরে নতুন কোষের সৃষ্টি হয় । আর ঘুমানোর ফলে আমাদের শরীরের জমানো শক্তি বা ক্যালোরি খরচ হয় । এতে মোটা হওয়ার সম্ভবনা নেই বা খুব কম ।

আর যদি আপনি প্রতিদিন দুপুরে এবং রাত্রে অনেক ভালো-মন্দ খেয়ে ঘুমান তাহলে আপনার মোটা হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি । এছাড়া এক ঘেয়েমি এবং মানসিক অবসাদে ভুগতে পারেন । তাই এসব সমস্যা এড়াতে পরিমিত এবং নির্ধারিত সময় ও নির্ধারিত পরিমান ঘুমান ।

ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত

রাতে ভালো ঘুমের জন্য প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন । প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম আপনাকে একটি প্রশান্তির ঘুম উপহার দিবে ।

এমন ভাবে ব্যায়াম করবেন যার ফলে আপনার হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয় এবং শরীর ঘামতে শুরু করে। যেমন: জোরে হাঁটা, সাইকেল চালানো, দড়িলাফ, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি।

প্রতিদিন রাতে ঘুমাবার চেষ্টা করবেন এবং নির্ধারিত সময়ে । দুপুরে না ঘুমানোর চেষ্টা করবেন । কারন দুপুরের ঘুম আপনার রাতের অতি-প্রয়োজনীয় ঘুম কেঁড়ে নিতে পারে ।

ঘুমের ওষুধ খেলে কি ক্ষতি হয়

অভিজ্ঞ ডাক্তাররা পারতপক্ষে ঘুমের ওষুধ খেতে নিষেধ করে থাকেন । কারণ ঘুমের ঔষধ নিয়মিত খেলে মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল হয়ে যেতে পারে । এর কারনে বিভ্রান্তি ও হ্যালুসিনেশন এর মতো সমস্যা হতে পারে ।

বেশি ঘুমের ঔষধ খেলে এবং এতে আসক্ত হয়ে গেলে মানুষের পিপাসা কমে যায়, যার ফলে মানব শরীরে পানি শুণ্যতা দেখা দিতে পারে এবং কিডনীতে বিরুপ প্রভাব ফেলে ।

বেশি ঘুমের ওষুধ খেলে অনেক সময় হেপাটাইটিস ধরনের রোগও হতে পারে । এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে । আর যদি ঘুমের ঔষধ খেতেই হয় তাহলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ খেতে পারেন ।


এই রকম আরো স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখা পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


আরও পড়ুনঃ সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত হাঁটুন | হাঁটার উপকারিতা সমূহ

Previous Post Next Post