ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস | বিভিন্ন ভাষায় নববর্ষের শুভেচ্ছা

ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস | বিভিন্ন ভাষায় নববর্ষের শুভেচ্ছা - নববর্ষ বলতে নতুন বছর বা বছর শুরুকে বোঝায় । পৃথিবীর সব দেশে এবং সব জাতির মাঝেই নববর্ষ পালনের রীতি বিদ্যমান । তেমনি ইউরোপ- আমেরিকায় বিশেষ করে খ্রিস্টান দেশ সমূহে পালিত নববর্ষের নাম “New Year's Day” ।

অন্য পোস্টঃ সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত হাঁটুন | হাঁটার উপকারিতা সমূহ

ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস | বিভিন্ন ভাষায় নববর্ষের শুভেচ্ছা
ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস | বিভিন্ন ভাষায় নববর্ষের শুভেচ্ছা

অন্য পোস্টঃ সজনে পাতার গুনাগুন | সজনে পাতার উপকারিতা

প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২:০১ ইংরেজি নববর্ষকে বরণ করা হয় । খ্রিষ্টান বিশ্বে এদিন সরকারি ছুটি পালিত হয় । অবিরাম গতিতে ছুটে চলা সময়ের চাকা ঘুরতে ঘুরতে আবারও আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে নতুন ইংরেজি নববর্ষকে । আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করবো ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস এবং বিভিন্ন ভাষায় নববর্ষের শুভেচ্ছা নিয়ে ।

খ্রিস্টাব্দের জন্মকথা

বর্তমান বিশ্বে যতগুলো অব্দ বিদ্যমান তার মধ্যে সবথেকে বেশি দেশে প্রচলিত অব্দ হলো খ্রিস্টাব্দ । ৫০৩ খ্রিস্টাব্দে দিওনিসউথ প্রথম এ অব্দের প্রচলন করেন । তখন ২৫ ডিসেম্বর থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত (খ্রিস্টাব্দের) প্রথম দিনটি পড়ত । বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশে জানুয়ারির ১ তারিখকে নববর্ষ হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে ।

জানুয়ারি থেকে বছর গণনা

৫৫১ অব্দে রোমের শাসনকার্য পরিচালনা করত ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট এর একটি পরিষদ যা “দিসেসভিরস” নামে পরিচিত ছিল । এই পরিষদই প্রথম মার্চের পরিবর্তে জানুয়ারি থেকে বছর গণনা শুরু করার নির্দেশ দেন । এ পদ্ধতি চালু হতে সময় লাগলেও পৃথিবীর সব দেশেই পরবর্তীতে এ পদ্ধতি গ্রহণ করে ।

ক্যালেন্ডার আবিষ্কার

পন্ডিত পোন্ডিফোরাই ৭৫৬ অব্দে ক্যালেন্ডার (Calendar) আবিষ্কার করেন । চাষাবাদের ওপর ভিত্তি করে এ ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করা হয় বলে এতে মাসের সংখ্যা ছিল ১০টি । ১০টি মাসের ক্যালেন্ডারে দিনের সংখ্যা ছিল ৩০৪ এবং বছরের শুরু হতো মার্চ (March) মাস থেকে ।

রোমান রাজা নুমাপাম পিলিয়াস (Numapam Pileus) ৭০০ অব্দে ওই ক্যালেন্ডার জানুয়ারিয়াস “জানুয়ারি” (January) এবং ফেব্রুয়ারিয়াস “ফেব্রুয়ারি” (February) নামে দুটি মাস নতুন ভাবে সংযুক্ত করেন এবং কিছু কিছু মাসের দিনের সংখ্যাও পরিবর্তন করেন । এর ফলে মাসের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ টিতে ।

ইংরেজি বারো মাসের নামের ইতিহাস

বাইরের দেশগুলোর মতো আমাদের দেশও ইংরেজি মাসের হিসাব অনুযায়ী চলে । এই মাসগুলোর প্রতিটি দিন আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত । খ্রিস্টপুর্ব ৪৫ সালে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার প্রথম ক্যালেন্ডারের প্রচলন শুরু করেন । এই ক্যালেন্ডারের নাম ছিল “জুলিয়ান ক্যালেন্ডার” ।

বর্তমানে আমরা যে ক্যালেন্ডার ব্যাবহার করি এটির নাম মুলত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার বা খ্রিস্টান ক্যালেন্ডার । ১৫৮২ সালে প্রথম এই ক্যালেন্ডার ব্যবহার শুরু করেন পোপ দ্বাদশ গ্রেগরি ।

এই দুই ক্যালেন্ডারের মধ্যে দিনের সামান্য পার্থক্য রয়েছে কিন্তু মাসগুলোর নাম কিন্তু একই । এই মাসগুলোর নাম করণ করা হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সময় থেকেই । এবার সংক্ষেপে মাসগুলোর নাম করণের উৎসগুলো জানা জাক ।

জানুয়ারি (January) = এটি ইংরেজি সনের প্রথম মাস । এর নাম করণ করা রোমান দেবতা জানুসের নাম অনুসারে ।

ফেব্রুয়ারি (February) = এটি ইংরেজি সনের ২য় মাস । এর নাম করণ করা হয় ফেব্রুয়া নামক রোমন উৎসবের নাম অনুসারে ।

মার্চ (March) = এটি ইংরেজি সনের ৩য় মাস । রোমান যুদ্ধ দেবতা মার্সের নাম অনুসারে ।

এপ্রিল (April) = এটি ইংরেজি সনের ৪র্থ মাস । এই শব্দটি ল্যাটিন শব্দ এপ্রিলিস থেকে নেওয়া হয়েছে ।

মে (May) = এটি ইংরেজি সনের ৫ম মাস । এর নাম করণ করা হয় গ্রীক দেবী মায়াসের নাম অনুসারে ।

জুন (June) = এটি ইংরেজি সনের ৬ষ্ঠ মাস । এর নাম করণ করা হয় গ্রীক দেবী জুনোর নাম অনুসারে ।

জুলাই (July) = এটি ইংরেজি সনের ৭ম মাস । এর নাম করণ করা হয় রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের নাম অনুসারে ।

অগাস্ট (August) = এটি ইংরেজি সনের ৮ম মাস । এর নাম করণ করা হয় রোমান এর প্রথম সম্রাট অগাস্টাস এর নাম অনুসারে ।

সেপ্টেম্বর (September) = এটি ইংরেজি সনের ৯ম মাস । এর নাম করণ করা হয় ল্যাটিন শব্দ “সেপ্টেম” বা সাত থেকে ।

অক্টোবর (October) = এটি ইংরেজি সনের ১০ম মাস । এর নাম করণ করা হয় ল্যাটিন শব্দ “অক্টো” বা আট থেকে ।

নভেম্বর (November) = এটি ইংরেজি সনের ১১তম মাস । এর নাম করণ করা হয় ল্যাটিন শব্দ “নভেম” বা নয় থেকে ।

ডিসেম্বর (December) = এটি ইংরেজি সনের ১২তম মাস । এর নাম করণ করা হয় ল্যাটিন শব্দ “ডিসেম” বা দশ থেকে ।

ইংরেজি সাত দিনের নামের ইতিহাস

আমরা সকলেই ইংরেজি সাত দিনের নাম জানি কিন্তু এর ইতিহাস জানিনা । আজকের এই ব্লগ পোস্টে সংক্ষিপ্ত আকারে ইংরেজি সাত দিনের নামের ইতিহাস দেওয়া হলো ।

ইংরেজি সাত দিনের নামগুলো হচ্ছে যথাক্রমে... Sunday, Monday, Tuesday, Wednesday, Thursday, Friday এবং Saturday.

Sunday: সানডে নামটির নাম করণ করা হয়েছে ল্যাটিন শব্দ “ডাইস সলিস” থেকে ।

Monday: মানডে নামটির নাম করণ করা হয়েছে এ্যাঙ্গলো-স্যাক্সন শব্দ “মোনাড্যাগ” থেকে ।

Tuesday: টিউসডে নামটির নাম করণ করা হয়েছে নোর্স দেবতা “টিয়ার” এর নামানুসারে ।

Wednesday: ওয়েডনেসডে নামটির নাম করণ করা হয়েছে নোর্স দেবতা ‘ওডিন’ এর নামানুসারে ।

Thursday: থার্সডে নামটির নাম করণ করা হয়েছে নোর্স বজ্রপাতের দেবতা “থর” এর নামানুসারে ।

Friday: ফ্রাইডে নামটির নাম করণ করা হয়েছে নোর্স দেবী ‘ফ্রিগ’ এর নামানুসারে ।

Saturday: স্যাটারডে নামটির নাম করণ করা হয়েছে রোমান দেবতা “স্যাটার্ন” এর নামানুসারে ।

লিপইয়ার এর প্রচলন

“লিপইয়ার” (leap year) এর প্রচলন হয় রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের (Julius Caesar) শাসনামল থেকে । জুলিয়াস সিজার আলেকজান্দ্রিয়া (Alexandria) থেকে গ্রিক জ্যোতির্বিদ মোসাজিনিসকে (Mosaginis) নিয়ে আসেন ক্যালেন্ডার সংস্কারের জন্য ।

মোসাজিনিস দেখতে পান পৃথিবী সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ এর সময় নেয় ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা । ৩৬৫ দিনে বছর হিসাব করা হলে প্রতি চতুর্থ বছরে ৩৬৬ দিনে বছর হিসাব করলে কোন গরমিল থাকে না । মোসাজিনিস অতিরিক্ত একদিন যুক্ত এ বছরটির নামকরণ করেন “লিপইয়ার” বা (leap year) ।

বিভিন্ন ভাষায় নববর্ষের শুভেচ্ছা

বাংলায় “শুভ নববর্ষ” কিংবা ইংরেজিতে “হ্যাপি নিউ ইয়ার” বলে নতুন বছরকে শুভেচ্ছা জানানো হয় । একই ভাবে বিশ্বের অন্যান্য ভাষাতেও কিছু নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা এখানে দেওয়া হলো -----

হিন্দিতে: নয়া সাল মোবারক হো ।

চাইনিজ: চু সেন তান ।

আরবি: কুল আম আনতুম সালিমুন ।

উর্দু: খোশ আমদেদ নয়া সাল ।

পর্তুগিজ: ফেলিজ আনো নিউভো ।

ফ্রেঞ্চ: বান্নে আন্নি ।

জার্মান: প্রোসিট নেউজার ।

রাশিয়ান: এস নোভিম গুদুম ।

স্প্যানিশ: ফেলিজ আনো নিউভো ।

ভিয়েতনামিজ: চুং তুক তান জুয়ান ।

টার্কিশ: ইয়েনি ইয়েলিনিজ কুটলু ওলসান ।

জাপানিজ: আকেমাশিতে ওমেডেতু গোজাইমাসু ।

সুইডিশ: গট নিট আর ।

ডাচ: গুলুকিগ নাইয়ো যার ।

ইতালিয়ান: বুয়োন কাপোডান্নো ।

বিভিন্ন দেশের নববর্ষের নাম

বাঙালি: পহেলা বৈশাখ

বৈসাবি: চাকমা, মারমা ও বাংলাদেশের অন্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ।

মুসলিমঃ মুহাররম (Muharram)

চীনাঃ ইয়ুয়ান তান (Yuan Tan)

জাপানিজঃ শুগাতসু (Shugatsu)

স্কটিশঃ হোগম্যানে (Hogman)

কম্বোডীয়াঃ চল চনম থমে (Chaul Chnam Themy)

ইরানিঃ নওরোজ (Nowruz)

ভিয়েতনামঃ তেত এনগুরিন দান (Tet Nguryen Dan)

গ্রিকঃ ফেস্টিভাল অব সেন্ট বাসিল (Festival of Saint Basil)

ইহুদিঃ রোশ হাসানাহ (Rosh Hashanah)

অস্ট্রীয়ঃ সিলবেস্টর‌্যাবেন্ড (Sylvesterabend)

ভারত (হিন্দু সম্প্রদায়)ঃ  দিওয়ালি (Diwali)

ওয়েলসঃ নস গালান (Nos Galan)

থাইঃ সংক্রান (Songkran)


এই রকম আরো আর্টিকেল পড়তে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


আরও পড়ুনঃ কফির উপকারিতা অপকারিতা

Previous Post Next Post