কালোজিরা ও মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা | কালোজিরা ও মধুর উপকারিতা

কালোজিরা ও মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা | কালোজিরা ও মধুর উপকারিতা - সৃষ্টির প্রথম থেকেই মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষের কল্যানে হাজার হাজার উপাদান সৃষ্টি করেছেন । কালোজিরা ও মধু তার মধ্যে অন্যতম । বহু রোগের ঔষধ এই কালোজিরা এবং মধু । বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে কালো জিরা এর গুণাগুণ নিশ্চয়ই কারো অজানা থাকার কথা নয় ।

আর মধুর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কেও নতুন করে কিছু বলার নেই । কালোজিরা ও মধু, এই দুই উপাদান একসঙ্গে খেলে কি হয় তা জেনে হয়তো আপনি অবাক হবেন । হাজারও রোগ থেকে শেফা মেলে এই কালোজিরা এবং মধুতে ।

আরও পড়ুনঃ প্রাকৃতিক উপায়ে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়

কালোজিরা ও মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

আরও পড়ুনঃ যোগ ব্যায়াম করার উপকারিতা | Benefits of Yoga Exercises

কালোজিরার উপকারিতা

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, কালোজিরাতে ফসফেট, আয়রন, ফসফরাস এবং কার্বোহাইড্রেট ছাড়াও বিভিন্ন জীবাণুনাশক উপাদান রয়েছে । কালোজিরাতে রয়েছে ক্যান্সার বিরোধী ক্যারোটিন এবং শক্তিশালী হরমোন, বিভিন্ন মূত্রবর্ধক, পাচক এনজাইম এবং পেটের বায়ু নাশক । এছাড়াও রয়েছে বহু উপকারিতা ।

মধুর উপকারিতা

যদি আমরা খাদ্যের পুষ্টির মান এবং উপাদেয়তা বিবেচনা করে খাবারের একটি তালিকা তৈরি করি, তাহলে “মধু” নামটি তালিকায় সবার প্রথমে থাকবে । কারন মধু ভিটামিন এবং মিনারেলস এ ভরপুর । মধু শরীরের জন্য অত্যান্ত উপকারী এবং নিয়মিত সেবন করলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ।

প্রাচীনকাল থেকে কালোজিরা এবং মধু লোকেরা এটি বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করে আসছে । ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে আজ থেকে ১৪৫০ বছর আগে কালোজিরা এবং মধুর উপকারীতা সম্পর্কে বলেছেন । আসুন জেনে নিই মধু এবং কালোজিরা খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে ।

কালোজিরা ও মধু সম্পর্কে হাদিস

পবিত্র কোরআন মাজিদে মহান আল্লাহ পাক তার বান্দাদের আরোগ্য লাভের কথা বলেছে । এছাড়া মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) তার বানী অর্থাৎ হাদীসে কালোজিরা ও মধু সম্পর্কে বলেছেন ।

👉 পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে –“আর মৌমাছির পেট থেকে যে বিভিন্ন রঙের নির্জাস বের হয়, তাতে রয়েছে মানুষের জন্য বিভিন্ন রোগ এর প্রতিকার।” সূরা নাহল: আয়াত -৬৯।

👉 আবু হুরায়রাহ (রা.), থেকে বর্ণিত মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন – “কালিজিরায় মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের নিরাময় আছে।” ‘আস-সাম’ অর্থ মৃত্যু, হাব্বাতুস সাওদা অর্থ কালিজিরা। (ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৮) ।

👉 কালোজিরা ও মধু সম্পর্কে বোখারি শরিফের একটি হাদিসে বলা হয়েছে, মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) বলেছে “তোমরা কালোজিরার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করো। কেননা তাতে মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের নিরাময় রয়েছে।” - সহি বুখারি ।

👉 আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) বলেছে, “পবিত্র কুরআন মাজিদ হলো যে কোন মানুষের আত্মিক রোগের জন্য আর মধু হলো মানুষের দৈহিক রোগের জন্য আরগ্য স্বরুপ।” - ইবনে মাজাহ ।

আরও পড়ুনঃ 

মধুর পুষ্টিগুণ

রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মধুতে রয়েছে প্রায় ৮১ ধরনের উপাদান । নিচে মধুর পুষ্টিগুন দেওয়া হলো ।

মধুর পুষ্টিগুন (প্রতি ১০০গ্রাম) নিন্মরুপ

শক্তি: ৩০৪ কিলো ক্যালোরি, প্রোটিন: ০.৩০ গ্রাম, ফ্যাট: ০.০০ গ্রাম, পানি: ১৭.১০ গ্রাম, ভিটামিন বি২: ০.০৩৮ মিলি গ্রাম, ভিটামিন বি৩: ০.১২১ মিলি গ্রাম, ভিটামিন বি৫: ০.০৬৮ মিলি গ্রাম, ভিটামিন বি৬: ০.০২৪ মিলি গ্রাম, ভিটামিন বি৯: ২ মা. মিলি গ্রাম, ভিটামিন সি: ০.৫ মিলি গ্রাম, ক্যালসিয়াম: ৬ মিলি গ্রাম, আয়রন: ০.৪২ মিলি গ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম: ২ মিলি গ্রাম, পটাশিয়াম: ০.৫২ মিলি গ্রাম, সোডিয়াম: ৪ মিলি গ্রাম, জিস্ক: ০.২২ মিলি গ্রাম, ফসফরাস: ৪ মিলি গ্রাম ।

কালোজিরার পুষ্টিগুন

কালোজিরার প্রধান উপাদানের মধ্যে রয়েছে আমিষ ২১ শতাংশ, শর্করা ৩৮ শতাংশ, স্নেহ বা ভেষজ তেল ও চর্বি ৩৫ শতাংশ । এছাড়াও ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ আছে ।

প্রতি গ্রাম কালিজিরা পুষ্টি উপাদান হলো

প্রোটিন ২০৮ মাইক্রোগ্রাম, নিয়াসিন ৫৭ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি১ ১৫ মাইক্রোগ্রাম, আয়রন ১০৫ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম, কপার ১৮ মাইক্রোগ্রাম, ফসফরাস ৫.২৬ মিলিগ্রাম, জিংক ৬০ মাইক্রোগ্রাম, ফোলাসিন ৬১০ আইউ ।

কালিজিরার অন্যতম উপাদানের মধ্যে আরও রয়েছে

নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী তেল । কালিজিরার তেলে রয়েছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-A, ভিটামিন-B, ভিটামিন-B2, নিয়াসিন ও ভিটামিন-C ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন জীবাণুনাশক ও রয়েছে বিভিন্ন উপাদান যা হাজারও উপকারে আসে ।

কালোজিরা ও মধুর ১০টি উপকারিতা

মানব শরীরের বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয় এই কালোজিরা ও মধু । নিচে কালোজিরা ও মধুর ১০টি উপকারিতা দেওয়া হলো -----

০১. কালোজিরা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ সতেজ থাকে । এটি শরীরকে যেকোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে প্রস্তুত করে । তাই সকালে কালোজিরার সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন । এই উপাদান দুটি প্রতিটা রোগের জন্য প্রাকৃতিক এ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে কাজ করে থাকে ।

০২. কালোজিরা এবং মধু একত্রে সেবন করলে নারী ও পুরুষ উভয়ের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে । প্রতিদিন খাবারের পাশাপাশি কালোজিরা নিয়মিত খেলে পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । তাছাড়া মধু এবং কালোজিরা পুরুষত্বহীনতা থেকেও মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি করে ।

০৩. কালোজিরা এবং মধু নিয়মিত সেবনে মানব শরীরে রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত সাধিত হয় । এই উপাদান দুটি একত্রে সেবনের ফলে মস্তিষ্কে রক্ত ​​প্রবাহ বৃদ্ধি করে, যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে ।

০৪. সামান্য কালোজিরা নিয়ে এক চামচ মধু খান । এটি আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে । কুসুম গরম পানিতে কালোজিরা কয়েক দিন নিয়মিত খেলে অ্যাজমার ব্যাপক উন্নতি হয় ।

০৫. কালোজিরা ও মধু নিম্ন রক্তচাপ স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে । পাশাপাশি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমায় । ফলে শরীরের স্বাভাবিক রক্তচাপ বজায় থাকে । তাই কালোজিরার সঙ্গে মধু মেশানোর অভ্যাস করুন ।

০৬. কালোজিরা এবং মধু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দারুণ ভূমিকা পালন করে থাকে । কালোজিরা ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজ কমায় । এর ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে ।

০৭. কালোজিরা ও মধু শিশু কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য খুবই উপকারী । কালোজিরা এবং মধু নিয়মিত সেবনের ফলে শিশুর দ্রুত শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি হয় । কালোজিরা শিশুর মস্তিষ্ক এবং স্মৃতিশক্তির উন্নতিতেও অনেক বড় ভুমিকা পালন করে থাকে । তাই আপনার শিশুকে কালোজিরা এবং মধু একত্রে নিয়মিত খাওয়ানোর অভ্যাস করুন ।

০৮. পিঠে ব্যথায় ভুগছেন? কালোজিরার তেল দিয়ে মালিশ করতে পারেন । কালোজিরা থেকে তৈরিকৃত তেল আমাদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদী বাত ও পিঠের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে থাকে । সাধারণত কালোজিরা এবং মধু খাওয়ার আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে ।

০৯. শিশু-কিশোর-কিশোরিদের নিয়মিত কালোজিরা ও মধু একত্রে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন । এতে আপনার শিশুর শরীরে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক এ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে কাজ করবে । ফলে আপনার শিশু থাকবে রোগ মুক্ত । থাকবে সুস্থ্য ও সবল ।

১০. কালোজিরা এবং মধু মাতৃগর্ভের ভ্রূণ এবং মহিলাদের প্রসবের ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে । যদি কোনো গর্ভবতি এটি দিনে ৪-৫ বার নিয়মিত সেবন করেন, তাহলে আপনি এই ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল পাবেন ।


এই রকম আরো স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখা পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


আরও পড়তে পারেনঃ ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস | বিভিন্ন ভাষায় নববর্ষের শুভেচ্ছা

Previous Post Next Post