ডায়াবেটিস রোগ কি | ডায়াবেটিস রোগ কেনো হয়

ডায়াবেটিস রোগ কি | ডায়াবেটিস রোগ কেনো হয় - ডায়াবেটিস একটি বিপাক জনিত রোগ । আমাদের শরীরে ইনসুলিন নামের হরমোনের সম্পূর্ণ বা আপেক্ষিক ঘাটতির কারনে বিপাক জনিত গোলযোগ সৃষ্টি হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বৃদ্ধিপায় এবং তা প্রশ্রাবের সাথে বেরিয়ে আসে । এই সামগ্রিক অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে । আজকের ব্লগ পোস্টে “ডায়াবেটিস রোগ কি | ডায়াবেটিস রোগ কেনো হয়” বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো ।

আরও পড়ুনঃ নবজাতকের যত্ন কিভাবে নিবেন | নবজাতকের যত্ন

ডায়াবেটিস রোগ কি | ডায়াবেটিস রোগ কেনো হয়

আরও পড়ুনঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় | গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

ডায়াবেটিস রোগে মানব দেহে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দীর্ঘস্থায়ী ভাবে বেড়ে যায় । সুস্থ লোকের রক্তের প্লাজমায় (রক্তরস) গ্লুকোজের পরিমাণ অভূক্ত অবস্থায় ৬.১ মিলি মোলের কম এবং খাবার ২ ঘন্টা পর ৭.৮ মিলি মোলের কম থাকে । 

অভূক্ত অবস্থায় রক্তের প্লাজমায় (রক্তরস) গ্লুকোজের পরিমান ৭.৮ মিলি মোল বা তার বেশী হলে অথবা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘন্টা পর রক্তের প্লাজমায় (রক্তরস) গ্লুকোজের পরিমান ১১.১ মিলি মোল বা তার বেশী হলে ডায়াবেটিস সনাক্ত করা যায় ।

রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বৃদ্ধির কারন

আমাদের মানব শরীরে অগ্নাশয় নামক একটি গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন নামক একটি হরমোন নিঃসৃত হয় । এই ইনসুলিন গ্লুকোজকে ভেঙ্গে শরীরের বিভিন্ন কাজে লাগাতে সাহাজ্য করে । কোন কারনে এই ইনসুলিনের অভাব হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় । আর অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রসাবের সাথে বেরিয়ে আসে । একজন স্বাভাবিক মানুষ ও ডায়াবেটিস রোগীকে নিচের উদাহরন দিয়ে অতি সংক্ষেপে বোঝানো যেতে পারে -------

স্বাভাবিক মানুষঃ অগ্নাশয় > ইসুলিন আছে > গ্লুকোজ কাজে লাগছে > শক্তি উৎপাদন হচ্ছে > সুস্থ ।

ডায়াবেটিস রোগিঃ অগ্নাশয় > ইনসুলিন নেই বা অল্প আছে বা কার্যকারিতা হ্রাস পেয়েছে > গ্লুকোজ কাজে লাগছে না > রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যাচ্ছে ও যথেষ্ট শক্তি উৎপাদন হচ্ছে না > ডায়াবেটেস হয়েছে ।

সাধারণত ডায়াবেটিস রোগের জন্য বংশগত ও পরিবেশের প্রভাব দুটিই দায়ী । কদাচিৎ কোন কোন বিষেশ অসুখ থেকেও ডায়াবেটিস হতে পারে । শক্তির জন্য শর্করা, আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন ।

ডায়াবেটিস হলে শর্করা ও অন্যান্য খাবার কাজে আসে না । ডায়াবেটিস হলে অগ্নাশয় হতে প্রয়োজন মতো কার্যকারী ইনসুলিন নামের রস নিঃসরন হয় না বা এর কার্যকারিতা হ্রাস পায় বলে দেহে শর্করা, আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাদ্যের বিপাকও সঠিক ভাবে করতে পারে না । “ডায়াবেটিস কোন ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়” ।

ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ

১) ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ।

২) খুব বেশী পরিমান পিপাসা লাগা ।

৩) বেশী ক্ষুধা পাওয়া ।

৪) নিয়মিত খাবার গ্রহন সত্বেও ওজন কমে যাওয়া ।

৫) ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা ।

৬) ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হওয়া ।

৭) খোশ-পাঁচড়া, ফোড়া প্রভৃতি চর্ম রোগ দেখা দেওয়া ।

৮) চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ।

** বয়স্ক রোগীদের অনেক ক্ষেত্রে এ সব লক্ষণ প্রকাশ পায় না এবং সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষাতেই ডায়াবেটিস ধরা পড়ে ।

ডায়াবেটিস কাদের হয়

যে কেউ যে কোন বয়সে যে কোন সময়ে ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হতে পারেন । তবে তিন শ্রেনীর লোকের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা বেশী থাকে -----

১) যাদের বংশে নিকট আত্মীয়দের ডায়াবেটিস আছে, যেমন মা, বাবা ।

২) যাদের ওজন অনেক বেশী । যারা কোন শারীরিক পরিশ্রম করেন না ।

৩) বহুদিন ধরে যারা কর্টিসোন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করছেন ।

ডায়াবেটিস নিরাময়

ডায়াবেটিস রোগ নিরাময় হয় না বা সম্পূর্ণ ভাবে সারে না । এ রোগটি সারা জীবনের রোগ । তবে বর্তমান সময়ের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহন করলে এ রোগটিকে খুব ভালো ভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব । একজন ডায়াবেটিস রোগী যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে তাহলে তার পক্ষে স্বাভাবিক কর্মঠ জীবন যাপন করা সম্ভব ।

ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন না রাখলে অনেক সমস্যা হয় । এ রোগ ভালো রাখাই চিকিৎসার লক্ষ্য । ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে না রাখলে যে সব মারাত্মক উপসর্গ অথবা জটিলতা দেখা দিতে পারে তা যেনে রাখা ভাল ।

পক্ষাঘাত, স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা, হৃদরোগ, পায়ের পচনশীল ক্ষত, চক্ষুরোগ, মুত্রাশয়ের রোগ, প্রস্রাবে আমিষ বের হওয়া, পরবর্তিতে কিডনির কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া, পাতলা পায়খানা, যক্ষ্মা, মাড়ির প্রদাহ, চুলকানি, ফোড়া, ঘা-পাঁচড়া ইত্যাদি ।

তাছাড়া ডায়াবেটিসের কারনে যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশী ওজনের শিশু জন্ম, মৃত শিশুর জন্ম, অকালে সন্তান প্রসব, জন্মের পরই শিশুর মৃত্যু এবং না না ধরনের জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে ।

রোগিদের ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে রাখা ছাড়াও শরীরের ওজন বাঞ্ছিত ওজনের কাছাকাছি রাখা উচিৎ । ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে রোগের জটিলতা আরও বেড়ে যায় ।

ডায়াবেটিস নিরাময়ের উপায়

ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ সারানো বা নিরাময় করা যায় না । তবে এ রোগ সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং এই বিষয়ে চিকিৎসক রোগীকে সাহায্য করতে পারেন ।

** ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে চারটি নিয়ম মানতে হয়ঃ

ক) খাদ্য ব্যবস্থা

খ) সাধ্যমত কায়িক পরিশ্রম করা

গ) নিয়মিত ঔষধ গ্রহন করা

ঘ) ডায়াবেটিস সম্পর্কে শিক্ষা নেওয়া ।

ক) খাদ্য ব্যবস্থা :

ডায়াবেটিস হলে খাদ্যের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয় । খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা ডায়াবেটিস হওয়ার আগেও যেমন থাকে পরেও একই থাকে । পুষ্টির চাহিদার তারতম্য হয় না । খাদ্য-খাবার ও নিয়মতান্ত্রিক ভাবে চলার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা ।

খ) ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম :

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখার বিষয়ে ব্যায়াম বা শরীর চর্চার ভুমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ন । ব্যায়াম বা দৈহিক পরিশ্রম মাংসপেশীর জড়তা দুর করে এবং রক্ত চলাচল সাহায্য করে । ব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ থাকে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বেড়ে যায় । প্রতিদিন অন্ততঃ ৪৫ মিনিট হাটলে শরীর যথেষ্ট সুস্থ থাকবে ।শারীরিক অসুবিধা থাকলে সাধ্যমত কায়িক পরিশ্রম বাড়াতে হবে ।

গ) ঔষধ গ্রহন :

সকল ডায়াবেটিস রোগীকেই খাদ্য ব্যবস্থা, ব্যায়াম ও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয় । অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে, এই দুইটি যথাযথ ভাবে পালন করতে পারলে রোগ নিয়ন্ত্রনে এসে যায় । অনেক রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন ইনজেকশনের দরকার হয় সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে ।।

ঘ) শিক্ষা :

ডায়াবেটিস আজীবনের রোগ । সঠিক ব্যবস্থা নিলে এই রোগকে সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রনে রাখা যায় । ব্যবস্থাগুলি রোগীকে নিজ দায়িত্বে মেনে চলতে হবে । রোগীর পরিবারের নিকট সদস্যদের সহযোগিতা এ ব্যাপারে অনেক সাহায্য করতে পারে । 

তাই রোগের সুচিকিৎসার জন্য ডায়াবেটিস সম্পর্কে রোগীর যেমন শিক্ষা প্রয়োজন তেমনি রোগীর নিকটতম আত্মিয়দেরও এই রোগ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার । কারন শিক্ষার কোন বিকল্প নাই ।

ডায়াবেটিস এর স্বাভাবিক মাত্রা কত

ডায়াবেটিস এর স্বাভাবিক মাত্রা ঠিক আছে কি না তা বোঝার উপায় হচ্ছে রক্তের শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা পরিক্ষা করে দেখা । যদি খালি পেটে রক্তের শর্করার পরিমান ৬.১ মিলি মোল থাকে এবং খাবার পর ৮.০ মিলি মোল পর্যন্ত হয় তাহল আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে আছে বলে মনে করতে হবে ।

খাবার পর রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা ১০.০ মিলি মোল বা বেশী হলে এর অর্থ আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে নেই বলে মনে করতে হবে । তবে HbA1c পরীক্ষার মাধ্যমে গত তিন মাস যাবৎ ডায়াবেটিস সঠিক নিয়ন্ত্রনে ছিল কি না তা জানা যায় । HbA1c যদি 7.0% পর্যন্ত থাকে তবে ডায়াবেটিস ভাল নিয়ন্ত্রনে আছে বলে নিশ্চত হওয়া যায় ।

পরিশেষে অতি সংক্ষিপ্ত পরিসরে ডায়াবেটিস নিয়ে আলোচনা করলাম । ডায়াবেটিস সম্পর্কে আমার এই সংক্ষিপ্ত লেখা আপনাদের যদি উপকারে আসে তাহলে নিজেকে ধন্য বলে মনে করব । ডায়াবেটিস রোগ একটি আজীবনের রোগ তাই নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করা অধিক শ্রেয় । 

হতাশা নয় পরিমিত ও নিয়মিত খাদ্য গ্রহন, কায়িক পরিশ্রম ও প্রয়োজন বোধে নিয়মিত ঔষধ সেবনে ডায়াবেটিস রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব । আপনাদের সুস্বাস্থ কামনা করে বিদায় নিচ্ছি ।

এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


আরও পড়ুনঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর অভাবজনিত রোগ | ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর কাজ কি

Previous Post Next Post