জীবনের সঠিক পরিকল্পনা | Proper Planning of Life - ক্যারিয়ারের সম্মানজনক অবস্থানে দাঁড়িয়ে একটা সুখের নীড় গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন না এমন মানুষ খুঁজে বের করা মুশকিল । ছাত্রজীবন থেকেই প্রত্যেকে এই স্বপ্ন নিজের মাঝে লালন করে থাকে । কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি না থাকার কারণে অনেক সময় অনেকেরই সে স্বপ্ন হাতের মুঠো থেকে খুব সহজেই ছুটে যায় ।
অন্য পোস্টঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট | Bangladesh Agricultural Research Institute
বন্ধুরা, আজকের ব্লগ পোস্টে আপনাদের
সাথে জীবন গড়ার সঠিক পরিকল্পনা অর্থাৎ “জীবনের সঠিক পরিকল্পনা” বিষয় নিয়ে আলোচনা
করবো । জীবন নিয়ে আমাদের মাঝে অনেকেই হতাশায় ভুগে থাকেন । আজকের এই ব্লগ পোস্ট
সামান্য হলেও জীবনের সঠিক পরিকল্পনা সাজাতে সাহায্য করবে ।
অন্য পোস্টঃ নবজাতকের যত্ন কিভাবে নিবেন | নবজাতকের যত্ন
অন্য পোস্টঃ গুগল ব্লগ তৈরি করার নিয়ম | কিভাবে ব্লগ তৈরি করা যায়
আজকের এই পোস্টের শুরুটা একটি গল্প
দিয়ে করবো । যা থেকে অনেকের জীবনের সাথে মিল খুঁজে পাবেন । তাহলে চলুন শুরু করি ।
আবির একজন মেধাবী ছাত্র । সে পড়াশোনায় অনেক ভালো । সারাক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেই সে ভালোবাসে । সে একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছে । আবির ভেবেছিল রেজাল্ট ভালো হওয়ায় খুব সহজেই কাজের বা চাকরির সন্ধান পাবে ।
মোটকথা এ ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিন্ত
ছিল সে । তাই ছাত্র অবস্থায় ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মোটেও মাথা ব্যথা ছিল
না । আবির এর অন্য বন্ধুরা যখন ক্যাম্পাসে আড্ডার ফাঁকে ক্যারিয়ার নিয়ে আলাপ
আলোচনা করত তখন তার তেমন কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না ।
বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে দেখা গেল,
পড়াশোনা শেষ হয়ে গেলেও চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিতে দিতে পাঁচটি বছর
চলে যায় আবিরের । কোথাও চাকরি হয় না । অথচ তার বন্ধু ও সহপাঠীদের অনেকের ভালো
চাকরি হয়ে যায় । আরো কিছুদিন পর আবির অনেক কষ্টে একটি প্রাইভেট ফার্মের চাকরি
জোগাড় করল । ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে ।
এটি শুধু আবিরের ক্ষেত্রেই নয়, বেশির
ভাগ তরুণের জীবনের গল্প প্রায় এই রকম ।
ছাত্রজীবনে একটু কৌশল অবলম্বন করলে এই
তিক্ত অভিজ্ঞতা অনেকাংশেই কমে যেত । স্বপ্ন জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে । আর এই স্বপ্নকে
বাস্তবায়িত করার জন্য মানুষের নিরন্তর ছুটে চলা । এই ছুটে চলার পথেই মানুষকে
হাজার বাধার সম্মুখীন হতে হয় । একসময় তার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের চুড়া স্পর্শ করে ।
সফলরা জীবন সম্পর্কে জানতেন । জীবনের
প্রতিটি পদক্ষেপ সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়েছেন । তাই প্রত্যেক
শিক্ষার্থীকে এ ব্যাপারে উদাসীন না থেকে ঠান্ডা মাথায় ভবিষ্যতের কর্ম পরিকল্পনার
সিদ্ধান্ত নিতে হবে সময় থাকতেই ।
জীবনের সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ
পরিকল্পনা করা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন ।
ব্যক্তিগত ও সামাজিক চাহিদা, অবস্থান, সামর্থ্য এবং রুচিবোধকে কেন্দ্র করে
পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে । এজন্য আপনি কিছু সহজ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন
।
পরিকল্পনার ক্ষেত্রে চারটি বিষয়
এক্ষেত্রে থাকা উচিত । যথা---
- লক্ষ্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত,
- সঠিক কাজ,
- সময় এবং
- প্রচেষ্টা ।
জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । সিদ্ধান্ত বলতে একটি কাজ করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ
করে সেটি থেকে বিকল্প বা কোন একটি বিষয় বেছে নেওয়াকে বোঝায় । আর সিদ্ধান্ত সঠিক
হওয়ার ওপর সাফল্য অনেকটা নির্ভরশীল । সিদ্ধান্ত শেষে আপনাকে সিদ্ধান্ত
বাস্তবায়নের জন্য সময়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে ।
অন্য পোস্টঃ
- বিকাশ থেকে লোন নেওয়ার উপায় | বিকাশ থেকে লোন ২০২৩
- বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস | বাংলা নববর্ষ
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার উপায় | সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
জীবন শুরু করবেন যেভাবে
আপনার জীবনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কি?
এই বিষয়ে স্কুলের রচনা লেখেননি এমন শিক্ষার্থী খুব কমই আছে । মোটামুটি
নিশ্চিতভাবে বলা যায়, কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ আবার শিক্ষক
ইত্যাদি ।
ইচ্ছা অনুযায়ী কিশোর বয়স থেকে শুরু
করা উচিত ক্যারিয়ার পরিকল্পনা । কারণ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার আসল সময় এই
বয়সটাই । যদি প্রস্তুতিটি সঠিক হয় তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারলে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে পরিকল্পনাটির বাস্তবায়ন রূপদান করা সম্ভব ।
আর সেটা সম্ভব আমাদের প্রচেষ্টা,
ইচ্ছা, আগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতার ওপরই । তবে এক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত
সামর্থ্য, দক্ষতা, আগ্রহ, রুচি,, মূল্যবোধ, স্বপ্ন এবং গুণাবলীকে প্রাধান্য দিতে
হবে । আর এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সহায়তা করে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা ।
ছাত্রজীবনে পেশা নিয়ে পরিকল্পনা
যে কাজকে জীবনের সাথে মানিয়ে নেব এবং
তার মাধ্যমে উপার্জন করে জীবন যাপন করব সেটাই পেশা । আর পেশা নিয়ে পরিকল্পনা বলতে
যে পেশার মাধ্যমে জীবন নির্বাহ করবেন সে বিষয়ে পরিকল্পনা করাকে বোঝায় । কেননা
বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে পড়াশোনা শেষে চাকরির নিশ্চয়তা রয়েছে এমন চিন্তা করা
বোকামি ।
কারণ চাকরি পেতে হলে আপনাকে
প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতেই হবে । আর এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে দরকার
যোগ্যতা । এজন্য ক্যারিয়ার হিসাবে আপনি কোনটি বেছে নেবেন, কোন পেশার জন্য কি রকম
প্রস্তুতি নিতে হবে, আপনার ইচ্ছাধীন পেশায় যাওয়ার রাস্তা কেমন হবে- এই বিষয়গুলো
জানতে অবশ্যই পেশা নিয়ে পরিকল্পনা প্রয়োজন ।
সব সময় সময়ের সাথে থাকা
নিজেকে জানার মধ্য দিয়ে জীবনে
প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায় । কেননা বর্তমান যুগটাই হচ্ছে প্রতিযোগিতার । সবক্ষেত্রেই
চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা । আর প্রতিযোগিতায় নিজেকে একটু আলাদাভাবে প্রকাশ এবং
প্রমাণ করতে চাইলে থাকতে হবে সময়ের সাথে ।
সাম্প্রতিক বিষয় এর সাথে নিজেকে
আপডেট রাখতে হবে । দক্ষতা বাড়াতে হবে সাম্প্রতিক বিষয় গুলোর সাথে । প্রত্যেক
শিক্ষার্থীর উচিত ছাত্রজীবনে কর্মজীবনের পরিকল্পনা করে নেয়া । কারণ, এই সময়ে
কর্মজীবনের পরিকল্পনা করতে না পারলে স্বাভাবিকভাবেই পড়াশোনা শেষে জব মার্কেটে
ঢুকতে গেলে অনেক বেগ পেতে হয় ।
এদের মধ্যে অনেকে আবার কোথাও কোনো
চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভোগে যেটা খুবই দুঃখজনক । তাই পড়াশোনা করতে করতেই নিজের
ভালো লাগাকে প্রাধান্য দিয়ে কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তির সহায়তা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
করতে পারলে আগামী দিন গুলো অবশ্যই উজ্জ্বল হবে ।
সফলতা ও পরিশ্রম
সাফল্য আপনার নিজের অধিকার । এ অধিকার
অর্জিত হয় অনেক শ্রম,অনেক ত্যাগের মাধ্যমে । সাফল্যের পথে রয়েছে অজস্র বাধা, আছে
মরীচিকা । পথ চলতে গিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন চোরাবালিতে । মোটকথা তীব্র
প্রতিযোগিতার মাঝে সেরা প্রমাণ করতে হবে নিজেকে ।
তাই আত্মবিশ্বাসে অটুট থেকে
শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হবে নিজের যেটুকু মেধা আছে তার সঠিক ব্যবহার দিয়ে ।
সমস্যায় পড়লেই সমাধানের জন্য উৎকন্ঠিত হবেন না । সমস্যাকে তার প্রাকৃতিক
প্রক্রিয়ার মধ্যে ছেড়ে দিন । প্রতিটি সমস্যার মধ্যে নতুন সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে ।
মনে রাখতে হবে জীবনে ব্যর্থতার প্রধান
দুটি কারণ হচ্ছে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভাব । ব্যর্থরা
অবচেতনভাবে ব্যর্থতার সাথে নিজেদের সংযুক্ত করে । সচেতনভাবে সাফল্যের সাথে একাত্ম
হলেই সাফল্য আপনার দিকে আকৃষ্ট হবে ।
নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক চাকরির
বাজারে নেটওয়ার্ক ছাড়া চাকরি পাওয়া দুঃসাধ্য । তাই আপনাকে যোগাযোগ মুখি হতে হবে
। অনেক সময় দেখা যায়, একটি ভালো চাকরির বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে, যার জন্য আপনি
পারফেক্ট । কিন্তু বিজ্ঞাপনটি আপনার দৃষ্টিগোচর হয়নি, সে ক্ষেত্রে আপনি চাকরির
সুযোগ হারাবেন । সে কারণেই চাকরি তথ্য গুলো পেতে গড়ে তুলুন নেটওয়ার্ক । এজন্য
আপনি যে কাজগুলো করতে পারেন………..
** পুরনো বন্ধুদের খোঁজখবর নিন ।
কেননা তাদের কাছে আপনি পেতে পারেন প্রয়োজনীয় কোনো তথ্য ।
** বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে
অংশগ্রহণ করুন । সাংগঠনিক যোগ্যতা বাড়াতে বিভিন্ন সংগঠনে সংযুক্ত হোন ।
**ক্যারিয়ার রিলেটেড সভা, সমিতি ও জব
ফেয়ার গুলোর খোঁজখবর রাখুন ।
** চাকরি সংক্রান্ত বিভিন্ন পর্যায়ের
উপর কর্মশালায় অংশগ্রহণ করুন । বিভিন্ন কর্পোরেট হাউজের ওয়েবসাইট ব্রাউজ করুন ।
** অনুভূতি বা আইডিয়া প্রকাশের সময় আপনার যোগাযোগ দক্ষতা কাজে লাগান । সর্বোপরি জীবনের লক্ষ্য কে কেন্দ্র করে ব্যক্তিগত অর্জনগুলোকে বাড়িয়ে তুলুন । কেননা একদিন এগুলো আপনার সাফল্যের সহায়ক হবে ।
এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।