হতাশা
থেকে মুক্তির উপায় ইসলাম | হতাশা থেকে মুক্তির উপায় কি - মানুষ হিসেবে আমরা
প্রত্যেকেই চাই, সুখময়, শান্তিপূর্ণ ভাবে জীবন কাটাতে । যে জীবনে থাকবে না কোন
হতাশা, থাকবে না কোনো দুশ্চিন্তা । কিন্তু ইচ্ছা করলেই বা হাত বাড়ালেই সুখ মেলেনা
কিংবা শান্তি আসে না । আজকের ব্লগ পোস্টে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো হতাশা থেকে
মুক্তির উপায় ইসলাম | হতাশা থেকে মুক্তির উপায় কি ।
আরও পড়ুনঃ হযরত ওমর রাঃ এর শাহাদাত | হযরত ওমর রাঃ
আরও পড়ুনঃ হযরত হুসাইন রাঃ এর শাহাদাত
মানুষের পক্ষে প্রচুর টাকা, ক্ষমতার প্রভাব কিংবা দুনিয়ার কোন কিছু দিয়ে শান্তি অর্জন বা জোগাড় করা সম্ভব নয় । শান্তি আল্লাহ প্রদত্ত একটি বিষয় । তবে পবিত্র কোরআন-হাদিসে মানুষের কষ্টদায়ক হতাশা এবং অহেতুক দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকার কিছু কার্যকরী উপায় বল আছে । সেগুলো নিম্নরূপ..........
পরকালের স্মরণ
জীবনের
যে কোনো কষ্টের মুহূর্তে পরকালের কথা স্মরণ করা । মনে করা এ কষ্ট খুবই কম । আমি
পরকালে এজন্য প্রতিদান প্রাপ্ত হব । হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে বলা
হয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,
“যদি কোনো মুমিন কোন রোগ বা ব্যথা জাতীয় বিপদে আপতিত হয় তখন সেই বিপদের বিনিময়ে তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় । এমনকি একটি কাটা বিঁধলেও তার বিনিময়ে পাপ মোচন হয় ।” - সহিহ বুখারী: ৫৬৪০
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত এক হাদীসে নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেছেন,
“যখন কোন মুসলমান রোগাক্রান্ত হয় ঠিকঠাক আমল করতে পারে না তখন মহান আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের বলেন, যতদিন আমার বান্দা অসুস্থ থাকবে ততদিন দিবারাত্রি সে (সুস্থ অবস্থায়) যে সব আমল করত (এখন করতে পারছে না) সেসব আমলের সওয়াব তার আমলনামায় লিখতে থাকবে।” - মুসনাদে আহমদ: ৬৮২৫
ধৈর্য ধারণ করা
যেকোনো
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করা । পবিত্র কুরআনে কারীমে মহান আল্লাহ তাআলা
বলেছেন,
“হে ঈমানদাররা! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাজের দ্বারা সাহায্য প্রার্থনা করো । নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।”- সূরা আল বাকারা:১৫৩
এ
আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরকারিরা বলেছেন, এ কথা একেবারেই স্পষ্ট । মহান আল্লাহ যদি
কারও সঙ্গে থাকেন তার তো আর দুশ্চিন্তার কারণ নেই, থাকতে পারে না । ইসলামিক স্কলাররা
বলেছেন, খারাপ পরিস্থিতিতে এই ভেবে শান্তনা গ্রহণ করা, চলমান পরিস্থিতি অস্থায়ী,
সাময়িক । এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
“নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি রয়েছে । নিশ্চয়ই প্রতিকূল পরিস্থিতির পরেই অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে ।” - সূরা আল ইনশিরাহ: ৫-৬
আরো
ইরশাদ হয়েছে,
“আর আমি যুগকে মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তিত করি । অর্থাৎ কেউ সবসময় একই অবস্থায় থাকে না।” - সূরা আল ইমরান: ১৪০
মহান
আল্লাহর স্মরণ
ইসলামের
শিক্ষা হলো - সুখে দুখে সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকা । পবিত্র আল
কোরআন- হাদিসের বর্ণনা মতে, মহান আল্লাহ পাক এর স্মরণ ও আরাধনা দুশ্চিন্তা দূর
করতে খুবই ফলপ্রসূ । পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
“জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাইমুমিনের অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করে।”- সূরা রাদ: ২৮
তাকদিরে পূর্ণ আস্থা
তাকদীরের
ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখা । কোন কিছুর হাতছাড়া হয়ে যাওয়াতে মুষড়ে না পড়া
। হাদীসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সাঃ)
বলেছেন,
“তুমি তোমার উপর উপকারী জিনিস কামনা করো । সে ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য চাও । অসহায় হয়ে পড়ো না । যদি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে পড়ে যাও তাহলে এরকম বলো না যে, যদি এ রকম করতাম তাহলে এমনটা হতো (এই বিপদে আর পড়তে হতো না) বরং তুমি তখন বলো, মহান আল্লাহ তাকদিরে এমনটাই লিখে রেখেছেন । তিনি যা চেয়েছেন তাই হয়েছে । কেননা এই “যদি” শব্দটি শয়তানি কাজের দরজা খুলে দেয় । অর্থাৎ শয়তানের মাধ্যমে হতাশা সৃষ্টি করে বিপথে নিয়ে যায়।” - সহীহ মুসলিম: ২৬৬৪
ইসলামী
স্কলারদের পরামর্শ হলো, সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা, বিশ্বাস ও ভরসা
রাখা । মহান আল্লাহ কখনও বান্দার অকল্যাণ চান না । যেমনটি পবিত্র কুরআনে কারীমে
ইরশাদ করা হয়েছে,
“আর যারা আল্লাহর উপর ভরসা রাখে তাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।” - সূরা আত তালাক: ৩
স্বয়ং
মহান আল্লাহ কারো জন্য যথেষ্ট হয়ে গেলে তার জীবনে দুশ্চিন্তা ও হতাশার অস্তিত্ব
অসম্ভব ।
ইস্তেগফার পাঠ করা
বেশি
বেশি ইস্তেগফার পাঠ করতে থাকা । হাদীসে এসেছে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার পাঠ করবে মহান আল্লাহ যে কোনো সঙ্কট নিরসনে তাকে পথ দেখাবেন । দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন । অকল্পনীয় উপায় রিযিক দান করবেন।”- সুনানে আবু দাউদ: ১৫১৮
পাপ মুক্ত জীবন যাপন
হতাশা
ও দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচতে পাপ মুক্ত জীবন যাপন করতে হবে । কারণ মহান আল্লাহর
অবাধ্যতা করে, পাপে লিপ্ত থেকে জীবনে হতাশা ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার আশা করা
বোকামি এবং অলীক কল্পনা । কিন্তু আফসোসের সঙ্গে লক্ষ্য করা যায়, বর্তমানে মানুষ
হতাশা থেকে বাঁচতে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করছে ।
মাদকের নেশায় বুঁদ হচ্ছে, নানা ধরনের মহান আল্লাহর নাফরমানীতে ডুব দিচ্ছে । তাতে সাময়িক সুখ খুঁজে নিচ্ছে । বিপরীতে মানুষ চিরস্থায়ী হতাশা ও অশান্তির অতল গহবরে হারিয়ে যাচ্ছে । পরে চাইলেও সেখান থেকে ফিরে আসতে পারছেনা । ফলে মানুষ কাঙ্খিত সুখ, শান্তি এবং হতাশামুক্ত নিশ্চিন্ত জীবন তাদের অধরাই থেকে যাচ্ছে ।
মহান আল্লাহ পাকের কথা স্বরণ করা
বস্তুত
মহান আল্লাহ পাকের নাফরমানী ও অবাধ্যতায় কখনো হতাশা দূর হয় না বরং বৃদ্ধি পায় ।
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না বা সম্ভব নয় । হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে
মুক্তি পেতে হলে পবিত্র কোরআন-হাদিসের নির্দেশিকা গুলো অনুসরণ করতে হবে এবং সেই
পথেই চলতে হবে । তবেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত সুখ ও শান্তি ও দুর হবে হতাশা ।
হতাশা থেকে মুক্তির উপায় ইসলাম FAQ
প্রশ্নঃ বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করার উপকারিতা কি?
উত্তরঃ
হাদীসে এসেছে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার পাঠ করবে মহান আল্লাহ যে কোনো সঙ্কট নিরসনে তাকে পথ
দেখাবেন । দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন । অকল্পনীয় উপায় রিযিক দান করবেন।”-
সুনানে আবু দাউদ: ১৫১৮
প্রশ্নঃ হতাশা থেকে মুক্তির উপায় কি?
উত্তরঃ
বস্তুত মহান আল্লাহ পাকের নাফরমানী ও অবাধ্যতায় কখনো হতাশা দূর হয় না ।
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না । হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে হলে
পবিত্র কোরআন-হাদিসের নির্দেশিকা গুলো অনুসরণ করতে হবে এবং সে পথেই চলতে হবে ।
তবেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত সুখ ও শান্তি ।
প্রশ্নঃ পরকালের স্মরণ করলে কি কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়?
উত্তরঃ অবশ্যই । জীবনের যে কোনো কষ্টের মুহূর্তে পরকালের কথা স্মরণ করা । মনে করা এ কষ্ট খুবই কম । আমি পরকালে এজন্য প্রতিদান প্রাপ্ত হব । হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে বলা হয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,
“যদি কোনো মুমিন কোন রোগ বা ব্যথা জাতীয় বিপদে আপতিত হয় তখন সেই বিপদের বিনিময়ে তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় । এমনকি একটি কাটা বিঁধলেও তার বিনিময়ে পাপ মোচন হয় ।” - সহিহ বুখারী: ৫৬৪০
এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।
আরও পড়ুনঃ রোজা কি | রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ