ব্রণ দূর করার উপায় কি | ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়

ব্রণ দূর করার উপায় কি | ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায় - কৈশোর বয়সে কিংবা বয়স কালেও অনেকের ব্রণের সমস্যা হয়ে থাকে । এই ব্রণ নিয়ে অনেকেই হতাশায় ভোগেন । এই সমস্যা কিভাবে দুর করা যায় তার উপায়গুলো খুঁজতে থাকেন ।

আজকের ব্লগ পোস্টে ব্রণ দূর করার উপায় কি | ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে কথা কলবো । ব্রণ নিয়ে হতাশ না হয়ে নিচে পরামর্শগুলো মেনে চললে আশা করা যায় এই ব্রণ থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব ।

আরও পড়ুনঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় | Ways to Increase Skin Radiance

ব্রণ দূর করার উপায় কি | ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়

আরও পড়ুনঃ ছেলেদের চেহারা সুন্দর করার খাবার | ছেলেদের চেহারা ফর্সা করার উপায়

ব্রণ হওয়ার কারণ

কৈশোর বয়স্কদের ত্বকের কমন সমস্যা হলো ব্রণ । বিশেষ করে যাদের মুখের ত্বক কিছুটা তৈলাক্ত ব্রণ তাদেরই বেশি ওঠে । এর একমাত্র কারণ এ-সময় তাদের শরীরের হরমোনাল পরিবর্তন ঘটে থাকে এবং এ-সময় তৈলাক্ত গ্রন্থসমূহ প্রচুর মাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে ।

ফলে ত্বকে বেশি পরিমাণে মসৃণ হওয়ার কারণে ধুলা-মাটি জমে লোমকূপ এর মুখ বন্ধ হয়ে যায় । আর এই কারনেই ব্রণের সৃষ্টি হয় । তবে ব্রণ দেখে ভয় পাওয়ার কারণ নেই । প্রয়োজনীয় যত্ন নিলেই ব্রণ সহজে ভালো হয়ে যায় । স্বাভাবিক ত্বক ও শুষ্ক ত্বকের চেয়ে তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ বেশি হয় । এছাড়া অতিরিক্ত চিন্তা টেনশন থেকেও ব্রণ জন্মে ।

ব্রণ কেন হয়?

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর মানবদেহে হরমোনের প্রভাব বৃদ্ধি পায় । ফলে সেবাশিয়াস গ্ল্যান্ড বা মেদময় গ্রন্থির কার্যক্ষমতা বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত পরিমাণ সেবাস তৈরি হতে থাকে । লোমের গোড়ায় একটি জীবাণু স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যমান থাকে, যার নাম “Propane Bacteria Acne” । এই জীবাণু ওই নিঃসরিত সেবাসকে ভেঙে ফ্রি ফ্যাটি এসিড তৈরি করে । আর ঐ এসিডের প্রভাবে লোমের গোড়ায় প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং ফুলে যায় । এটাই মূলত ব্রণ ।

ব্রণ দূর করার উপায়

১। সব সময় পেট পরিষ্কার রাখতে হবে । খেলে সহজে হজম হয় এমন খাবার খেতে হবে । মৌসুমী ফল ও সবুজ শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে ।

২। দিনে কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে ।

৩। মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে ।

৪। পান, বিড়ি, সিগারেট, চা, কফি থেকে দূরে থাকতে হবে ।

৫। মশলাযুক্ত খাবার, ভাজাভুজি, আচার, ঘি-মাখন খাওয়া বন্ধ করতে হবে ।

৬। আঁশ জাতীয় খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে ।

৭। প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম, হাঁটাচলা ও সাঁতার কাটার অভ্যাস করতে হবে ।

৮। চর্বি জাতীয় খাবার থেকে যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে ।

৯। রোজ রাতে কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে ।

১০। ব্যবহার্য পোশাক-পরিচ্ছেদ ও অন্যান্য সামগ্রী সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে ।

ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়

(ক) পরিষ্কার পাথরকুচি পাতা বেটে মুখে লাগাতে হবে । ৩০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে ।

(খ) ডিমের সাদা অংশের সাথে লেবুর রস ও একটু গরম পানি মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করতে হবে । পরে খুব ভালোভাবে তা মুখে লাগাতে হবে । শুকিয়ে যাওয়ার পর মুখে টান অনুভব করলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মিশ্রণটি ধুয়ে ফেলতে হবে ।

(গ) গাঁদা ফুলের পাপড়ি গরম পানিতে সেদ্ধ করার পর বেটে পেস্ট তৈরি করতে হবে । এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে কমপক্ষে ২০ মিনিট পর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে ।

(ঘ) ১ চা-চামচ শাঁখের গুড়ো এর সাথে আধা চা চামচ লেবুর রস ভালো ভাবে মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে । ভালো ভাবে শুকিয়ে গেলে ৩০ মিনিট পর ঝেড়ে ফেলতে হবে । তারপর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখটা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে ।

(ঙ) সাদা চন্দনের গুড়ার সাথে হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে । এই পেস্ট মুখে লাগানোর পর শুকিয়ে গেলে খুব টান অনুভব করলে তখন ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে ।

(চ) লেবুর রস ও শসার রস একত্রে মিশিয়ে মুখে লাগালে ব্রণে ভালো উপকার পাওয়া যায় ।

(ছ) তুলসী পাতার সেদ্ধ পানির ভাপ নিলে যথেষ্ট ভালো ফলাফল পাওয়া যায় ।

(জ) রাত্রে শোবার সময় পুদিনা পাতা বেটে মুখে লাগাবেন, সকালে উঠে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলবেন । এতে মুখে ব্রণ হলে ভালো উপকার পাওয়া যায় ।

(ঝ) মুখে যদি ব্রণ থাকে তাহলে কোন কারণে মুখ যদি ঘেমে যায়, তবে সাথে সাথে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলবেন । তাহলে মুখে ব্রনের সমস্যা কম হবে ।

ত্বকের পরিচর্যা

অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না যে কিভাবে ত্বকের পরিচর্যা করব । আর ত্বকের সঠিক পরিচর্যার অভাবে মুখে ব্রণ ওঠে বা ব্রণ হয় । ত্বকের পরিচর্যায় করণীয় কি তা আমাদের জানা দরকার । নিচে ত্বক পরিচর্যায় কি কি করতে হবে তা উল্লেখ করা হলো ---

** সূর্যের রশ্মি থেকে এড়িয়ে চলতে হবে ।

** রোদ্রে গেলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে অথবা সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যাবহার করা উচিত ।

** অতিরিক্ত সাবান ব্যবহার করা যাবে না । কারণ অতিরিক্ত ক্ষার ত্বকের ক্ষতি করে থাকে । এমন সাবান ব্যবহার করতে হবে যাতে অতিরিক্ত ক্ষার না থাকে । সে ক্ষেত্রে বেবি সোপ অথবা গ্লিসারিন সোপ ব্যবহার করা যেতে পারে ।

আবার একেবারেই সাবান ব্যবহার না করা উচিত নয় । কারণ একদম সাবান ব্যবহার না করলে ত্বকে সাধারণত ত্বকের ভাজে, ভেজা স্থানে ছত্রাক, ফাংগাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি জীবাণু আক্রমণ করতে পারে ।

** অতিরিক্ত এন্টিসেপটিক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা উচিত নয় । কারণ এগুলো অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বক মোটা এবং খসখসে হয়ে যায় । যার ফলে ত্বক স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ও লাবণ্যতা হারিয়ে ফেলে ।

** ত্বকের আদ্রতা রক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় পানি কিছু পরিমাণ বেশি হলেও খেতে হবে । নয়তো ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে । ত্বক শুকিয়ে গেলে পানি আটকে রাখতে পারে না । সে ক্ষেত্রে পানিতে সামান্য পরিমাণ লবণ ব্যবহার করা যেতে পারে । লবণ ত্বকে পানি আটকে রাখতে সাহায্য করে । তাছাড়া ভিটামিনযুক্ত খাবার প্রচুর পরিমাণে খাওয়া উচিত ।

** ত্বকের টানটান ভাবকে বজায় রাখতে হলে নিয়মিত ত্বক ম্যাসাজ করা উচিত । নিয়মিত ও বিজ্ঞানসম্মত ম্যাসাজ এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ত্বক তরতাজা রাখা সম্ভব । প্রতিদিন অন্তত এই ম্যাসাজ ১২ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত করা উচিত ।

** তেল ব্যবহারে যাদের অভ্যাস রয়েছে তাদের উচিত হবে শুধুমাত্র শীতকালে তেল ব্যবহার করা । গরমকালে তেল ব্যবহার করা উচিত নয় । কারণ গরমকালে তেল মাখলে ঘামাচি হওয়ার সম্ভাবনাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয় । আর তেল যারা মাখবেন তারা অবশ্যই গোসলের পর মাখবেন ।

** এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফলমূল বেশি বেশি খেতে হবে । বিশেষ করে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন-সি প্রত্যেক দিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে ।

** চর্বি জাতীয় খাদ্য খাবার না খাওয়াই ভালো ।

** মুক্ত মূলক ফ্রিরেডিকেল সৃষ্টিকারী খাদ্য খাওয়া যাবেনা ।

** ব্রণের সমস্যা অথবা ত্বকের সমস্যা যদি বেশি হয় তাহলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে ।


এই রকম আরো রুপচর্চা বিষয়ক লেখা পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


আরও পড়ুনঃ ফেসিয়াল করার উপকারিতা ও পদ্ধতি | Facial benefits and procedures

Previous Post Next Post