বিষাদ সিন্ধু উপন্যাস - মীর মোশাররফ হোসেন | বুক রিভিউ - বিষাদ সিন্ধু উপন্যাসটির লেখক মীর মোশাররফ হোসেন । তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত বাঙালি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক । কারবালার যুদ্ধের বিষয়বস্তু নিয়ে তার রচিত বিষাদ সিন্ধু উপন্যাস সবথেকে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম ।
মীর মোশাররফ হোসেন বাংলা ভাষা-ভাষীদের
মধ্যে প্রধান ও উল্লেখযোগ্য গদ্যশিল্পী এবং বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথ-প্রদর্শক
। আজকের বুক রিভিউতে মীর মোশাররফ হোসেন এর “বিষাদ সিন্ধু উপন্যাস” নিয়ে আলোচনা করবো ।
আরও পড়ুনঃ পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় রিভিউ | সৈয়দ শামসুল হক
আরও পড়ুনঃ পদ্মা নদীর মাঝি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় | বুক রিভিউ
বন্ধুরা, আজকের ব্লগ পোস্টে যে বইটির রিভিউ করবো সেই বইটির নাম “বিষাদ সিন্ধু” । এর লেখক বাংলার বিখ্যাত ঔপন্যাসিক, নাট্যকার প্রাবন্ধিক ও সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেন । এই বইটি প্রথম প্রকাশীত হয় ১৮৯১ সালে । তাহলে চলুন বন্ধুরা বিষাদ সিন্ধু উপন্যাস – মীর মোশাররফ হোসেন সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক ।
বিষাদ সিন্ধু উপন্যাসের মূলভাব
মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধু বাংলা সাহিত্যের ধারায়
এক কালজয়ী সৃষ্টিকর্ম । হিজরী ৬১ সালের মহরম মাসে কারবালার প্রান্তরে সংঘটিত মর্মন্তুদ
কাহিনী ও এর পূর্বাপর ঘটনা বলি এ উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু ।
উপন্যাসে ইতিহাসের সত্যকে মহাকাব্যিক বিশালতায় রূপদান
করার মধ্যেই মীর মশাররফ হোসেনের ব্যতিক্রমী শিল্পচেতনার পরিচয় ফুটে উঠেছে । মীর মশাররফ
হোসেন এ উপন্যাসে ইতিহাসকে অবলম্বন করে নির্মাণ করেছেন মানবিক সম্ভাবনার শাশ্বত শব্দভাষ্য
।
উপন্যাস মোট তিন খন্ডে প্রকাশিত হয় । প্রথম খন্ড মহরম
পর্ব (১৮৮৫), দ্বিতীয় খন্ড উদ্ধার পর্ব (১৮৮৭) এবং তৃতীয় খন্ড এজিদ বদ পর্ব (১৮৯১)
সর্বমোট ৬১ টি ভাগ নিয়ে এ গ্রন্থটি রচিত । মহরম পর্ব ২৬ টি, উদ্ধার পর্ব ৩০ এবং এজিদবধ
পর্বে ৫ টি ভাগ তাছাড়া উপক্রমণিকা ও উপসংহার রয়েছে ।
শিল্পীবোধ, জীবনানুভূতি ও ভাষাসৌকর্যে গ্রন্থটি মীর
মশাররফ হোসেনের এক স্মরণীয় কীর্তি । নাটকীয় সংঘাত, আকস্মিকতা, চরিত্রের ভাব্যন্তর
এবং সংলাপরীতির আশ্রয় “বিষাদ সিন্ধু” উপন্যাসের প্রধান শিল্পবৈশিষ্ট্য ।
রুপতৃষ্ণা, ঈর্ষা, নাটকীয়তা, ধর্মীয় মূল্যবোধে গভীর
বিশ্বাস - এসকল প্রবণতা মীর মশাররফ হোসেনের চরিত্রায়ন-কৌশল এর মূল ভিত্তি ।
বিষাদ সিন্ধু অর্থ কি?
আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা জানতে চান বিষাদ সিন্ধু
অর্থ কি? এর উত্তর হচ্ছে বিষাদ সিন্ধু অর্থাৎ দুঃখের সাগর । এখানে আলাদা ভাবে বিষাদ
অর্থ হচ্ছে দুঃখ আর সিন্ধু অর্থ হচ্ছে সাগর । তাহলে এর দুইটি মিলে হয় “দুঃখের সাগর”
।
বিষাদ সিন্ধু উপন্যাস pdf download
বন্ধুরা, আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা বিষাদ সিন্ধু
উপন্যাস pdf খোঁজ করে থাকেন । আপনাদের সুবিধার্তে এখানে আরেক বিষাদ সিন্ধু উপন্যাস
এর pdf ফাইলটি দেওয়া হলো । এখান থেকে উপন্যাসটির pdf ডাউনলোড করে নিতে পারবেন ।
বিষাদসিন্ধু উপন্যাস pdf download
বিষাদ সিন্ধু - মীর মোশাররফ হোসেন |
বিষাদ সিন্ধু উপন্যাস লেখক পরিচিতি
জন্মঃ ১৩ নভেম্বর ১৮৪৭, কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার
লাহিনীপাড়া গ্রামে ।
মৃত্যুঃ ১৯ ডিসেম্বর ১৯১১ ।
উপন্যাসঃ রত্নবতী (১৮৬৯), বিষাদ সিন্ধু (মহরম পর্ব ১৮৮৫,
উদ্ধার পর্ব ১৮৮৭, এজিদবধ পর্ব ১৮৯১), রাজিয়া খাতুন, তাহমিনা, নিয়তি কি অবনতি, বাঁধা
খাতা ।
আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসঃ উদাসীন পথিকের মনের কথা (১৮৯০),
গাজী মিয়ার বস্তানী (১৮৯৯) ।
নাটকঃ বেহুলা গীতাভিনয় (১৮৮৯), টালা অভিনয় (১৮৯৭),
বসন্তকুমারী (১৮৭৩), জমিদার দর্পণ (১৮৭৩) ।
প্রবন্ধঃ গোজীবন (১৮৮৯, এ রচনা রায় তাকে মামলায় জড়িয়ে
পড়তে হয়), মুসলমানের বাংলা শিক্ষা ।
প্রহসনঃ এর উপায় কি? (১৮৭৫), এ কি? (১৮৯৯), ভাই ভাই
এই তো চাই, ফাঁস কাগজ ।
আত্মজীবনীঃ আমার জীবনী (১৯১০), বিবি কুলসুম (১৯১০) ।
কাব্যঃ গোরাই ব্রিজ বা গৌরী সেতু (১৮৭৩), বিবি খোদেজার
বিবাহ (১৯০৫), পঞ্চনারী পদ্য (১৮৯৯), মোসলেম বীরত্ব (১৯০৭) ইত্যাদি ।
বিষাদ সিন্ধু গ্রন্থ সংক্ষেপ
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনের
সঙ্গে দামেস্ক অধিপতি মাবিয়ার পুত্র এজিদের কারবালা প্রান্তরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং
হাসান-হোসেনের করুণ মৃত্যু “বিষাদ সিন্ধু” উপন্যাসের মূল বিষয় । তিন পর্বে বিভক্ত
“বিষাদ সিন্ধু” এর মহারম পর্বে বর্ণিত হয়েছে এজিদের প্রনয়াসক্তি, ব্যর্থতা এবং তার
পরিণাম ।
প্রথমে আব্দুল জব্বার ও পরে ইমাম হাসানের স্ত্রী জয়নাবকে
স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার বাসনা ছিল এজিদের । কিন্তু জয়নাবের সাড়া না পেয়ে ক্ষিপ্ত
হয়ে এজিদ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় । এজিদের মন্ত্রী মারওয়ান মদিনায় মাইমুনা নামের এক
বৃদ্ধার সাহায্যে হাসানের পারিবারিক জীবনে অশান্তি সৃষ্টি করে ।
হাসানের দ্বিতীয় স্ত্রী জায়েদাকে দামেস্কের রাজরানী
হওয়ার লোভ দেখিয়ে হাসানকে বিষ খাইয়ে হত্যা করে । হাসানের পর হোসেনকেও হত্যা করার
জন্য এজিদের মন্ত্রী মারওয়ান ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে । এজিদের সেনাবাহিনী আক্রমণ করতে
পারে এই তথ্য দিয়ে মারওয়ান গোপনে হোসেনকে সরে যেতে বলে । পথ ভুলে হোসেন ও তার সঙ্গীরা
কারবালায় গিয়ে পৌঁছায় ।
ফোরাতে এজিদের সেনাবাহিনী হোসেন ও তার সঙ্গীদের সাথে
অসম যুদ্ধে লিপ্ত হয় । হোসেনের সঙ্গীরা পরাজিত হয় । সীমার নামক এক পাষণ্ড যোদ্ধার
হাতে হোসেন মৃত্যুবরণ করেন ।
উদ্ধার পর্বে আছে বিপন্ন হোসেনের পরিবারের অস্তিত্ব
রক্ষা এবং বীর মোহাম্মদ হানিফের হানিফার প্রতিশোধ গ্রহণের বিবরণ । পুরষ্কারের লোভে
হোসেনের কাটা মাথা নিয়ে দামেস্কের যাত্রাপথে সীমার আজর নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে
রাত কাটায় । আজর এই মাথা রক্ষায় নিজ সন্তানের মাথা কেটে সীমারের হাতে দেয় । সীমার
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আজরকে হত্যা করে ।
এই পর্বে মোহাম্মদ হানিফা দামেস্ক আক্রমণ করে হোসেন
ও পুত্র জয়নালকে উদ্ধার করেন । হানিফার ভয় এজিদ প্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে যায় ।
শেষখন্ড “এজিদবধ পর্বে” হানিফা কর্তৃক এজিদ বোধের প্রচেষ্টা,
এজিদের ভূ-গর্ভস্থ গুপ্ত কক্ষে পলায়ন ও জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে নাটকীয় কষ্টভোগ, দৈব
নির্দেশে বহু প্রাণীক্ষয়কারী হানিফার প্রাকৃতিক বন্দিত্ব এবং হোসেন বংশধর জয়নাল আবেদীনের
রাজ্য লাভের কাহিনী বিবৃত হয়েছে ।
বিষাদ সিন্ধু উপন্যাসের প্রশ্ন
প্রশ্নঃ “বিষাদ সিন্ধু” কার রচনা?
উত্তরঃ মীর মশাররফ হোসেন ।
প্রশ্নঃ মীর মশাররফ হোসেন রচিত বিয়োগান্ত গ্রন্থ কোনটি?
উত্তরঃ বিষাদ সিন্ধু ।
প্রশ্নঃ মীর মশাররফ হোসেনের “বিষাদ সিন্ধু” কোন ধরনের উপন্যাস?
উত্তরঃ একটি ইতিহাস আশ্রয়ী উপন্যাস ।
প্রশ্নঃ “বিষাদ সিন্ধু” উপন্যাসের নায়কের নাম কি?
উত্তরঃ এজিদ
এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।