টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা -দই পছন্দ করেন না এমন মানুষ হয়তো খুব কমই আছে । তার মধ্যে টক দই তো স্পেশাল একটি খাবার । অনেকেই দুধ খেতে চান না বা খেতে পছন্দ করেন না । দুধের বিকল্প হিসাবে বিভিন্ন ভাবে টক দই খেয়ে থাকেন । বিশেষ করে খাবারের সাথে টক দই অতুলনীয় । আজকে আমরা জানবো টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে ।

 আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত ওজন কমানোর সহজ উপায় | Easy Way to Lose Excess Weight

টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আরও পড়ুনঃ গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা | গ্রিন টি বিস্তারিত

টক দই

আপনি জানেন কি টক দইয়ে রয়েছে মানব দেহের উপকারী প্রো-বায়োটিক উপাদান ও উপকারী ব্যাক্টেরিয়া । এই উপাদান মানব দেহের ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়াকে মেরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে । আজকের আপনাদের সাথে শেয়ার করবো টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং টক দই সম্পর্কে বিস্তারিত ।

টক দই এর পুষ্টি উপাদান

নানান রকম পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর টক দই । টক দইয়ে আছে ভিটামিন এ, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২ ও ফসফরাস । টক দই মানবদেহে ক্ষতিকর টক্সিন জমতে দেয় না । আপনি যদি নিয়মিত চক দই খান তাহলে বাড়তি মেদ কমে যাওয়ার সম্ভনা থাকে ।

টক দই এর পুষ্টিগুণ
টক দই এর পুষ্টিগুণ

টক দই খাওয়ার নিয়ম

টক দইয়ে যেমন নানান রকম উপকারী উপাদান রয়েছে তেমনি টক দই খাওয়ারও কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে । যদি আপনি নিয়ম মেনে টক দই খান তাহলে শরীরের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না । সাধারণত সারা দিনে এক কাপ টক দই খাতে পারেন বা এক কাপ টক দই খাওয়া উচিৎ । নিচে টক দই খাওয়ার কিছু নিয়ম উল্লেখ করা হলো ----

১। টক দই/দই কখনওই গরম করবেন না । টক দই/দই গরম করা উচিত নয় । কারন এটি গরম করলে উপাকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলো নষ্ট হয়ে যায় ।

২। সকালে এবং দুপুরের খাবারে টক দই খাওয়া যেতে পারে । তবে টক দই রাতে না খাওয়াই শ্রেয় ।

৩। প্রতি দিন নিয়তিম টক দই না খাওয়াই শ্রেয় । আপনি টক দই খেতে পারেন এক দিন পর পর । কোনো কোনো দিন পাতে টক দই খেতে পারেন আবার কোনো কোনো দিন টক দইয়ের সাথে আখরোট, কাজু বা কিশমিশ মিশিয়ে খেতে পারেন । তাহলে টক দই খাওয়ার উপকারিতা ভালো পাবেন ।

৪। বোরহানি হিসেবে খাওয়া: টক দই খাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে বোরহানী করে খাওয়া । টক দইয়ের ভিতর বিট লবন, গোল মরিচ গুঁড়া, পুদিনা বাটা ইত্যাদি দিয়ে তৈরী করা বোরহানী খেতে যেমন অসাধারণ তেমনি স্বাস্থ্যকরও বটে । এছাড়া স্বাদ অন্যরকম বৃদ্ধি করতে তেতুলের রস ও জিরা গুঁড়াও মিশিয়ে নিতে পারেন ।

৫। সালাদের সাথে: টক দই আরও খাওয়া যায় সালাদের সাথে । টমেটো, শসা, গাজর ইত্যাদি কেটে টক দই মিশিয়ে তার সাথে বিট লবন, গোল মরিচের গুঁড়া যোগ করে খেতে পারেন যা খুবই মুখোরোচক । এছাড়াও বিভিন্ন ফল কেটে টক দই মিশিয়ে খাওয়া যায় । দু’টো পদ্ধতিই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ।

টক দই খাওয়ার উপকারিতা

দুগ্ধজাত খাবার হওয়ায় টক দই শরীরের জন্য বেশ উপকারী । আমাদের দেশ ছয় ঋতুর দেশ । তাই বিভিন্ন ঋতু পরিবর্তনের সময় জ্বর, সর্দি, ঠান্ডা, কাশির সমস্যা দেখা দেয় । এই সময়গুলোতে টক দই খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অনেক উপকার হয়ে থাকে । তাই মানব শরীরের জন্য এই আদর্শ খাবারের কয়েটি উপকারীতা নিম্নে আলোচনা করা হলো ---

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

বিভিন্ন ঋতু পরিবর্তনের সময়, বিশেষ করে বর্ষাকালে হঠাৎ বৃষ্টি আর গরম মিলে শরীরে ঠান্ডা, সর্দি, জ্বর এর আক্রমণ দেখা দেয় । এসব সমস্যার প্রতিরোধ করতে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় টক দই রাখুন । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে টক দইয়ের জুড়ি নাই । ঠান্ডা সর্দি ও জ্বর না হওয়ার জন্য টক দই ভালো কাজ করে ।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

টক দই রয়েছে বেশ কিছু উপকারী উপাদান, শরীরের ক্ষতিকর উপাদান গুলি ধ্বংস করে । টক দইয়ের উপকারী ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে বাড়িয়ে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে । বিভিন্ন ঋতুতে নানা রকম খাবারে হজম শক্তিতে বিপত্তি দেখা দেয় । তাই এই সমস্যা সমাধানে টকদই বেশ কার্যকর ।

আরও পড়ুনঃ 

বিভিন্ন রোগীদের উপকারী খাবার

টক দই এ রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া ও কোলন ক্যান্সারের রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী । টক দই হৃদরোগীদের জন্য অনেক উপকারী একটি খাবার । উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা নিয়মিত টক দই খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন । এছাড়া টকদই রক্তশোধনেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে ।

হাড় ও দাঁতের সুস্থতা প্রদান করে

টক দই এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি । এসব উপাদান হাড় ও দাঁতকে মজবুত করতে সাহায্য করে । টক দইয়ের আমিষ দুধের থেকে সহজে হজম হয় । তাছাড়া যাদের দুধের হজমে সমস্যা রয়েছে তারা দুধের পরিবর্তে টক দই খেতে পারেন ।

আথ্রাইটসে উপাকারী খাবার

বিশেষ করে বর্ষাকালে অস্টিওপেরোসিস ও আর্থ্রাইটিসের রোগীদের শরীরে ব্যথা হতে পারে । তাই এ সময় এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা নিয়মিত টক দই খেলে রোগ থেকে আরাম পাবেন ।

শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে

বিভিন্ন ঋতুর শুরুতে কখনো গরম কখনো ঠান্ডা অনুভূত হয় । এ সময় টক দই খেলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে ।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

সারাবছর নিয়মিত টক দই খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় । যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য এটি খুব ভাল একটি খাবার । পুষ্টিহীন ও বেশি ক্যালোরিযুক্ত জাঙ্ক ফুড না খেয়ে পুষ্টিকর টক দই খাওয়া উচিত । এতে থাকা আমিষ সহজে হজম হতে সময় লাগে, তাই পেট ভরা ভরা বোধ হয় এবং অতিরিক্ত খাবার খেতে ইচ্ছা করে না । আর সে কারণেই ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে ।

অন্ত্রনালী পরিষ্কার রাখে

টক দই মানব শরীরে বিষাক্ত টক্সিন জমতে বাধা প্রদান করে । তাই অন্ত্রনালী পরিষ্কার রেখে মানব শরীরকে সুস্থ রেখে বুড়িয়ে যাওয়া ও অকাল বার্ধক্য রোধ করতে সাহায্য করে । মানব শরীরে বিষাক্ত টক্সিন কমে যাওয়ার কারণে ত্বকের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায় ।

পানির অভাব পূরণ করে

গরমকালে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়ে যাওয়ার কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয় । টক দই শরবত করে খেলে একদিকে যেমন শরীরের গরম তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ঠিক তেমনি শরীরে পানিশূন্যতাও দূর করবে ।

টক দইয়ের অপকারিতা

👉 যারা বাতের ব্যাথায় ভুগছেন তারা টক দই খাওয়া থেকে বিরত থাকুন । টক দই খেলে জয়েন্টের ব্যাথা বেড়ে যেতে পারে ও দেখা দিতে পারে নানা রকমের সমস্যা । যারা বাতের ব্যাথায় ভুগছেন তারা টক দই খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।

👉 যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা টক দই খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হতে হবে । যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা টক দই বেশি খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে । যার কারনে ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে পারে । আর সে কারনে টক দই খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া খুবই জরুরী ।

👉 যারা টনসিলে আক্রান্ত তাদের অতিরিক্ত টক দই খাওয়ার ফলে গলার টনসিল বেড়ে যেতে পারে । ঠাণ্ডা হোক বা গ্রীষ্ম কাল অল্প পরিমান খেতে পারেন ।

👉 যারা গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য টক দই খুবই ক্ষতিকর হতে পারে । অতিরিক্ত টক দই খাওয়ার ফলে বুকজ্বালা এবং গ্যাসের সমস্যায় পড়তে পারেন । যদি টক দই খেতেই হয় তাহলে দুপুরে খাওয়ার পর অল্প পরিমান খেতে পারেন ।

টক দই নিয়ে FAQ

টক দই খাওয়ার উপকারি কি?

টক দই খাওয়ার উপকারিতা অনেক । যেমন - রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, বিভিন্ন রোগীদের উপকারী খাবার, হাড় ও দাঁতের সুস্থতা প্রদান করে, আথ্রাইটসে উপাকারী খাবার, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, অন্ত্রনালী পরিষ্কার রাখে, পানির অভাব পূরণ করে ।

টক দই খাওয়ার নিয়ম?

সকালে এবং দুপুরের খাবারে টক দই খাওয়া যেতে পারে । তবে টক দই রাতে না খাওয়াই শ্রেয় ।

টুকু টক দই খেলে কি ওজন কমে?

সারাবছর নিয়মিত টক দই খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় । যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য এটি খুব ভাল একটি খাবার । পুষ্টিহীন ও বেশি ক্যালোরিযুক্ত জাঙ্ক ফুড না খেয়ে পুষ্টিকর টক দই খাওয়া উচিত ।

টক দই এ কত ক্যালরি?

প্রতি ১০০ গ্রাম টক দইয়ে ১০০-১৫০ মিঃগ্রাঃ ক্যালরি থাকে ।

টক দই এর English কি?

টক দই এর English হচ্ছে “Sour Yogurt” ।

টক দই এর ক্ষতিকর দিক কি?

টক দইয়ে ক্ষতির থেকে উপকার বেশি । তারপরও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে, যেমন – অতিরিক্ত টক দই খেলে বাতের ব্যাথা বাড়তে পারে, ডায়াবেটিস বাড়তে পারে, টনসিলের ব্যাথা বাড়তে পারে এবং পেটের গ্যাস বৃদ্ধি পেতে পারে ।

টক দই খেলে কি গ্যাস হয়?

যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য টক দই খুবই ক্ষতিকর হতে পারে । অতিরিক্ত টক দই খাওয়ার ফলে বুকজ্বালা এবং গ্যাসের সমস্যায় পড়তে পারেন । যদি টক দই খেতেই হয় তাহলে দুপুরে খাওয়ার পর অল্প পরিমান খেতে পারেন ।

শেষ কথাঃ

যেভাবেই টক দই খাওয়া হোক না কেন প্রধান কথা হচ্ছে এটি দারূন উপকারী খাদ্য । নিয়মিত ভাবে টক দই খেলে আমাদের শরীর থাকবে অনেক রোগমুক্ত, সতেজ এবং স্বাভাবিক । যা প্রতিটি মানুষেরই কামনা ।


এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


আরও পড়ুনঃ ঘুম নিয়ে কিছু কথা | ঘুম বিষয়ক কিছু উপকারী তথ্য

Previous Post Next Post