অজু ভঙ্গের কারণ কয়টি | কি কি কারণে অযু ভঙ্গ হয় - পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ । মহান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভ করতে হলে বান্দাহকে অবশ্যই পাক-পবিত্রতা অবলম্বন করতে হবে । আজকের ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে আলোচনা করব অযু ভঙ্গের কারণ কয়টি এবং কি কি কারণে অযু ভঙ্গ হয় তার বিস্তারিত ।
আরও পড়ুনঃ মহান আল্লাহর ৯৯টি নাম ও তার অর্থ
আরও পড়ুনঃ হযরত ফাতিমা রাঃ এর জীবনী | Biography of Hazrat Fatima
মহান আল্লাহ পাক নিজে পাক-পবিত্র, তিনি পাক-পবিত্রতাকে পছন্দ করেন । অপবিত্র সবকিছুকেই তিনি ঘৃণা করেন । মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআন মাজিদে এরশাদ করেছেন ----
“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হও তখন মুখমন্ডল ও কনুইসহ হাত ধৌত করো, তোমাদের মাথা মাসেহ করো এবং উভয় পা টাখনু সহ ধৌত করো।”
অজু ভঙ্গের কারণ কয়টি
অজু ভঙ্গের কারণ সাধারণত ৭টি । যে যে কারনে অযু ভঙ্গ
হয় তা নিচে আলোচনা করা হলো ----
১। পস্রাব এবং পায়খানা রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া
২। মুখ ভরে বমি হওয়া
৩। শরীরের কোন জায়গা হতে রক্ত, পুঁজ, পানি বের হয়ে
গড়িয়ে পড়া
৪। থুতুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া
৫। চিৎ বা কাত হয়ে অথবা হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া
৬। পাগল মাতাল ও অচেতন হলে
৭। নামাজের
মধ্যে উচ্চস্বরে হাসলে
অযু করার নিয়ম
কোন লোক অযু করার পূর্বে লক্ষ্য রাখতে হবে তার উপর গোসল
ফরজ কিনা? আর নারীগণ কে দেখতে হবে তারা পবিত্র কিনা অর্থাৎ তারা হায়েজ নেফাস থেকে
মুক্ত কিনা? যদি নারীগণ হায়েজ নেফাস থেকে মুক্ত থাকেন কিন্তু বিভিন্ন কারণে গোসল ফরয
হয়ে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে গোসলের কাজ সমাধা করে নিতে হবে ।
গোসলের স্থানে শুধু অজু করলে গোসলের কাজ আদায় হবে না
। যখন কোন ব্যক্তি পূর্ণরূপে আস্থাশীল হবে যে তার উপর গোসল ফরয নয়, তবে আল্লাহ পাকের
ইবাদতের জন্য অজুই যথেষ্ট তখন সে কিবলামুখী হয়ে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পড়ে নিম্নোক্ত
দোয়াটি পাঠ করবে ----
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন আতাওয়াজ্জাআ লিরাফয়ি’ল হাদাছি
ওয়া ইস্তিবাহাতান লিছ্ছলাতি ওয়া তাক্বাররুবান ইলাল্লাহি তা’আলা ।
অর্থঃ আমি অযুর নিয়ত করছি নাপাকি দূর করার জন্য, বিশুদ্ধরূপে
নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে এবং মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ।
১। নিয়ত করার পর প্রথমে ডান হাত ও পরবর্তীতে বাম হাতের
কবজি পর্যন্ত যথাক্রমে ধৌত করতে হবে ।
২। তারপর গড়গড়া এর সাথে তিনবার কুলি করবে ।
৩। এরপর ডান হাত দ্বারা নাকে পানি দিয়ে বাম হাত এর
বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুলিদ্বয় নাসিকা ছিদ্রে প্রবেশ করিয়ে ভিতরভাগ তিনবার ধৌত করবে
।
৪। তারপর সম্পূর্ণ মুখমন্ডল অর্থাৎ ললাটের উপরিভাগের
চুল ওঠার স্থান হতে থুতনীর নিচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি হতে অপর কানের লতি পর্যন্ত
ভালোভাবে তিনবার ধৌত করবে । লক্ষ্য রাখতে হবে যেন মুখমন্ডলের কোন অংশ শুকনো না থাকে
। যাদের দাড়ি অত্যন্ত ঘন তাদের দাড়ি খিলাল করে দিতে হবে ।
৫। এরপর উভয় হাতের কনিষ্ঠা, অনামিকা ও মধ্যমা তিনটি
আঙ্গুল একত্রিত করে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করতে হবে । দুই হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলদ্বয়
উভয় কানের ছিদ্রে ঢুকিয়ে শাহাদত আঙ্গুলি দ্বারা কানের ভেতরের ভাঁজগুলো মাসেহ করে
দুই বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা কানের পৃষ্ঠাদেশ মাসেহ করবে । আর উভয় হাতের পিঠে দ্বারা ঘাড়
মাসেহ করবে ।
৬। এরপর প্রথমে ডান পা তিনবার টাখনু অর্থাৎ পায়ের ছোট
গিরা সহ ধৌত করবে, অনুরূপভাবে বাম পা তিনবার ধৌত করবে ।
বারবার অযুর দ্বারা শরীর ধৌত করা যেমন শরীর পবিত্র হয়
তেমনি মন-মানসিকতাও থাকে প্রফুল্ল এবং আনন্দিত । অযুর উপকারিতার ব্যাপারে মনীষীদের
কথা হল ইহা মানুষের শরীরের জন্য অপরিহার্য কাজ ।
অজু করার ছবি
নিচে অজু করার ছবি দেওয়া হলো ----
অজু করার ছবি |
কি কি কারণে অযু ভঙ্গ হয়
১। প্রস্রাব পায়খানার রাস্তা দিয়া মল, মূত্র, বায়ু,
বীর্য, চির-ক্রিমি ইত্যাদি কোন কিছু বের হওয়া ।
২। শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্ত, পুঁজ, দূষিত পানি গড়িয়ে
পড়া ।
৩। দাঁতের মাড়ি হতে ওই পরিমাণ রক্ত বের হওয়া যাতে
থুতু এর বর্ণ লাল হয়ে যায় । কিন্তু থুতু এর বর্ণ পরিবর্তিত না হলে অযু নষ্ট হবে না
।
৪। মুখ ভরা বমি হওয়া । মুখ ভরে কফ উঠলে অযু নষ্ট হয়
না ।
৫। চিৎ বা কাত হয়ে বা কোন বস্তুতে হেলান দিয়ে নিদ্রা
যাওয়া ।
৬। উন্মাদ, মাতাল বা অন্য কারণে অচেতন হয়ে পড়া ।
৭। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের কামোত্তেজনা সহকারে নগ্ন
দেহে মিলিত (সঙ্গম নয়) হওয়া ।
৮। যে নামাজে রুকু সেজদা রয়েছে তাতে বালেগ লোকের উচ্চস্বরে
হাসলে অযু এবং নামাজ উভয়ই নষ্ট হয়ে যায় । কিন্তু যে নামাজে রুকু সিজদা নেই ইহাতে
উচ্চস্বরে হাসিলে শুধু নামাজ নষ্ট হয় অযু নষ্ট হয় না ।
মেয়েদের ওযু ভঙ্গের কারণ
কোন কোন মহিলার ধারণা যে অজু করার পর কোন পুরুষের সাথে
সাক্ষাত হলে অযু ভঙ্গ হয়ে যায় এটা ভুল ধারণা । যাহাদের সঙ্গে দেখা দেয়া দুরস্ত নেই
এরূপ কোন পুরুষের সহিত সাক্ষাৎ হলে পর্দা অমান্যের জন্য গুনাহগার হবে কিন্তু অযু নষ্ট
হবে না অ আর যাদের সাথে দেখা দেয়া দুরস্ত রয়েছে তাদের সামনে গেলে ওযু নষ্ট হওয়ার
প্রশ্নই ওঠে না ।
ওযুর মাকরুহ সমূহ
১। জোরে জোরে মুখমন্ডলে পানি নিক্ষেপ করা
২। বাম হাতের সাহায্যে মুখমন্ডল ধৌত করা
৩। বাম হাতে কুলির পানি মুখে দেওয়া
৪। ডান হাতের সাহায্যে নাকের ভেতর পরিষ্কার করা
৫। বাম হাতের সাহায্যে নাকে পানি দেওয়া
৬। তিনবার মাথা মাসেহ করা
৭। অযুর অঙ্গসমূহ তিনবারের কম বা বেশি ধোয়া
৮। অযুর সময় নিষ্প্রয়োজনে কথা বলা
৯। অযুতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি খরচ করা
১০। নিজের জন্য ওযুর পাত্র নির্দিষ্ট করে রাখা ।
গালি দিলে কি ওযু ভাঙ্গে
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে ওযু করা অবস্থায় গালি দিলে
ওযু ভঙ্গ বা নষ্ট হয় কি না? ওযু ভঙ্গের যে ৭টি কারন রয়েছে তার মধ্যে এটি পড়ে না । অর্থাৎ
গালি দিলে কি ওযু ভাঙ্গে না । তবে পাক-পবিত্র থাকা অবস্থায় গালি বা অশ্লিল কথা বা বাক্য
ব্যাবহার না করাটাই শ্রেয় ।
উলংগ হলে কি ওযু ভাঙ্গে
উলংগ হলে কি ওযু ভাঙ্গে? এই প্রশ্নটা অনেকেই করে থাকেন
। আসলে ওযু ভঙ্গের যে সকল কারন রয়েছে তার মধ্যে উলংগ হলে কি ওযু যে ভাঙ্গে এমন কথা
কোথাও লেখা নেই । আর সে কারনে বুঝতে হবে যে উলংগ হলে কি ওযু ভাঙ্গে না । তবে মহান আল্লাহ
পাক যেহেতু সব জায়গায় বিরাজমান তাই ওযু করে উলংঙ্গ না হওয়াটাই ভালো ।
জোরে হাসলে কি ওযু ভেঙে যায়
যে নামাজে রুকু সেজদা রয়েছে সেই নামাজে উচ্চস্বরে হাসলে
অযু এবং নামাজ উভয়ই নষ্ট হয়ে যায় । কিন্তু যে নামাজে রুকু সিজদা নেই ইহাতে উচ্চস্বরে
হাসলে শুধু নামাজ নষ্ট হয় অযু নষ্ট হয় না ।
আর নামাজের আগে আপনি যদি জোরে হাসেন তাহলে ওযু ভেঙে
যাবে না । তবে ওযু করে দুনিয়াবি কোনো খেয়ালে না থেকে মহান আল্লাহ পাকের ভয় অন্তরে রেখে
না হাসাটাই উত্তম ।
বায়ু বের হলে কি ওযু ভাঙ্গে
ওযু ভঙ্গের যে সকল কারন রয়েছে তার মধ্যে প্রথম কারন
হচ্ছে “প্রস্রাব পায়খানার রাস্তা দিয়া মল, মূত্র, বায়ু, বীর্য, চির-ক্রিমি ইত্যাদি
কোন কিছু বের হওয়া” । এর থেকে প্রতিয়মান হয় যে বায়ু বের হলে ওযু ভেঙ্গে যায় ।
নখ কাটলে কি ওযু ভাঙ্গে
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে নখ কাটলে কি ওযু ভাঙ্গে
কি না? এর উত্তর হচ্ছে ওযু ভঙ্গের যে ৭টি কারন রয়েছে তার মধ্যে এই কথা উল্লেখ নাই ।
অতএব নখ কাটলে কি ওযু ভাঙ্গে যাওয়ার কোনো সম্ভবনা নাই ।
গান শুনলে কি ওযু ভাঙ্গে
“গান শুনলে কি ওযু ভাঙ্গে কি না” এই প্রশ্নটি অনেকেই করে থাকেন । এর উত্তর হচ্ছে ওযু ভঙ্গের যে ৭টি কারন রয়েছে তার মধ্যে এই কথা উল্লেখ নাই । অতএব গান শুনলে কি ওযু ভাঙ্গে যাওয়ার কোনো সম্ভবনা নাই ।
এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।
আরও পড়ুনঃ হযরত হাসান রাঃ এর শাহাদাত | Martyrdom of Hazrat Hasan