নফল নামাজ কাকে বলে । দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ম

নফল নামাজ কাকে বলে । দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ম - মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য ফরজ নামাজের পাশাপাশি যে অতিরিক্ত নামাজ আদায় করা হয় সে গুলোকে সাধারনত সুন্নত এবং নফল নামাজ হিসাবে গণ্য । মহান আল্লাহ পাক আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদাত করার উদ্দ্যেশ্যে । মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মানুষ যে সকল ইবাদত বন্দেগী করে থাকে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হচ্ছে “নামাজ” ।

আরও পড়ুনঃ মহান আল্লাহর ৯৯টি নাম ও তার অর্থ

নফল নামাজ কাকে বলে । দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ম

আরও পড়ুনঃ হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ এর জীবনী | Biography of Hazrat Abu Bakr Siddique

অনেকেই নফল ইবাদত বা নফল নামাজ সম্পর্কে জানতে চান । আজকের ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো নফল নামাজ কাকে বলে এবং দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে । তাহলে চলুন দেখে নিই এবং জেনে নিই নফল নামাজ সম্পর্কে ।

মানব জাতীর জন্য মহান আল্লাহ পাক যে পাঁচ বিষয় অবশ্যই পালনীয় অর্থাৎ ফরজ করেছেন তার মধ্যে নামাজ অন্যতম । মুসলিম জাতী মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্তা নামাজ আদায় করে থাকে যা ফরজ হিসাবে পালনীয় বা আবশ্যিক ।

সুন্নাত নামাজ হলো রাসুল (সাঃ) যা ফরজ নামাজের পরে বা আগে যে নামাজ আদায় করতেন সেগুলো সুন্নত । আবার কিছু নামাজ আছে যে গুলোকে নফল বলে আখ্যায়িত করা হয় । এর জন্য নফল নামাজ পড়কে আজান-ইকামতের দরকার পড়ে না ।

নফল নামাজ কাকে বলে?

নফল কথাটির অর্থ হচ্ছে “অতিরিক্ত”, অর্থাৎ নফল নামাজ মানে হলো “অতিরিক্ত নামাজ” । শরিয়তের দৃষ্টিতে নফলের অর্থ হচ্ছে মানুষ যেটা করে যা তার উপর আবশ্যিক বা ওয়াজিব নয় । ফরজ ছাড়া যে কাজ গুলো করা হয় সেগুলোকে নফল বলে বিবেচিত । মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যে কেউ এই নফল নামাজ পড়তে পারে ।

নফল নামাজ কত প্রকার

আমরা দৈনিক যে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি তার মধ্যে ১৭ রাকাত ফরজ নামাজ । বিতির ৩ রাকাত ওয়াজিব নামাজ । ৪ ওয়াক্তে ১২ রাকাত সুন্নতে মুক্কাদা নামাজ । ২ ওয়াক্তে ৮ রাকাত সুন্নতে জায়েদা নামাজ । এগুলি ছাড়া অন্যান্য নামাজ হচ্ছে নফল নামাজ ।

নফল নামাজের মধ্যে ৫ ওয়াক্ত নির্ধারিত নফল নামাজ, যথা ---- ইশরাক নামাজ, চাশত নামাজ, জাওয়াল নামাজ, তাহাজ্জুদ নামাজ, আওয়াবিন নামাজ । এছাড়া আরও কিছু নফল নামাজ রয়েছে । এক কথায় ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ ছাড়া সব নামাজই নফল । (সুত্রঃ কিতাবুস সালাত)।

দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ম

মহান আল্লাহ পাকের ইবাদত-বন্দেগি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন । আর ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হচ্ছে নামাজ । নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হচ্ছে নফল নামাজ । এতে কোনো প্রকার সন্দেহ নাই ।

সাধারণত দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়ার নিয়ম । সাধারণত নফল নামাজ ফরজ নামাজের পরে পড়তে করতে হয় । যে সময়গুলোতে নামাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে সে সময় ব্যতীত যে কোন সময়ই নফল নামাজ পড়া যায় । উল্লেখ থাকে যে অন্যান্য নামাজের মতোই নফল নামাজ পড়তে হয় ।

👉 প্রথমে দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত করবেন । আরবিতেই নিয়ত জরুরি নয় । বাংলায় করলেও হবে । এমনকি মুখে উচ্চারণ না করে মনে মনে নিয়ত করলেও হবে ।

👉 এরপর কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে “আল্লাহু আকবার” বলে নাভির নিচে হাত বাঁধতে হবে ।

👉 এরপর সানা পড়বেন এবং আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়তে হবে ।

👉 এরপর সুরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং আমিন বলে বিসমিল্লাহ পড়ে তারপর অন্য একটি সুরা পড়তে হবে ।

👉 তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকু করতে হবে । তিনবার রুকুর তাসবিহ (সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْم) পড়তে হবে । এবার সামিয়াল্লা-হুলিমান হামিদাহ বলে রুকু থেকে উঠে দাড়াতে হবে ।

👉 এরপর রুকু থেকে দাড়িয়ে রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হবে । তারপর “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদায় গিয়ে আবার তিনবার সিজদার তাসবিহ (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى) পড়তে হবে ।

👉 এবার “আল্লাহু আকবার” বলে বসতে হবে । এবার আবার “আল্লাহু আকবার” বলে দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে আবার তিনবার তাসবিহ পড়তে হবে ।

👉 এবার “আল্লাহু আকবার” বলে দাঁড়িয়ে যেতে হবে । এবার আগের রাকাতের মতোই বিসমিল্লাহ পড়ে, সুরা ফাতিহা পড়ে, আরেকটা সুরা মিলিয়ে দ্বিতীয় রাকাত পূর্ণ করতে হবে ।

👉 এরপর শেষে বৈঠকে বসে আত্যাহিয়াতু (তাশাহহুদ), দরুদ শরিফ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নফল নামাজ শেষ করতে হবে ।

অন্য পোস্টঃ 

নফল নামাজের নিষিদ্ধ সময়

অনেকেই নফল নামাজ পড়ার নিষিদ্ধ সময় সম্পর্কে জানতে চান । কোন কোন সময় নফল নামাজ পড়া নিষিদ্ধ তা অনেকেরই অজানা । আপনাদের জানার সুবিধার্তে নিচে নফল নামাজ পড়ার নিষিদ্ধ ৫টি সময় উল্ল্যেখ করা হলো -----

১। সূর্যোদয়ের সময় সব রকম নামাজ নিষিদ্ধ ।

২। সূর্য মাথার উপর স্থির থাকা অবস্থায় নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরিমি ।

৩। সূর্যাস্তের সময় চলমান আসর ব্যতীত অন্য কোনো নামাজ বৈধ নয় ।

৪। এ ছাড়া ফজর নামাজের ওয়াক্ত হলে তখন থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত

৫। আসর ওয়াক্তে ফরজ নামাজ পড়া হলে তখন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো ধরনের নফল নামাজ পড়া নিষেধ।

এই পাঁচটি সময় বাদে অন্য যেকোনো সময় নফল নামাজ পড়া যায়। (সুত্রঃ আওকাতুস সালাত) ।

নফল নামাজ কত রাকাত?

নফল নামাজে দুই রাকাত করে নিয়ত করাই উত্তম । রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “রাত-দিনের (নফল) নামাজ দুই দুই রাকাত” । নফল নামাজের ক্ষেত্রে মনে রাখবেন, নামাজটা যেন একটু দীর্ঘায়িত হয় এবং সিজদায় একটু দীর্ঘ সময় কাটানো । নফল নামাজ সাধারণত দুই রাকাত করে আদায় করতে হয় ।

দুই-রাকাত নফল নামাজের নিয়ত

আপনি যে কোনো ভাবে নিয়ত করতে পারেন । আপনি যদি আরবিতে নাও পারেন আপনি আপনার মাতৃভাষায় নিয়ত করতে পারেন । শুধু মাত্র নিয়ত করবেন যে, মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ করছি । নিচে আরবি উচ্চারণ ও বাংলায় উচ্চারণ দেওয়া হলো ।

দুই-রাকাত নফল নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ

বাংলা-উচ্চারনঃ নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাক’আতাই ছালাতিল নফলে মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

দুই-রাকাত নফল নামাজের নিয়ত বাংলা অর্থ

বাংলা অর্থঃ আমি দুই-রাকাত নফল নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলা মুখী হয়ে নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার ।

দুই-রাকাত নফল নামাজের নিয়ত আরবি উচ্চারণ

আরবি-উচ্চারনঃ نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى رَكْعَتِ صَلَوةِالْنَفْلِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ

নফল নামাজ সমূহ

আপনি ইচ্ছা করলেই মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নফল নামাজ পড়তে পারেন । তারপরও যে নফল নামাজ গুলোর বিষয়ে বিশেষ ভাবে বলা হয়েছে সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো । শুধু মাত্র নিষিদ্ধ সময় গুলো খেয়াল রাখবেন ।

তাহিয়্যাতুল ওজু নামাজ

পবিত্রদা অর্জনের জন্য অজু করার পর কারো সাথে কোন প্রকার কথাবার্তা না বলে, অজুর পানি শরিরে শুকিয়ে যাবার আগেই দুই রাকাত নামাজ পড়া মুস্তাহাব বলে বিবেচিত ।

দুখলুল মসজিদ নামাজ

মসজিদে প্রবেশের পর না বসেই দুই রাকাত নফল নামাজ পড়াকেই মসজিদে দাখিল হওয়ার নামাজ বা দুখলুল মসজিদের নামাজ বলা হয় । রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা মসজিদে ঢুকেই বসে পড়ো না । অবশ্যই দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল অজু বা দুখলুল মসজিদের নামাজ আদায় করার পর বসবে । (সুত্রঃ সহিহ বুখারি ও মুসলিম) ।

চাশতের নামাজ

চাশতের নামাজ দুই রাকাত থেকে বারো রাকাত পর্যন্ত পড়া যায় । এই নামাজ পড়ার সময় হচ্ছে গরমকালে সকাল ৯টা থেকে ১১.৩০ পর্যন্ত আর শীতকালে সকাল ১০টা থেকে ১১.৩০ পর্যন্ত সময় থাকে ।

আওয়াবিন নামাজ

আওয়াবিন নামাজ পড়তে হয় মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার পর। আওয়াবিন নামাজ দুই রাকাত করে ৬ থেকে ২০ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায় ।

তাহাজ্জুদের নামাজ

তাহাজ্জুদের নামাজ নফল নামাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ নামাজ । পবিত্র কোরআনে এই নামাজের বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্বের কথা বর্ণনা করা হয়েছে । স্বয়ং আল্লাহ্‌ রাসুল (সাঃ) কে এই নামাজ আদায় করার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন ।

নফল নামাজের ফজিলত

মানুষ যে ফরজ ইবাদত গুলো করে সেগুলিতে যদি কোনো প্রকার ঘাটতি থাকে তা হলে সেগুলো নফল ইবাদতের মাধ্যমে পুরন হয়ে যায় । এছাড়াও নফল নামাজের গুরুত্ব অনেক । যেমন – তাহাজ্জুদের নামাজ ।

গভীর রাতে এই তাহাজ্জুদের নামাজের মাধ্যমে মানুষ তার যে কোনো আকাংখার কথা মহান আল্লাহ পাকে কাছে জানাতে পারে এবং মহান আল্লাহ পাক তা কবুল করে নেন ।


এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


আরও পড়ুনঃ হযরত আলী রাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী | Short Biography of Hazrat Ali

Previous Post Next Post