হাঙর নদী গ্রেনেড – সেলিনা হোসেন | বুক রিভিউ

হাঙর নদী গ্রেনেড – সেলিনা হোসেন | বুক রিভিউ - সেলিনা হোসেন বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক । তার লেখায় বাঙালির চেতনা ও অহংকার বাংলার ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে ।

সেলিনা হোসেনের লেখা গল্প ও উপন্যাস বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, তার মধ্যে ইংরেজি, রুশ, মেলে এবং কানাড়ী ভাষা উল্লেখযোগ্য । তার লেখা “হাঙর নদী গ্রেনেড” একটি বাংলার মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস । আজকের বুক রিভিউতে সেলিনা হোসেন এর “হাঙর নদী গ্রেনেড” নিয়ে আলোচনা করবো ।

আরও পড়ুনঃ রাইফেল রোটি আওরাত – আনোয়ার পাশা | বুক রিভিউ

হাঙর নদী গ্রেনেড – সেলিনা হোসেন

আরও পড়ুনঃ আরেক ফাল্গুন – জহির রায়হান | বুক রিভিউ

বন্ধুরা, আজকের ব্লগ পোস্টে যে বইটির রিভিউ করবো সেই বইটির নাম “হাঙর নদী গ্রেনেড” । হাঙর নদী গ্রেনেড এর লেখক বাংলাদেশের বিখ্যাত সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন । এই উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশীত হয় ১৯৭৬ সালে । তাহলে চলুন বন্ধুরা হাঙর নদী গ্রেনেড – সেলিনা হোসেন সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক ।

হাঙর নদী গ্রেনেড উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু

হাঙ্গর নদী গ্রেনেড প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন রচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন যশোরের কালিগঞ্জ গ্রামের এক মায়ের সত্য ঘটনা অবলম্বনে তিনি এ উপন্যাসটি রচনা করেন ।

১৯৭২ সালে গল্পাকারে ঘটনাটি লেখেন এবং সমকালীন একটি পত্রিকায় ছাপা হয় । পরে তিনি ১৯৭৪ সালে গল্পটিকে উপন্যাসে রূপান্তর করেন এবং ১৯৭৬ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ।

“হাঙ্গর নদী গ্রেনেড” মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ সন্তানহারা মায়ের প্রতিচ্ছবি । উপন্যাসের ধারাবাহিকতায় গ্রামীণ পরিবেশ যেমন উঠে এসেছে তেমনি উঠে এসেছে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য গ্রামের সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের কাহিনী ।

এ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম “হাঙ্গর নদী গ্রেনেড” নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন ।

হাঙর নদী গ্রেনেড উপন্যাস pdf

বন্ধুরা, আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা “হাঙর নদী গ্রেনেড উপন্যাস pdf” খোঁজ করে থাকেন । আপনাদের সুবিধার্তে এখানে হাঙর নদী গ্রেনেড উপন্যাস এর pdf ফাইলটি দেওয়া হলো । এখান থেকে উপন্যাসটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন ।

হাঙরনদী গ্রেনেড উপন্যাস pdf

হাঙর নদী গ্রেনেট – সেলিনা হোসেন
হাঙর নদী গ্রেনেড – সেলিনা হোসেন

হাঙর নদী গ্রেনেড লেখক পরিচিতি

নামঃ সেলিনা হোসেন ।

জন্মঃ ১৪ জুন ১৯৪৭, রাজশাহী ।

উপন্যাসঃ জলোচ্ছ্বাস (১৯৭২), হাঙ্গর নদী গ্রেনেড (১৯৭৬), মগ্ন চৈতন্য শিস (১৯৭৯), যাপিত জীবন (১৯৮১), নীল ময়ূরের যৌবন (১৯৮২), পোকামাকড়ের ঘরবসতি (১৯৮৬), নিরন্তর ঘন্টাধ্বনি (১৯৮৭), কাঁটাতারে প্রজাপতি (১৯৮৯), কালকেতু ও ফুল্লোরা (১৯৯২), ভালোবাসা প্রীতিলতা (১৯৯২), দীপান্বিতা (১৯৯৭), যুদ্ধ (১৯৯৮), ধূমকেতুর ঈশ্বর (২০০৪) ।

গল্পগ্রন্থঃ উৎস থেকে নিরন্তর (১৯৬৯), জলবতী মেঘের বাতাস (১৯৭৫), খোল করতাল (১৯৮২), একালের পান্তাবুড়ি (২০০২), অবেলার দিনক্ষণ (২০০৯), মৃত্যুর নীল পদ্ম (২০১৪) ।

প্রবন্ধ গ্রন্থঃ স্বদেশে পরবাসী (১৯৮৫), ঊনসত্তরের গণ আন্দোলন (১৯৮৫), একাত্তরের ঢাকা (১৯৮৯), নির্ভয় করো হে (১৯৯৮), মুক্ত করো ভয় (২০০০), পূর্বাঞ্চল থেকে বাংলাদেশ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শেখ মুজিবুর রহমান (২০২০) ।

শিশুসাহিত্যঃ সাগর (১৯৯১), কাকতাড়ুয়া (১৯৯৬), বর্ণমালার গল্প (১৯৯৭), মেয়রের গাড়ি (২০০৩), চাঁদের বুড়ি পান্তা ইলিশ (২০০৮) ।

পুরস্কারঃ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৭), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (২০০৯), সার্ক সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫), স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) । --- সেলিনা হোসেন বর্তমানে বাংলা একাডেমির প্রথম নারী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন

অন্য পোস্টঃ 

হাঙর নদী গ্রেনেড – গ্রন্থ সংক্ষেপ

মহান মুক্তিযুদ্ধে গ্রাম বাংলার একজন আটপৌরে নারীর অপরিসীম ভূমিকা পালনে সারাৎসার আলোচ্য এ উপন্যাসে । বাংলাদেশের আর দশটা গ্রামের মতোই সাধারণ একটি গ্রাম হলদীগাঁ ।

হলদি গায়ের এক দুরন্ত কিশোরী বুড়ি । কৈশোর কাল থেকে সে চঞ্চল, কৌতুহল প্রবণ, উচ্ছলতায় ভরপুর । নিতান্ত কম বয়সেই তার বিয়ে হয় বিপত্নীক গফুরের সাথে । গফুরের সংসার তার আগের স্ত্রীর রেখে যাওয়া সলিম ও কলিম নামে দুটো ছেলে আছে ।

সংসার জীবন ভালোই লাগে বুড়ির । যদিও গফুর বুঝে উঠে না বুড়িকে, আগের বৌয়ের মত নয় । কখন কি বলে কি করে বসে তার অংক মেলানো ভার । অবশ্য কারও সঙ্গে ওর কোন কিছু নিয়ে লাগেনা, কাউকে মন্দ বলে না, কেউ বললে ভ্রুক্ষেপও করেনা ।

এরইমধ্যে মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়ে ওঠে বুড়ির । সলিম কলিম থাকলেও নাড়িছেঁড়া সন্তান চায় সে । অবশেষে জন্ম নেয় বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী সন্তান রইস । তাতেও ভালোবাসা উপচে পড়ে ।

কিছুদিন পর মারা যায় গফুর । বিয়ে হয় সলিমের । কলিমের বিয়ের কথার সময় থেকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ । বন্ধ হয়ে যায় সব আলোচনা । যুদ্ধের ঢেউ আসে হলদীগাঁয়ে । সেই ঢেউয়ের উথাল পাথাল হয়ে যায় বুড়ির সাজানো সংসার ।

বুড়ির চোখের সামনে দেখা সেই হলদিয়া যেন ছারখার হতে থাকে মিলিটারির পদচারণায়, অত্যাচারে । হত্যা-ধর্ষণ, কোলের শিশুকে পর্যন্ত প্রাণ দিতে হয় ।

সলিম যায় যুদ্ধে । কলিমকে পাকিস্তানি আর্মি ও তার দোসররা বুড়ির চোখের সামনে নির্মমভাবে হত্যা । করে হলদি গায়ে মাটিতে রচিত হয় নির্মম দৃশ্য ।

যে দৃশ্য রচনাকার একজন মা, বুড়ি । হাফেজ ও কাদের দুই মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করতে করতে শত্রুপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে আশ্রয় নেয় বুড়ির ঘরে । পিছুপিছু ওরাও আসে বাড়িতে । এ সময় সংঘটিত হয় ইতিহাসের ভিন্ন এক মাহেন্দ্রক্ষণ ।

দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায় একজন মা মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে নাড়িছেঁড়া সন্তানকে তুলে দেয় বন্দুকের নলের মুখে । সন্তানের নাম রইস ।

মায়ের নাম বুড়ি । যার প্রতীতি এ রকম: “ওরা এখন হাজার হাজার কলিমের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিচ্ছে । ওরা হালদী গাঁয়ের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে লড়ছে । ওরা আচমকা ফেটে যাওয়া শিমুলের উজ্জ্বল ধবধবে তুলো । বুড়ি এখন ইচ্ছা করলেই শুধু রোইসের মা হতে পারে না । বুড়ি এখন শুধু রইসের একলার মা নয়” ।

“হাঙ্গর নদী গ্রেনেড” তখন মহাকাব্যের আখ্যান হয়ে ওঠে । বুড়ি হয়ে যায় ইতিহাস-কন্যা । হলদীগাঁ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দেয় আমাদের সামনে ।

হাঙ্গর নদী গ্রেনেড FAQ

প্রশ্নঃ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস কোনটি?

উত্তরঃ হাঙ্গর নদী গ্রেনেড

প্রশ্নঃ হাঙ্গর নদী গ্রেনেড এর লেখক কে?

উত্তরঃ সেলিনা হোসেন

প্রশ্নঃ হাঙ্গর নদী গ্রেনেড কোন প্রেক্ষাপটে রচিত?

উত্তরঃ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ।


এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


অন্য পোস্টঃ শরীরের ওজন বৃদ্ধি করার সহজ উপায় | ওজন বাড়ানোর উপায়

Previous Post Next Post