অতিরিক্ত ওজন কমানোর সহজ উপায় | Easy Way to Lose
Excess Weight - অতিরিক্ত শারীরিক ওজন কেউই চান না । আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা ওজন
কমানোর জন্য অনেক টাকা খরচ করছেন । কিন্তু কাংক্ষিত লক্ষ্যে পৌছুতে পারছেন না । অনেকেরই
সুস্থ থাকার জন্য ওজন কমানো জরুরী হয়ে পড়ে ।
নিজেকে সুস্থ্য রেখে ওজন কমানো যায় । আর আপনি যদি খুব দ্রুত ওজন কমাতে চান তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওজন কমাতে হবে। ওজন কমানোর এই পদক্ষেপের মধ্যে শুধু খাবার নয় পুরো জীবন-যাপনকেই একটা অভ্যাসের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে । তাহলেই আপনার কাংক্ষিত সাফল্য মিলবে ।
আরও পড়ুনঃ গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা | গ্রিন টি বিস্তারিত
আরও পড়ুনঃ কাজু বাদামের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়মআজকের ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো কিভাবে আপনার খুব সহজে অর্থাৎ অতিরিক্ত ওজন কমানোর সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করবো । তাহলে চলুন জেনে নিই ওজন কমানোর কিছু উপায় ।
হামদর্দ ওজন কমানোর ঔষধ
হামদর্দ একটি আয়ুর্বেদিক ঔষধ কোম্পানী । সারা বাংলাদেশে
এদের শাখা আছে । হামদর্দের বেশ কিছু ঔষধ আছে যে গুলো ওজন কমাতে সহায়তা করে । এর মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হচ্চে ছাফী (SAFI) সিরাপ । এই সিরাপটি আপনার শরীরের ওজন কমিয়ে আপনাকে রাখবে
স্মার্ট ।
ছাফী সিরাপ আরও যে যে রোগের জন্য কার্যকর তা হলো ব্রণ,
স্কিন রোগ, Dermatologic রোগ, শূলবেদনা কোষ্ঠকাঠিন্য, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, Azoospermia
ইত্যাদি । এই ঔশধটি ৪৫০ এমএল, ২০০ এমএল, ১০০ এমএল সাইজে পাবেন । ওজন কমাতে চিকিৎসকের
পরামর্শ নিয়ে খেতে পারেন ।
শীতে ওজন কমানোর উপায়
শীতের সময় বাহারী রকমের সবজি পাওয়ায়া যায় । এই সমস্ত
সবজিতে আঁশ ও প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে যেগুলো অতিরিক্ত ওজন কমাতে
সক্ষম । শীতকাল হচ্ছে ওজন কমানোর মোক্ষম সময় । শীতের সময় কম ক্যালোরীযুক্ত এবং সঠিক
খাবার গ্রহন করলে সহজেই আপনরা ওজন কমিয়ে আনতে পারবেন । শীতকালে যে খাবার পাওয়া যায়
সেগুলোতে প্রচুর পরিমান আমিষ, শর্করা, ভিটামিন থাকে । এসব উপাদান শরীর ঠিক রাখার পাশাপাশি
ওজন কমাতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে ।
শীতের সময় এ কারনেই বলবো “ভাতের উপর চাপ কমান, বেশি
করে সবজি খান”, আর তাহলে আপনার ওজন আপনি কমাতে পারবেন ।
ওজন কমানোর হোমিও ঔষধের নাম
ওজন কমানোর জন্য অনেক প্রকার হোমিও ঔষধ আছে । তার মধ্যে
যেগুলো বেষ্ট সেগুলো নিম্নে বর্ননা করা হলো ।
আপনার শরীরে যদি অনেক চর্বি জমার ওজন বৃদ্ধি পায় তাহলে
প্রত্যেকদিন সকালে ও সন্ধ্যার সময় খালি পেটে Fucus ves Q একটি কাপে অল্প পানিতে ১০
ফোটা ঔষধ মিশিয়ে পান করুন ।
আপনার শরীরে যদি অতিরিক্ত ওজন এবং চর্বি জমে যায় তাহলে
হোমিও Phytolacca Berry Q ঔষধটি খেতে পারেন । এটি মানব শরীরের অতিরিক্ত মেদ জমতে বাধা
দেয় । এই ঔষধটি প্রতিদিন সকালে ও বিকালে ১০ ফোটা করে অল্প পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন
এবং এর সঙ্গে Phytolacca Berry 3X ঔষধটি (ট্যাবলেট) ১টি করে দিনে ৩ বার হালকা গরম পানি
দিয়ে খেতে পারেন । আশা করি ভালো ফল পাবেন ।
শরীরের ওজন ও অতিরিক্ত চর্বি কমাতে Phytolacca
Berry ট্যাবলেট খুবই কার্যকর । এই ঔষধটি Schwabe India কোম্পানীর । এই হোমিও ঔষধটি
ওজন কমাতে বেশ কার্যকর ।
ওজন কমানোর ইসলামিক উপায়
আমাদের শেষ এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন
– পেটের এক-তৃতীয়াংশ পরিমান খাবার খাও, এক-তৃতীয়াংশ পানি খাও এবং এক-তৃতীয়াংশ খালি
রাখো । এর থেকেই বোঝা যায় ইসলামে স্বাস্থ্যের প্রতি কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ।
এছাড়াও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রোজার মাসে ছাড়াও
মাসে তিনি নিজে তিন দিন রোজা রাখতেন এবং সবাইকে রোজ রাখতেও বলেছেন । বিশ্বনবী হযরত
মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, “প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখো” । (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
হযরত কাতাদাহ (রাঃ) বলেন, “বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ
(সাঃ) আমাদের (হিজরি মাসের) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন” । (আবু দাউদ
ও নাসায়ি)
রোজার মাধ্যমে ওজন কমানোর উৎকৃষ্ট উপায় হিসাবে স্বাস্থ্য
বিজ্ঞানীদের দ্বারাই স্বীকৃত । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে,
রোজা মানবদেহের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে । রোজা শধুমাত্র
ধর্ম এর জন্য নয় বরং স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে । শরীরের উচ্চ রক্তচাপ
কমাতে এবং শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দিতে রোজা অগ্রনী ভুমিকা পালন করে ।
ওজন কমানোর দোয়া
ওজন কমাতে হলে প্রথমে আপনাকে ডায়েট এবং সময় মতো ব্যায়াম
করতে হবে । এর পাশাপাশি আপনি আমল করতে পারেন । এতে করে আপনার কাজটি সহজ হবে । যদি আপনি
শুধু আমল করেন তাহলে ওজন কমবে না । মহান আল্লাহ পাক দুনিয়াতে যত রোগ দিয়েছে তার ঔষধও
তিনি দিয়েছেন ।
ওজন কমানোর দোয়া হিসাবে আপনি “আয়াতে শিফা” পড়তে পারেন
। আয়াতে শিফা হলো পবিত্র আল কোরআনের ৬ টি ভিন্ন ভিন্ন সূরার আয়াত । কঠিন এবং জটিল রোগ
থেকে বাঁচতে উক্ত ৬টি আয়াত পড়ে পানিতে ফু দিয়ে সেই পানি পান করলে মহান আল্লাহ পাক রোগ
থেকে মুক্ত দেন । “আয়াতে শিফা” শিখতে ইউটিউবে সার্চ করুন ।
আরও পড়ুনঃ
- ঘুম নিয়ে কিছু কথা | ঘুম বিষয়ক কিছু উপকারী তথ্য
- কালোজিরা ও মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা | কালোজিরা ও মধুর উপকারিতা
- সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত হাঁটুন | হাঁটার উপকারিতা সমূহ
ওজন কমানোর ক্যাপসুল
বাজারে ও ফার্মেসিতে ওজন কমানোর ক্যাপসুল অনেক আছে ।
সেখান থেকে আপনি আপনার পছন্দ মতো কিনতে পারেন । সব থেকে ভালো হয় যদি এক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
এর সাথে কথা বলে ঔষধ খেতে পারেন । তাহলে রিস্ক কম থাকবে এবং ফল ভালো পাবেন । আর নিয়মিত
সুষম খাবার গ্রহন এবং ব্যায়াম করুন তাহলে সুস্থ্য সবল থাকতে পারবেন ।
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়
ওজন কমানোর জন্য লেবু একটি কার্যকরী ফল । লেবুতে প্রচুর
পরিমান ভিটামিন-সি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা মানবদেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে বেশ সহায়তা
করে । আপনি রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে অর্ধেক লেবুর রসের সাথে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি
খেতে পারেন । এটি অত্যান্ত কার্যকরী একটি উপায় ওজন কমানোর জন্য । আর প্রতিদিনের খাবারের
সাথে লেবু রাখতে পারেন যা আপনার ভিটামিন-সি এর অভাব পুরন করার পাশাপাশি ওজন কমাতে সাহায্য
করবে ।
টক দই দিয়ে ওজন কমানোর উপায়
টক দই ওজন কমাতে অনেক কার্যকরী একটি উপাদান । এতে আছে
মানবদেহের জন্য কিছু উপকারি ব্যাকটেরিয়া যা শরীরের খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলো তাড়াতে সাহার্য
করে । টক দই দুধ থেকে তৈরি হলেও এতে ফ্যাটের পরিমান খুবই কম । এতে আছে প্রচুর পরিমান
ক্যালসিয়াম যা ওজন কমাতে সাহয্য করে ।
টক দই রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমায় ফলে স্ট্রোকের ঝুকি
কমায় এবং হার্টের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় । এছাড়া টক দইয়ের সাথে ফল খেলে অতিরিক্ত ক্ষুধা
বোধ কমে । যা ওজন কমানোর পক্ষে খুব দরকার । আবার অতিরিক্ত টক দই শরীরের পক্ষে খুব খারাপ
। আমাদের সকলেরই উচিত ওজন কমাতে সঠিক নিয়মে টক দই গ্রহন করা ।
ওজন কমানোর কিছু সহজ উপায়
ওজন কমাতে যে আপনাকে জিমে যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই
। আপনার দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস বদলে ফেললে অনেক খানি ওজন কমাতে পারবেন । দৈনিক যে কাজগুলো
সেগুলোই করার ধরন যদি বদলে ফেলেন তাহলেই দৈনিক ১০০ ক্যালোরি খরচ করা যায় ।
দ্রুততম উপায়ে ক্যালোরি পোড়াতে চান, তাহলে জেনে রাখুন
সহজ কাজে ১০০ ক্যালোরি পোড়ানোর দ্রুততম উপায়গুলো । না, এর জন্য আপনাকে বাড়তি কোন সময়
ব্যয় করতে হবে না । বরং বদলে ফেলতে হবে কিছু অভ্যাস । ওজন কমানো মানেই জিমে গিয়ে ব্যায়াম
করা নয়, বরং নিজের দৈনন্দিন জীবনের ফাঁকেই একটু বুদ্ধি করলে ঝরিয়ে ফেলতে পারবেন বাড়তি
মেদ ।
১) সকালে ২০-২৫ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন ।
২) দৈনিক ১৫ মিনিট সাইকেল চালাতে অভ্যাস করুন ।
৩) উপরের তলায় উঠতে লিফটকে "না" বলে সিঁড়ি
দিয়ে উঠুন ।
৪) হেঁটে হেঁটে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করুন ।
৫) কখনও কখনও গান ছেড়ে মন খুলে নাচুন মিনিট পনেরো ।
৬) বসে থাকার অভ্যাসটা বাদ দিয়ে কিছু না কিছু করুন ।
৭) দৈনিক কমপক্ষে দুই কাপ গ্রিন টি পান করার চেষ্টা
করুন ।
৮) নিজের কাজগুলো নিজেই করুন রোজ । যেমন কাপড় ধোঁয়া,
বিছানা করা, ঘর পরিষ্কার ইত্যাদি ।
৯) একটু স্পাইসি খাবার খান । মশলা মেটাবোলিজম বাড়ায়
ও ক্যালোরি পোড়াতে সহায়তা করে ।
১০) ফ্যাট বা তেল যুক্ত যে কোন খাবার খাওয়ার পরই বরফ
শীতল পানি বা পানীয় পান করবেন না । ঠাণ্ডা কিছু খেতেই হলে ৩০ মিনিট পর খান ।
১১) খাবার খান সময় নিয়ে, ভালমত চিবিয়ে খান ।
১২) কোমল পানীয় একেবারেই বাদ দিন ।
১৩) প্রতিদিন রাতে ভালমত ঘুমানোর চেষ্টা করুন । কমপক্ষে
৭-৮ ঘন্টা ঘুমান ।
১৪) দৈনিক মিনিট দশেক স্কিপিং বা লাফ দড়ি খেলুন ।
১৫) ব্যায়াম করতে ভালো লাগে না? পিং পং বল খেলাটা খেলতে
পারেন । এটা কিন্তু একটি ভালো ব্যায়াম ।
১৬) আপনার যদি ছাঁদ থাকে তাহলে গড়ে তুলতে পারেন বাগান
।
১৭) প্রতিদিন ফ্রিজবী বা দৌড়ে খেলতে হয় এমন কোন খেলা
খেলুন ।
১৮) নিয়মিত মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন ।
১৯) মন খুলে হাসুন, আনন্দ করুন । আপনি জানেন কি কেবল
হেসেই মিনিটে ১.৩ ক্যালোরি পোড়ানো যায়? মনে রাখবেন, বিষণ্ণতা মানুষকে দ্রুত মোটা বানিয়ে
ফেলতে সাহায্য করে ।
২০) স্ট্রেস বা চিন্তা মুক্ত জীবন যাপন করুন ।
২১) সম্ভব হলে দৈনিক ঘর মুছা-মুছি করুন । এটা খুব ভালো
ব্যায়াম এবং সহজে ক্যালোরি পোড়ায় ।
২২) মুখের মেদ কমাতে চিনি ছাড়া চুইং গাম চিঁবোতে পারেন
।
২৩) প্রতিবেলায় খাবারের তালিকার সাথে সালাদ রাখুন ।
২৪) চা-কফিতে চিনি খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিয়ে দিন ।
২৫) সাঁতার, ব্যাডমিনটন, বিলিয়ার্ড ইত্যাদিও খেলুন ।
এতে মন-শরীর দুটোকেই ভালো রাখে ।
এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।
আরও পড়ুনঃ যোগ ব্যায়াম করার উপকারিতা | Benefits of Yoga Exercises