যোগ ব্যায়াম করার উপকারিতা | Benefits of Yoga Exercises - বর্তমান সময়ে অনেক মানুষই তার স্বাস্থ্য নিয়ে খুবই সচেতন । যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে মানব দেহের সুস্থ্যতায় এর চর্চা হয়ে আসছে প্রচীন কাল হতে । আমাদের ভারতবর্ষে বহু প্রাচীনকাল থেকে যোগ ব্যায়াম এর চল রয়েছে । যোগ ব্যায়ামের রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা । আর সে কারনে যোগ ব্যায়াম করার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন ।
আরও পড়ুনঃ কফির উপকারিতা অপকারিতা
যোগ ব্যায়াম করার উপকারিতা | Benefits of Yoga Exercises |
যোগ ব্যায়াম করার উপকারিতা
যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে দেহ এবং মনের প্রশান্তি ঘটানো সম্ভব । আজ আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গাতে গড়ে উঠেছে ইয়োগা সেন্টার বা যোগ ব্যায়াম ট্রেনিং সেন্টার । সেখানে মানুষ স্বানন্দে যোগ ব্যায়াম শিখছে ।
এক
কথায় বলতে গেলে যোগ ব্যায়াম মানুষের মানষিক প্রশান্তি এবং শারীরিক সুস্থতার
অন্যতম অধ্যায় হয়ে উঠেছে । তাই যোগ ব্যায়ামের নানা উপকারিতার কথা আপনাদের জানাতে
আজকের এই প্রতিবেদন ।
ফিটনেস
শারীরিকভাবে সুস্থ মানেই কিন্তু
পুরোপুরি ফিট থাকা নয় । তখনই পুরোপুরি ফিট যখন মানসিক, আধ্যাত্মিক, শারীরিক ও
সামাজিকভাবেই আপনি সুস্থ থাকবেন । যোগাসন আপনাকে আপনাকে সর্বদা ফিট রাখে শারীরিক,
মানসিক, আধ্যাত্মিক সব ভাবেই ।
শারীরিক সমস্যার সমাধান
যোগ ব্যায়াম এর দ্বারা অনেক শারীরিক
সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, করোনারি আর্টারি ব্লকেজ ইত্যাদি রোগ থেকে
মুক্তি পাওয়া সম্ভব এবং শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে একটা সুস্থ জীবন কাটানো
সম্ভব হবে ।
স্ট্রেস কমায়
সারা দিনের কাজের চাপে আমরা সবাই
কমবেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ি । কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পর ক্লান্ত লাগে । অনেক সময়ই মেজাজ
খারাপ থাকে । এর কারণ কিন্তু স্ট্রেস । যোগ ব্যায়াম কিন্তু এর থেকে মুক্তি দেয় ।
কিছু কিছু যোগাসন, প্রাণায়াম এবং ধ্যান করে স্ট্রেসকে দূরে রেখে প্রাণোচ্ছ জীবন
যাপন করা সম্ভব ।
মানসিক শান্তি বৃদ্ধি
মানসিক শান্তি কে না চায়? একটুখানি
মানসিক শান্তি পাওয়ার জন্য আমাদের কতই না প্রচেষ্টা । তাই নিয়ম করে একটু যোগাসন,
ধ্যান, প্রাণায়াম, নিউরোবিক ইত্যাদির মাধ্যমে মনোসংযোগ এবং মানসিক শান্তি উভয়ই
বাড়ানো সম্ভব । অভ্যাস করে দেখুন, নিশ্চিত ফল পাবেন ।
এনার্জি বাড়ায়
সারা দিন শেষে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি ।
বাড়ি ফেরার পর আর একটুও এনার্জি অবশিষ্ট থাকে না । সারা দিনে মাত্র কয়েক মিনিটের যোগ
ব্যায়াম কিন্তু সারা দিনের পরও এনার্জির জোগান দেবে । সকালে ঘুম থেকে উঠে
কিছুক্ষণ যোগ ব্যায়াম করলে কাজের ফাঁকেও ফ্রেশ আর এনার্জেটিক থাকা যাবে ।
অন্য পোস্টঃ
দুশ্চিন্তা দূর করে
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে কর্টিজল
নামক হরমোনের ক্ষরণ হয়, তাও অনেকাংশে কমাতে সাহায্য করে যোগ ব্যায়াম । এরফলে,
দুশ্চিন্তা, হাড়ের সমস্যা, পেটের চারিদিকে মেদ জমে যাওয়া এইসব সমস্যা খুব সহজেই
দূর হয়ে যায় ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
নানারকম যোগ ব্যায়াম নিয়মিত চর্চা
করলে আমাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । যোগাসন রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে
টিস্যু এবং পেশিকে শক্তি দেয় । শ্বেতকণিকাগুলোকে আরো উজ্জীবিত করে প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ায় ।
শরীরের শিথিলতা এবং ভারসাম্য বজায় রাখে
যোগ ব্যায়াম নিয়মিত চর্চা করলে আমাদের
মাংসপেশি যেমন শিথিল হয়ে ওঠে, তেমনই আমাদের ওজন সঠিক রেখে দেহের ভারসাম্য বজায়
রাখতে সাহায্য করে ।
শক্তি বৃদ্ধি করে
যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের শরীরে
শক্তি বৃদ্ধি পায় । এরফলে আমাদের শারীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ সচল এবং মজবুত হতে
শুরু করে । যেমন- কোমর, বুক, হাত, পা ইত্যাদি । এছাড়াও মাজার ব্যাথা, বাতের
বিভিন্ন সমস্যা ইত্যাদি রোধ করতেও সাহায্য করে যোগ আসন ।
মন ভাল রাখে
যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের
স্নায়ুতন্ত্র এবং অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির কাজ সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয় এবং এন্ডোরফিন
হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে । এর ফলে আমাদের মন ভাল থাকে, ধৈর্য বৃদ্ধি পায় এবং গঠনমূলক
চিন্তা-ভাবনা করতে সাহায্য করে ।
অহং নিয়ন্ত্রণ রাখে
ইগো, হিংসা এগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতেও
যোগ ব্যায়ামের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে । এমনকি, নিয়মিত যোগ করলে যে কোনও
অবস্থায় আমাদের শান্ত এবং ধৈর্য বজায় থাকে । এর ফলে, শরীর এবং মন ভালো থাকে ।
মেরুদন্ড ঠিক রাখে
দৈনিক যোগাসন অভ্যাসে মেরুদণ্ডের
নমনীয়তা এবং স্থিতিস্থাপকতা বাড়ে । এতে মেরুদণ্ডে ছয়টি স্নায়ুকেন্দ্রে প্রবল
জীবনীশক্তি সঞ্চারিত হয় । মনে গভীর আত্মপ্রত্যয়, আনন্দ এবং সুদৃঢ় ইচ্ছাশক্তি
সঞ্চারিত হয় । আলাদা করে ওষুধ খাবার দরকার হয় না ।
শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দুর করে
এই জাতীয় সমস্যার মোকাবিলায় সিদ্ধাসন
খুবই কার্যকরী । মেরুদণ্ড সোজা রেখে পা গুটিয়ে বসে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে
হবে । এটি দেখতে অনেকটা পদ্মাসনের মতোই । সিদ্ধাসনে শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়
সেই সঙ্গে ফুসফুসের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায় ।
হজমের সমস্যা দুর করে
হজমের সমস্যা কমাতে পবন মুক্তাসন বা
সুপ্ত বজ্রাসন করা যেতে পারে । পবন মুক্তাসনে চিৎ হয়ে শুয়ে প্রথমে ডান পা ভাঁজ করে
পেটের সঙ্গে লাগাতে হবে । বাঁম পা তখন সোজা থাকবে । এর পরে একই ভাবে বাঁম পা ভাজ
করে পেটে লাগতে হবে । ডান পা তখন সোজা থাকবে ।
হাঁটুর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে
হাঁটুর ব্যথা কমানোর জন্য উত্থানপদাসন
করলে উপকার মিলবে । চেয়ারে বসে পা তোলা ও নামানো অর্থাৎ সিটেড লেগরাইজ বা পেলভিস
ব্রিজ (চিৎ হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করে উপরের দিকে তোলাকে পেলভিস ব্রিজ বলা হয়) করা
যেতে পারে । এতে থাইয়ের পেশি সঙ্কুচিত বা প্রসারিত হয় ।
কোমরের যন্ত্রণা কমায়
কোমরের যন্ত্রণা কমাতে ভুজঙ্গাসনও করা
যেতে পারে । উপুড় হয়ে শুয়ে একটা পা উপরে তুলে একপদ সলভাসন বা পবন মুক্তাসন করলেও
ভাল ফল পাওয়া যাবে ।
ঘাড়ের যন্ত্রণা নিরাময় করে
ঘাড়ের যন্ত্রণার জন্য আইসোমেট্রিক
প্রেসার অভ্যাস করলে ফল মিলবে । দু’হাত মাথার পিছনে নিয়ে মাথাকে হাত দিয়ে ঘাড় সোজা
করে চাপ দিতে হবে । এ ভাবে মাথাকে চার দিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চাপ দিতে হবে । চিৎ হয়ে
শুয়ে (ভুজঙ্গাসন) থেকে চিবুকে হাত দিয়ে চাপ দিলেও ঘাড়ের উপর চাপ পড়ে ।
পেট ও নিতম্বের চর্বি কমায়
পেট ও নিতম্বের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে অর্ধকূর্মাসন খুবই কার্যকরী । মাটিতে বজ্রাসনে বসুন । এইবার হাত দুটি সোজা করে মাথার ওপরে তুলে নমস্কারের ভঙ্গিতে জড়ো করুন । পেট ও বুক যেন ঊরুর সঙ্গে লেগে থাকে । এই অবস্থায় মনে মনে কুড়ি পর্যন্ত গুনুন । ধীরে ধীরে সোজা হয়ে বসে শবাসনে বিশ্রাম নিন ।
একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যোগ
ব্যায়াম করার উপকারিতা পেতে হলে এটি নিয়মিত করতে হবে । কিছু দিন করে ছেড়ে দিলে যোগ
ব্যায়াম করার কোনো সুফল পাওয়া যাবে না । বর্তমানে যে যোগ ব্যায়াম করানো হয় সেটি
সম্পূর্ণ বিজ্ঞান ভিত্তিক । আরেকটি কথা যোগ ব্যায়াম এর উপকারিতা নারী-পুরুষ উভয়েই
করতে পারবেন ।
এই রকম আরো স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখা পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।
আরও পড়ুনঃ সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত হাঁটুন | হাঁটার উপকারিতা সমূহ