শরীর দুর্বল থেকে মুক্তির উপায় | শরীর দুর্বল হলে করণীয়

শরীর দুর্বল থেকে মুক্তির উপায় | শরীর দুর্বল হলে করণীয় - মানব শরীর রক্ত মাংসে গড়া । তাই বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন কারনে মানব শরীর দুর্বল হতেই পারে । শরীর দুর্বল হলে বা দুর্বল বোধ করলে, যেমন – শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, ভালো না লাগা, কাজে মন না বসা, শরীর অসার লাগা, অনেক ক্লান্তি বোধ করা, বেশি বেশি ঘুমানো, ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি হতেই পারে । এর জন্য চিন্তার কোনো কারন নেই । আমার কথা শুনে আশ্চর্য্য লাগছে তাই না? হ্যাঁ শরীর কেন দুর্বল সেটা আগে খুজে বের করতে হবে, তাহলেই এর সঠিক সমাধান দেওয়া যাবে ।

আরও পড়ুনঃ মুখের গন্ধ দূর করার উপায় কি | মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি

শরীর দুর্বল থেকে মুক্তির উপায় | শরীর দুর্বল হলে করণীয়

আরও পড়ুনঃ কাঠবাদাম খাওয়ার উপকারিতা কি | কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম কি

আজকে শরীর দুর্বলতা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করবো । আমাদের শরীর কেন দুর্বল হয়, শরীর দুর্বল হওয়ার কারন, কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বর হয়, শরীর দুর্বল হলে কি খাওয়া উচিত, শরীর দুর্বল হলে করণীয় কি? এসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে আজকের এই ব্লগ পোস্টে । তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক ----

শরীর দুর্বল হওয়ার কারণ

প্রথমে আমাদের জানতে হবে শরীর কি কারনে দুর্বল হয় এবং এর পেছনের কারন কি? শরীর দুর্বল হওয়া পেছনে অনেক কারন থাকে । আমাদের দেশের ভৌগলিক কারনবসত সাধারণত মানুষের শরীর যে সব কারণে দুর্বল হয়ে থাকে সে কারন গুলি হচ্ছে – আমিষের অভাব, সঠিক ভিটামিনের অভাব, রক্ত স্বল্পতা, ডায়াবেটিস, ক্রনিক পাতলা পায়খানা, কৃমি, ক্রনিক কিডনি রোগ, ক্রনিক লিভার রোগ, থাইরয়েড রোগ, ক্যান্সার, হার্টফেইলিউর ইত্যাদি ।

শরীর দুর্বল হলে কি করা উচিত?

শরীর দুর্বল বোধ করলে প্রথমে এই দুর্বলতার সঠিক কারন খুজে বের করতে হবে । আপনি যদি না বুঝতে পারেন তাহলে এক জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরনাপন্য হওয়া উচিত । তিনি যাবতীয় পরিক্ষা-নিরিক্ষার পর আপনাকে সঠিক পারমর্শ দিতে পারবে । আর আপনি যদি বুঝতে পারেন যে কি কারনে আপনা শরীর দুর্বল হচ্ছে, তাহলে সে মোতাবেক আপনি নিজেই পদক্ষেপ নিন, তাহলে এই দুর্বলতা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন ।

শরীর দুর্বল হলে কি খাওয়া উচিত?

মানুষের খ্যাদ্যাভ্যাসের সাথে শারীরিক সুস্থতা এবং সবলতার আছে নিবিড় সম্পর্ক । শরীরকে সুস্থ এবং সবল রাখতে সঠিক খাবারের কোনো প্রকার বিকল্প নেই । আর সে কারনে লক্ষ্য রাখতে হবে প্রতিদিনের খাবার যেন স্বাস্থ্যকর হয় । বিভিন্ন গবেষনায় দেখা যায় প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় দুধ, ডিম, তাজা শাক-সবজি, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার রাখলে ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করলে শারীরিক দুর্বলতা দুর হয় । 

শারীরিক অবস্থা বুঝে বাড়তি খাবারও খেতে হবে, যেমন – মধু, গরুর মাংস, কফি, কলা, দুধ, ডিম, চকলেট, ভিটামিন সি জাতীয় খাবার, গরু-ছাগলের কলিজা, বিভিন্ন দেশীয় ফল ইত্যাদি খাওয়া উচিত ।

শরীর দুর্বল হলে কি ভিটামিন খেতে হবে?

আজকাল অনেক মানুষকে দেখা যায় যে তারা ভিটামিনের উপর দুর্বল । ডাক্তারের কাছে গিয়েও অনুরোধ করেন ভিটামিন পেসক্রিইব করে দেওয়ার জন্য । শরীরে ভিটামিনের যেমন দরকার আছে তেমনি অতিরিক্ত ভিটামিন শরীরের জন্য ক্ষতিকর । শরীর দুর্বল হলেই যে ভিটামিন খেতে হবে এমন কোনো কারন নাই । কৌটার ভিটামিন গুলো দির্ঘ্যদিন খেলে ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াতে পারে ।

সুস্থ্য থাকতে চাই সুষম খাদ্যাভ্যাস । তাই প্রতিনিয়ত সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা অনেক বেশি জরুরি । সুষম খাবার, পুষ্টি ও খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করতে পারলেই ভিটামিন বা এ জাতীয় পুষ্টি উপাদান ওষুধ হিসেবে খাওয়ার কোনো প্রয়োজনই পড়ে না ।

শারীরিক দুর্বলতা দূর করার ওষুধ

আমি আগেই লিখেছি শারীরিক দুর্বলতার জন্য ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন নাই । আর একান্তই যদি খেতে হয় তাহলে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ তিনি যদি মনে করেন তাহলে দুর্বলতার জন্য ঔষধ লিখে দিবেন । সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন এটাই আপনার জন্য মঙ্গল ।

জ্বরে শরীর দুর্বল হলে করণীয়

জ্বর হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে । তাই এ সময় প্রচুর তরল খাবার গ্রহন করা উচিত । প্রতিদিন বেশী করে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে । বিশেষ করে ডাবের পানি খেতে পারেন । শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে এটি খুব ভালো কাজ করে ।

জ্বরের পরে বাদাম, কলা, আঙ্গুর বা এই জাতীয় ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন । এই জাতীয় ফল তাৎক্ষনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে । প্রতিদিন এই সব খাবার একটু একটু খাওয়ার অভ্যাস করুন ।

প্রতিদিন সকালে ৮-৯ টার মধ্যে সূর্যের আলো যাওয়ার চেষ্টা করুন । সূর্যের এই আলো মানব শরীরে ভিটামিন ডি পৌঁছায় যা হাড়কে শক্তিশালি করার পাশাপাশি শারীরিক দুর্বলতা কাটাতেও সহায়তা করে ।

পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করুন । প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করুন । পর্যাপ্ত ঘুমের ফলে দেহে এবং মস্তিস্কে কোষ নতুন করে শক্তি যোগায় ।

শরীর দুর্বল হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়

শরীর দুর্বল হলে শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, ভালো না লাগা, কাজে মন না বসা, শরীর অসার লাগা, অনেক ক্লান্তি বোধ করা, বেশি বেশি ঘুমানো, ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি হতে পারে ।

গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বল হলে করণীয়

অধিকাংশ নারী গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বলতার সমস্যায় ভুগে থাকেন । গর্ভাবস্থায় নারী যদি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করেন তাহলে গর্ভের সন্তানও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে । তাই এই দুর্বলতা কাটাতে দরকাকারি খাবার খাওয়া জরুরী ।

গর্ভাবস্থার প্রথম থেকেই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান, যেমন – কচুশাক, পেয়ারা, কাঁচ কলা, মটর ডাল, শিম, কলিজা, মাংস, বাধা কপি, খোলস সহ মাছ, যেমন – চিংড়ি । গর্ভবতী মায়েরা এই সময় মধু খাওয়া খেতে পারেন । দুর্বলতা কাটাতে মধু বেশ কার্যকরি ।

সহবাসের পর দুর্বলতা

যখন দুর্বলতা অনুভব করবেন বা দৃর্বল হয়ে পড়বেন তখন এনার্জি সমৃদ্ধ কিছু খাবার খান যা শরীরে শক্তি ফিরিয়ে দেবে । যেমন – বাদাম, খেজুর এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে পারেন । সব সময় এই সব খাবারের মাধ্যমে শারীরিক দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠা সম্ভব ।

পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানোর চেষ্টা করুন । প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করুন । পর্যাপ্ত ঘুমের ফলে দেহে এবং মস্তিস্কে কোষ নতুন করে শক্তি যোগায় । যখন ঘুম কম হয় তখন মাথা ঘোরানো এবং দুর্বলতার পরিমাণ বেড়ে যায় । তাই পর্যাপ্ত ঘুমই দূর করতে পারবে দুর্বলতা ।

ব্যায়াম, মেডিটেশন বা ইয়োগা করতে পারেন এগুলো আপনার শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে সহায়তা করবে । এগুলো শরীর ফিট রাখার পাশাপাশি আপনার মেটাবলিজম বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে । অনেক সময় মানসিক চাপের কারণে দুর্বলতা অনুভব হয় । তাই সবসময় চেষ্টা করুন হাসিখুশি থাকাতে ।

শারীরিক দুর্বলতায় খাবার

আগেই বলেছি কিছু খাবার শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে সহায়তা করে । সে রকম কিছু খাবার সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো --

ডিম: শরীরিক দুর্বলতা দুর করতে ডিম একটি অসাধারণ খাবার । প্রতিদিন অন্তত একটি ডিম খাওয়ার চেষ্টা করুন ।

গরুর মাংস: শারীরিক দুর্বলতা দুর করতে গরুর মাংস খেতে পারেন । গরুর মাংমে আছে প্রচুর পরিমান জিংক । খাবারের জন্য কম ফ্যাট যুক্ত মাংস বেছে নিবেন । এক্ষেত্রে গরুর রানের মাংস নিতে পারেন ।

দুধ: শারীরিক দুর্বলতা এড়াতে দুধ খেতে পারেন । দুধে প্রচুর পরিমান প্রাণিজ ফ্যাট থাকে যা শারীরিক শক্তির উন্নতি ঘটায় । দুধ, দুধের সর, মাখন ইত্যাদি খেতে পারেন । শারীরিক দুর্বলতা এড়াতে দুধ খুব কার্যকর ।

মধু: যে সকল উপাদান শারীরিক দুর্বলতা দুর করতে সাহায্য করে মধু তার মধ্যে অন্যতম । তাই শারীরিক শক্তি বাড়াতে প্রতি সপ্তাহে ৩-৪ দিন এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ খাঁটি মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন ।

কলা: কলাতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি এবং পটাশিয়াম । ভিটামিন বি ও পটাশিয়াম শারীরিক শক্তি বাড়ায় । আর কলাতে রয়েছে ব্রোমেলিয়ান । যা শরীরের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক । আর কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ শর্করা যা আপনার শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে । ফলে দুর্বল হবে না ।

ভিটামিন সি জাতীয় ফল: স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে প্রতিদিন খাবার তালিকায় অবশ্যই রঙিন ফলমূল রাখুন । আঙ্গুর, কমলা লেবু, তরমুজ ইত্যাদি ফল দৈহিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অনেক উপকারী ।

কফি: কফি দৈহিক শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । তাই দিনে ২-৩ কাপ কফি খেতে পারেন । কফিতে যে ক্যাফেইন থাকে তা শারীরিক শক্তি বাড়ার জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

ডার্ক চকলেট: ডার্ক চকলেটে রয়েছে ফেনিলেথিলামিন (PEA) ও সেরোটোনিন । আমাদের মস্তিষ্কেও রয়েছে এ দুটি পদার্থ । এগুলো মানব দেহে শক্তির মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে ।

রসুন: রসুনকে প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক বলা হয় । তাই শরীরিক শক্তি বাড়াতে নিয়মিত রসুন খেতে পারেন । রসুনে রয়েছে এলিসিন নামের উপাদান যা দৈহিক ইন্দ্রিয়গুলোর রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয় ।

জয়ফল: কফির সাথে এক চিমটি জয়ফল গুড়া নিতে পারেন । গবেষনায় দেখা গেছে জয়ফল খাওয়ার ফলে এক ধরনের দৈহিক শক্তি নিঃসৃত হয় । এর ফলে শরীরের দুর্বলতা কমে ।

হঠাৎ শরীর দুর্বল হলে করণীয়

আপনি হয়তো কোনো প্রকার কাজ করছেন, এখন হঠাৎ শরীর দুর্বলতা অনুভব করছেন এখন আপনার করণীয় কি? হঠাৎ শরীর দুর্বল হলে প্রথম করণীয় কাজ হলো একটু রেস্ট নেওয়া । তারপর কেন দুর্বল বোধ করছেন তার কারন খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন ।

যদি কোনো কারন খুজে না পান তাহলে আধা লিটার পানিতে একটি ওর স্যালাইন খেতে পারেন অথবা আপনার হাতের কাছে কোনো দোকান থেকে ১০ টাকা দামের একটি গ্লুকোজ কিনে এক গ্লাস পানিতে গুলিয়ে খেতে পারেন । হঠাৎ শরীর দুর্বল হলে এটাই করণীয় ।


তবে এসব খেতে গিয়ে লক্ষ্য রাখবেন যেন শরিরের ওজন বৃদ্ধি না পায় । সাথে নিয়মিত শরীরচর্চাও করুন এবং সঠিক পরিমানে পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করুন । আপনি থাকবেন সুস্থ্য এবং হয়ে উঠবেন সবল ।


আরও পড়ুনঃ শারীরিক সুস্থতায় ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা | ব্যায়ামের সুফল

Previous Post Next Post