কচি ডাবের পানির উপকারিতা | ডাবের পানির উপকারিতা

কচি ডাবের পানির উপকারিতা | ডাবের পানির উপকারিতা - ডাবের পানি একটি অসাধারন পানীয় । সব ধরণের পানীয়র থেকে কচি ডাবের পানি অনেক ভালো এবং উপকারি । আপনি যদি গরমে কাহিল হয়ে পড়েন তাহলে কচি ডাবের পানি পান করুন মুহুর্তেই চাঙ্গা অনুভব করবেন ।

ডাবের পানি কম ক্যালরি সমৃদ্ধ, প্রাকৃতিক উপাদানে ভরপুর মিনারেল, পটাশিয়াম সব কিছু মিলিয়ে উৎকৃষ্ট একটি পানীয় এটি । প্রতি ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে ১৬.৭ ক্যালোরি তথা ৭০ কিলো জুল খাদ্যশক্তি রয়েছে, যা এক কথায় অসাধারন ।

আরও পড়ুনঃ শরীর দুর্বল থেকে মুক্তির উপায় | শরীর দুর্বল হলে করণীয়

কচি ডাবের পানির উপকারিতা | ডাবের পানির উপকারিতা

আরও পড়ুনঃ মুখের গন্ধ দূর করার উপায় কি | মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি

বন্ধুরা, আজকের ব্লগ পোস্টে কচি ডাবের পানি উপকারিতা নিয়ে আপনাদের বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করবো । যেমন - ডাবের পানির কিছু উপকারিতা, অপকারিতা ও আরও বিস্তারিত । তবে চলুন এবার জেনে নিই ডাবের পানি সম্পর্কে ।

কচি ডাবের পানির উপকারিতা

ডাবের পানিকে প্রাকৃতিক স্যালাইন বলা হয়ে থাকে । কচি ডাবের পানি নিয়মিত খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় । কচি ডাব বা ডাবের পানিতে যে সকল উপকারিতা রয়েছে, তার মধ্য থেকে কয়েকটি উপকারিতার কথা নিচে বর্ননা করা হলো ---

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: মানুষের শরীরে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো । ডাবের পানিতে উপকারী উপাদানে ভরপুর । তাই ডাবের পানি নিয়মিত পান করলে মানুষের শরীরের ভেতরের শক্তি এতটা বৃদ্ধি পায় যে ক্ষতিকর জীবাণুরা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ক্ষতি করার সুযোগ পায় না ।

হৃদ রোগ নিয়ন্ত্রণ: হৃদ রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে ডাবের পানি । নিয়মিত পান করলে শরীরের বাজে কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে । যার ফলে হার্টের সমস্যাগুলো দূর হয় ।

ডায়রিয়ায় উপকারি: ডায়রিয়া হলে ডাক্তার ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দেন ৷ কারণ ডায়রিয়া বা কলেরা রোগীদের ঘনঘন পাতলা পায়খানা ও বমি হলে দেহে প্রচুর পানি ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি দেখা যায় ৷ ডাবের পানি পান করার মাধ্যমে এই ঘাটতি অনেকাংশেই পূরণ করা সম্ভব ৷

হ্যাংওভার কাটাতে:  সকাল বেলা খালি পেটে ডাবের পানি পান করলে শরীর হাইড্রেট হবে । এর সঙ্গে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখার ফলে আপনি চাঙ্গা হয়ে উঠবেন ।

দাঁতের জন্য উপকারি: ডাবের পানিতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় খনিজ উপাদান । এসব খনিজ লবণ দাঁতের ঔজ্জ্বল্যতা বাড়ায় । দাঁত ও মাড়িকে করে মজবুত । অনেকের দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে এবং মাড়ি কালো হয়ে যায় । ডাবের পানির খনিজ উপাদান এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেবে ।

কচি ডাবের পানির উপকারিতা
কচি ডাবের ছবি

ওজন কমাতে সাহায্য করে: ডাবের পানি লো ক্যালোরির হওয়ায় বেশি পান করলে ওজন বৃদ্ধির কোনো সম্ভবনা নেই । বরং ডাবের পানি ওজন কমাতে সাহায্য করে । ডাবের পানি ওজন স্থিতিশিল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে ।

মাইগ্রেনের ব্যথা কমায়: শরীরে ম্যাগনেসিয়াম কমে গেলে মাইগ্রেনের সমস্যায় পড়তে হয় । ডাবের পানি মাইগ্রেন ও সেইসঙ্গে মাথাব্যথা কমাতেও সাহায্য করে ।

ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে: ডাবের পানিতে থাকে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ডায়াটারি ফাইবার, যা ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় । যার ফলে ডাবের পানি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে ।

প্রাকৃতিক টোনার: প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে ডাবের পানি অন্যতম । পানীয় হিসেবে পান করা ছাড়াও এইপানি সামান্য পরিমাণে মেশাতে পারেন আপনার ফেসপ্যাকেও । ডাবের পানির সাইটোকাইনিন উপাদান ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে বাধা দেয় ।

চুল ভালো রাখে: চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে ডাবের পানি । নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে মাথার থাকা খুশকি ও মাথার ত্বকের শুষ্কতা দূর হয় এবং চুল পড়া বন্ধ হয় । ডাবের পানি রয়েছে সাইটোকিনিস নামের একটি অ্যান্টি - এজিন উপাদান, যা মানব শরীরের উপর বয়সের ছাপ পড়তে বাধা দেয় ।

ডাবের পানির অপকারিতা

১। ডাবের পানি নিয়মিত পান করলে কিডনি রোগ হয় না ৷ আবার কিডনি রোগ হলে ডাবের পানি পান করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ৷ কারণ কিডনি অকার্যকর হলে শরীরের অতিরিক্ত পটাশিয়াম দেহ থেকে বের হয় না ৷ ফলে ডাবের পানির পটাশিয়াম ও দেহের পটাশিয়াম একত্রে কিডনি ও হৃদপিণ্ড দুটোই অকার্যকর করে দেয় ৷ ডাবের পানি কিডনি সমস্যা গ্রস্থ রোগীকে পান করানোর আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত ৷

২। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও ডাবের পানিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম উপাদান রক্তাচাপ বাড়িয়ে দেয় । তাই যাদের রক্তচাপ বেশি তাদের ডাবের পানি প্রতিদিন খাওয়া উচিত নয় । তবে সপ্তাহে দুই একদিন খেতে পারেন ।

গরমে ডাবের পানির উপকারিতা

গরমে অনেকের শরীর প্রায় নিস্তেজ হয়ে আসে । এই গরমের সময় স্বস্তি এনে দিতে পারে ডাবের পানি । ডাবের পানি যেমন উপাদেয় তেমনি স্বাস্থ্যকরও বটে । ডাবের পানির সবথেকে আশ্চর্য গুণ হচ্ছে, এটি দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে । তাছাড়া ডাবের শাঁসে যে ক্যালরি রয়েছে তা মানুষের শরিরের কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না ।

ডাবের পানিতে যে প্রাকৃতিক শর্করা ও মিনারেল উপাদান রয়েছে তা শরীরকে শীতল ও আর্দ্র রাখে । এজন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যোদ্ধাদের স্যালাইনের বিকল্প হিসেবে ডাবের পানি দেয়া হতো । এর ফাইবার, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম কর্মশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে ।

ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম

অন্য পানীয় এর মত ডাবের পানি পান করার নির্দিষ্ট কোনো সময় সীমা নেই। চাইলেই দিন বা রাতে ডাবের পানি পান করা যায় । সকালে খালী পেটে ডাবের পানি পান করতে পারেন । পরিশ্রমের পরে ডাবের পানি পান করুন, এতে আপনার শরীরে পূর্ণ শক্তি ফিরে পাবেন । ঘুমাতে যাওয়ার আগে ডাবের পানি পান করুন এতে আপনার ঘুম ভালো হবে । এছাড়াও আপনার মূত্রনালির প্রবাহ ঠিক রাখবে ।

ডাবের শাসের উপকারিতা

ডাবের পানির মতো ডাবের শাসেও অনেক উপকারিতা রয়েছে । যেমন -ডাবের শাস ওজন কমাতে সাহায্য করে, হজমে সাহায্য করে, ডাবের শাস রক্তের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ডায়াবেটিসের কারণে শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে ।

এছাড়াও এটি অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমায়, শরিরের হাড় শক্ত করে, মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং দাঁত ভালো রাখে । ডাবের শাসের পুষ্টিগুন নিচে দেওয়া হলো ।

কচি ডাবের শাসে রয়েছে ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি৯, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইট্রেড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, পটাশিয়াম, ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি ।

গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় শরীরে যাতে পানির অভাব দেখা না দেয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা খুবই প্রয়োজন । এর জন্য নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা আবশ্যক । এর পাশাপাশি ডাবের পানি গর্ভাকালীন অবস্থায় খুবই উপকারী । বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগন গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।

তবে খেয়াল রাখবেন ডাবের পানি বেশি পান করা ভালো নয় । সে ক্ষেত্রে দিনে দুবার ডাবের পানি পান করাই যথেষ্ট । এছাড়া আপনার যদি গর্ভবস্থা থাকাকালীন ডায়াবেটিস থেকে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে ডাবের পানি কম পান করা উপকারী । তবে এটি পান করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পান করাই শ্রেয় ।

কচি ডাবের পানির উপকারিতা
কচি ডাব ও শাসের ছবি

ডাবের পানি কতক্ষণ রাখা যায়

ডাবের পানি খোলা অবস্থায় ১০-১২ ঘন্টা ভালো থাকে । তবে নিয়মিত ব্যবহারের জন্য ডাবের পানি ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করতে পারেন দুই থেকে তিনদিন ।

ডাবের পানিতে কোন এসিড থাকে

ডাবের পানিতে ল্যারিক অ্যাসিড রয়েছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে । এছাড়া ওজন কমাতেও সহায়তা করে ।

ডাবের পানির পুষ্টি গুন

ডাবের পানি অত্যন্ত সুস্বাদু ও উপকারী একটি পানীয় । বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক এনজাইম ও খনিজ উপাদানে ভরপুর এটি । ১০০ মিলি ডাবের পানিতে আছে ---

  • ১৮ ক্যালরি,
  • কার্বোহাইড্রেট ৪ মিলিগ্রাম,
  • সোডিয়াম ১০৫ মিলিগ্রাম,
  • পটাশিয়াম ২০৫ মিলিগ্রাম,
  • সুগার ২.৬ মিলিগ্রাম,
  • ভিটামিন সি ২.৪ মিলিগ্রাম,
  • ক্যালসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম,
  • আয়রন ০.৩ মিলিগ্রাম ও
  • ম্যাগনেশিয়াম ২৫ মিলিগ্রাম ছাড়াও অন্যান্য উপকারি উপাদান রয়েছে ।

খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা

আপনি যদি ডাবের পানি থেকে অধিক উপকারিতা পেতে চান তাহলে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ডাবের পানি পান করুন । খালি পেটে ডাবের পানি খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায় ।

ডাবের পানিতে লরিক এ্যাসিড নামক এক প্রকার উপাদান থাকে যা মানব শরিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপাক ক্রিয়া বাড়ায় । খালি পেটে ডাবের পানি পান করলে দেহের ওজন কমাতেও সাহায্য করে ।

ত্বকের জন্য ডাবের পানির উপকারিতা

অনেকেই বয়সন্ধিকালে ব্রণের সমস্যায় ভুগে থাকেন । এই সমস্যা থেকে ডাবের পানি মুক্তি দিতে পারে । ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমানের ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-এ রয়েছে । যা মুখের ব্রণ সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি ত্বককে করবে উজ্জ্বল ।

আপনি নিয়মিত মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে ডাবের পানি ব্যাবহার করতে পারেন । তাহলে মুখের ব্রণ সমস্যা তুলনামূলকভাবে কমে আসবে ধীরে ধীরে । ডাবের পানির বিশেষ উপাদানগুলি ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ধ্বংস করতে সাহায্য করে ।


এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইলে “জিনিয়াস বাংলা ব্লগ” এর কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন । আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লেখা পোস্ট করার চেষ্টা করবো ।


আরও পড়ুনঃ কাঠবাদাম খাওয়ার উপকারিতা কি | কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম কি

Previous Post Next Post